বৃহস্পতিবার , ১৭ নভেম্বর ২০২২ | ১৫ই বৈশাখ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
  1. অর্থনীতি
  2. আইন-আদালত
  3. আন্তর্জাতিক
  4. উপ-সম্পাদকীয়
  5. কৃষি ও প্রকৃতি
  6. ক্যাম্পাস
  7. খেলাধুলা
  8. চাকরি
  9. জাতীয়
  10. জীবনযাপন
  11. তথ্যপ্রযুক্তি
  12. দেশগ্রাম
  13. দেশজুড়ে
  14. ধর্ম
  15. নারী ও শিশু

বিশ্ব প্রিম্যাচুরিটি দিবস নবজাতক মৃত্যুর দ্বিতীয় প্রধান কারণ প্রিম্যাচুরিটি

প্রতিবেদক
নিউজ ডেস্ক
নভেম্বর ১৭, ২০২২ ৪:০৬ পূর্বাহ্ণ

সময়ের আগে কম ওজন নিয়ে জন্ম নেওয়া শিশুকেই বলা হয় ‘প্রিম্যাচিউর বেবি’ বা ‘অপরিপক্ব নবজাতক’। সাধারণত একজন নবজাতক মায়ের গর্ভে ৪০ সপ্তাহ বা ২৮০ দিন থাকার পর জন্মগ্রহণ করে। এসময় পর্যন্ত শিশু মায়ের পেটে থাকার পর পৃথিবীতে এসে বেঁচে থাকার মতো পরিপক্বতা ও শক্তি অর্জন করে। কিন্তু মায়ের বিভিন্ন শারীরিক জটিলতায় কখনো কখনো সময়ের আগেই শিশুর জন্ম হয়ে যায়। ৩৭ সপ্তাহ বা ২৫৯ দিন পূর্ণ হওয়ার আগেই জন্ম নেওয়া এসব শিশুকে বলা হয় প্রিম্যাচিউর (অপরিপক্ব) নবজাতক।

বাংলাদেশ ডেমোগ্রাফিক হেলথ সার্ভে ২০১৭-২০১৮ এর তথ্যমতে, জন্মের দুই থেকে ৭ দিন এবং ৮ থেকে ২৮ দিনের মধ্যে ১৮ শতাংশ নবজাতেকর মৃত্যু হয়। প্রতি বছর ৯০ হাজার নবজাতকের মৃত্যু হয়। ঘণ্টায় মারা যায় ১০ থেকে ১১ জন নবজাতক। নবজাতক মৃত্যুর কারণগুলোর মধ্যে ১৯ শতাংশ প্রি-ম্যাচিউর অ্যান্ড লো বার্থ ওয়েট, ১৩ শতাংশ নিউমোনিয়া, ২৩ শতাংশ জন্মের সময় শ্বাসকষ্ট। এছাড়াও বিভিন্ন কারণ রয়েছে।

বিশেষজ্ঞদের মতে, নিউমোনিয়ার পর বিশ্বে নবজাতক-মৃত্যুর বড় একটি কারণ এই প্রিম্যাচিউর বার্থ অর্থাৎ নির্দিষ্ট সময়ের আগেই শিশুর জন্ম। প্রায় ৪৫ শতাংশ নবজাতকের মৃত্যু ঘটে সময়ের আগে জন্ম নেওয়ার কারণে। সারাবিশ্বে প্রতি বছর ১ কোটি ৫০ লাখ নবজাতক ৩৭ সপ্তাহ পূর্ণ হওয়ার আগেই জন্মগ্রহণ করে। অর্থাৎ প্রতি ১০টি শিশুর মধ্যে একটি প্রিম্যাচিউর শিশু জন্মায়। তাদের মধ্যে অনেকেই থাকে স্বল্প ওজনের বা ২ হাজার ৫০০ গ্রামের কম। এসব শিশুর বেঁচে থাকাই বড় চ্যালেঞ্জ। ফলে এ ব্যাপারে সচেতনতা বাড়ানো প্রয়োজন।

এমন পরিস্থিতিতে সারাবিশ্বের মতো বৃহস্পতিবার (১৭ নভেম্বর) দেশেও পালিত হচ্ছে বিশ্ব প্রিম্যাচুরিটি দিবস-২০২২। এবছর দিবসের প্রতিপাদ্য ‘প্যারেন্টস এমব্রেস: এ পাওয়ারফুল থেরাপি’ অর্থাৎ ‘পিতামাতার আলিঙ্গন: একটি শক্তিশালী থেরাপি’।

সময়ের আগে নবজাতক জন্ম নেওয়ার কারণ সম্পর্কে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের শিশু বিভাগের বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক ডা. ইফফাত আরা শামসাদ বলেন, গর্ভাবস্থায় গর্ভবতী মা যেসব জটিলতার ভেতর দিয়ে যান, তারওপর কিছুটা নির্ভর করে প্রি-ম্যাটিচউর নবজাতক জন্ম। আরও বেশকিছু কারণের মধ্যে উল্লেখ্যযোগ্য হলো মায়ের গর্ভকালীন অপ্রতুল পরিচর্যা। যদিও জেলা-উপজেলা পর্যায়ের হাসপাতালগুলোতে সেবা ও করণীয় সম্পর্কে কাজ হচ্ছে, কিন্তু সব মা সেখানে নিয়মিত যান না। ফলে মায়েদের অপুষ্টিতে ভোগা ও বাড়িতে প্রসব বেশি হচ্ছে।

তিনি আরও বলেন, একটি প্রিম্যাচিউর শিশু জন্ম থেকেই শাসকষ্ট, অপরিণত ফুসফুস, রক্তে জীবাণুর সংক্রমণ বা ইনফেকশন, বুকের দুধ হজমে অসুবিধা বা এনইসিসহ নানাবিধ সমস্যায় ভুগে থাকে। ফলে অনেক ক্ষেত্রেই এসব নবজাতকের অকালমৃত্যু হয়।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের (এমএন-সিএএইচ) শাখার লাইন ডিরেক্টর ডা. মো. শামসুল হক জাগো নিউজকে বলেন, নবজাতকের মৃত্যু হ্রাসে বর্তমান সরকার প্রতিশ্রতিবদ্ধ। এজন্য ২০২১ সাল থেকে ২০৩০ সালের মধ্যে নবজাতকের মৃত্যু প্রতি হাজারে ৩০ থেকে ১২ জনে কমিয়ে আনা এবং ২০৩৫ সালের মধ্যে ৫ বছরের কম বয়সীদের মৃত্যু শূন্যের ঘরে নামিয়ে আনার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে। নবজাতক মৃত্যু কমাতে ৫০টি জেলায় ৫১টি সেস্পশাল কেয়ার নিউবর্ন ইউনিট (স্ক্যানু) স্থাপন করা হয়েছে। যেখানে প্রতি বছর এক লাখ নবজাতক সেবা পাচ্ছে। ১৪টি জেলায় স্ক্যানু স্থাপন চলমান রয়েছে। স্ক্যানুতে সেবাদানের জন্য চিকিৎসক, নার্স-মিডওয়াইফদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হচ্ছে। ২৫৩টি ক্যাঙ্গারু মাদার কেয়ার (কেএমসি) সেবা আছে।

গাইনোকলোজিক্যাল সোসাইটি অব বাংলাদেশের (ওজিএসবি) মহাসচিব অধ্যাপক ডা. গুলশান আরা বলেন, গর্ভবর্তী মায়ের মাল্টিপুল প্রেগনেন্সি অর্থাৎ পেটে একাধিক সন্তান থাকলে, অ্যামনিওটিক মেমব্রেন তথা যোনিপথে বা মূত্রনালীতে সংক্রমণ হলে প্রিম্যাচিউর নবজাতকের জন্ম হতে পারে। এছাড়া মায়ের উচ্চরক্তচাপ, ডায়াবেটিস, হার্টের অস্বাভাবিকতা, কিডনির সমস্যা, গর্ভাবস্থায় যথেষ্ট ওজন বেড়ে যাওয়া, অত্যাধিক ওষুধ সেবন বা গর্ভাবস্থায় অ্যালকোহল গ্রহণ করলে প্রিম্যাচিউর নবজাতকের জন্ম হতে পারে।

তিনি বলেন, প্রিম্যাচিউর শিশু অর্থাৎ ২৮ থেকে ৩৭ সপ্তাহ মধ্যে জন্মগ্রহণ নিলে তার ওজন স্বাভাবিকের চেয় কম হয়। শিশুটি স্বাভাবিক শিশুর থেকে ছোট দেখায়। পাতলা চেহারার হয়ে থাকে। পরে বিভিন্ন শারীরিক ও মানসিক সমস্যা দেখা দেয়। এজন্য মায়েদের এন্টিনেটাল বা গর্ভকালীন সেবা, প্রাতিষ্ঠানিক ডেলিভারি ও মায়ের সুষম পুষ্টিসহ সব ধরনের পরিচর্যা বাড়াতে হবে। এ কাজে ব্যক্তি, সমাজ, পরিবার, রাষ্ট্র- সবাইকে সমন্বিতভাবে কাজ করতে হবে।

বিশেষজ্ঞরা আরও জানান, বাংলাদেশ ব্যুারো অব স্ট্যাটিসটিকস এর সর্বশেষ তথ্য (২০১৯) অনুযায়ী দেশে প্রতি হাজারে জীবিত জন্ম নেওয়া নবজাতকের মধ্যে ২৮ জন মারা যাচ্ছে। এই সংখ্যা আরও বেশি ছিল। তবে বাংলাদেশ, ভারতসহ দক্ষিণ এশিয়ার অনেক দেশেই এমন সংখ্যক নবজাতকের মৃত্যু হচ্ছে। এই শিশুদের জন্য কেএমসি বা ক্যাঙ্গারু মাদার কেয়ার একটি আদর্শ উপায়। নবজাতকের মৃত্যুরোধে কেএমসি’র মাধ্যমে বাচ্চাদের শরীরের তাপমাত্রা বজায় থাকে। রোগজীবাণুর আক্রমণ কম হয়, শ্বাস-প্রশ্বাসের উন্নতি হয় এবং দ্রুত ওজন বৃদ্ধি পায়। সর্বোপরি মা-বাবার সঙ্গে শিশুর একটি আত্মিক সম্পর্ক তৈরি হয়। এছাড়া প্রিম্যাচিউর শিশুর পরিচর্যার জন্যে ‘নিওনেটাল ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিটের’ প্রয়োজন হয়। এজন্য শিশুরোগ বিশেষজ্ঞের পরামর্শে নিয়মিত পরীক্ষা করা ও ভ্যাকসিনগুলোতে বিশেষ নজর দিতে হবে।

এদিকে বিশ্ব প্রিম্যাচুরিটি দিবস উপলক্ষে জেলা-উপজেলা পর্যায়ের হাসপাতালগুলোতে স্টেক হোল্ডারদের নিয়ে সচেতনতামূলক আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়েছে। সভায় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ও পরিবার কল্যাণ অধিদপ্তর ছাড়াও বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তারা অনলাইনে যুক্ত হবেন। বাংলাদেশ নিউনেটাল ফোরামের উদ্যোগে জেলা-উপজেলা পর্যায়ে র্যালি, আলোচনা সভাসহ বিভিন্ন সচেতনতামূলক কর্মসূচি পালিত হবে।

সর্বশেষ - সারাদেশ