পিরোজপুরের মঠবাড়িয়ায় জাতীয় পার্টির নেতা শফিকুল ইসলামকে কুপিয়ে পা বিচ্ছিন্ন করে হত্যাচেষ্টার ঘটনায় মোটরসাইকেল চালক বাবুকে গ্রেফতার করা হয়েছে। রোববার (২০ নভেম্বর) রাতে মঠবাড়িয়া থানা পুলিশ উপজেলার তুষখালী বাজার থেকে তাকে গ্রেফতার করে।
গ্রেফতার মঞ্জু ওরফে বাবু (৩৫) মধ্য তুষখালী গ্রামের আ. রাজ্জাক হাওলাদারের ছেলে।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা মঠবাড়িয়া থানার পরিদর্শক (তদন্ত) আবুল কালাম আজাদ বলেন, বাবু এজাহারভুক্ত আসামি না হলেও তদন্তে তার সংশ্লিষ্টতা পাওয়া গেছে। এর আগে মূল আসামি ইয়াসিনকে ঢাকার লালবাগ থানাধীন বেড়িবাঁধ এলাকা থেকে গ্রেফতার করা হয়। তার তথ্য মতে হামলায় ব্যবহৃত ধারালো অস্ত্র পৌর শহরের বহেরা তলা এলাকার খাল থেকে উদ্ধার করা হয়। ইয়াছিন বর্তমানে জেলহাজতে রয়েছে। তিনি তুষখালী গ্রামের মো. হাফেজ খানের ছেলে।
অপরদিকে হামলার দিন গত ২৯ সেপ্টেম্বর দুপুরেই শফিকুল ইসলামকে হত্যাচেষ্টার পরিকল্পনাকারী তুষখালী ইউপি চেয়ারম্যান শাহজাহান হাওলাদারের ভাই তুষখালী বাজারের মুদি দোকানি নাসির হোসেনকে গ্রেফতার করা হয়। নাসির হোসেনও বর্তমানে জেলহাজতে।
আহত শফিকুল ইসলাম তুষখালী গ্রামের আইয়ূব আলী শিকদারের ছেলে ও তুষখালী ইউনিয়ন জাতীয় পার্টির সাধারণ সম্পাদক।
আবুল কালাম আজাদ আরও বলেন, গ্রেফতারকৃত মঞ্জু ওরফে বাবুকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ৫ দিনের রিমান্ড চেয়ে সোমবার (২১ নভেম্বর) বিকালে আদালতে সোপর্দ করা হবে। এ ঘটনায় জড়িত ও পলাতক অন্যান্য আসামিদের গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে।
থানা সূত্রে জানা গেছে, পূর্ব বিরোধের জেরে দুই বছর আগে আড়াই লাখ টাকায় জাতীয় পার্টির নেতা শফিকুল ইসলামকে হত্যার পরিকল্পনা করে তুষখালী ইউপি চেয়ারম্যান শাহজাহান হাওলাদারের ভাই তুষখালী বাজারের মুদি দোকানি নাসির হোসেন। ভাড়াটে কিলার হিসেবে ইয়াছিনের সঙ্গে চুক্তি হয় আড়াই লাখ টাকায়। বিভিন্ন সময় বিকাশের মাধ্যমে চুক্তির টাকা পরিশোধও করা হয়।
শফিকুলকে হত্যার পরিকল্পনা অনুযায়ী ইয়াসিনসহ তার ৫ সহযোগীদের নিয়ে ২৭ সেপ্টেম্বর মঙ্গলবার উপজেলা ঝাউতলার একটি বাসায় একত্রিত হয়। ২৮ সেপ্টেম্বর বাজার থেকে ৯শ টাকায় ৩টি ধারালো দা ক্রয় করে। ২৯ সেপ্টেম্বর সকাল থেকে শফিকুল ইসলামের অবস্থানের তথ্য নাসির হোসেন ইয়াসিনকে মোবাইলের মাধ্যমে অবহিত করে।
স্থানীয় বাসিন্দা মুসা শরীফের সঙ্গে চলমান একটি মামলায় শফিকুল আদালতে হাজিরা দিতে সকালে মোটরসাইকেলযোগে তুষখালী থেকে মঠবাড়িয়ার উদ্দেশ্যে রওনা দেন। মাঝের পুলের কাছে ফরাজি বাড়ির সামনে কালভার্টের উপরে আসামাত্রই একটি মহেন্দ্র শফিকুলের মোটরসাইকেলকে ধাক্কা দেয়। শফিকুল মোটরসাইকেল থেকে পড়ে গিয়ে পেছনের দিকে দৌড় দিলে হামলাকারীরা মাহেন্দ্র থেকে নেমে তাকে ধাওয়া করে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে বাম পা বিচ্ছিন্ন করে।
এ সময় এলোপাতাড়ি কোপানোর কারণে শফিকুলের পেটের ভুঁড়ি বেড়িয়ে যায় এবং শরীরের বিভিন্ন স্থানে মারাত্মক জখম হয়। হামলাকারী ইয়াসিন ও তার সহযোগীরা ৪ কিলোমিটার দূরে বহেরাতলা এলাকার খালে ধারালো অস্ত্রগুলো ফেলে দিয়ে মাহেন্দ্রযোগে পালিয়ে যায়। মাহেন্দ্র চালককে ৫ হাজার ও অপর ৩ সহযোগীকে ১৫ হাজার টাকা প্রদান করে ইয়াসিন।
স্থানীয়রা গুরুতর আহত শফিকুল ইসলামকে উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করলে কর্তব্যরত চিকিৎসক উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে বরিশাল শেবাচিম হাসপাতালে প্রেরণ করেন। সেখানেও তার অবস্থার অবনতি হলে শেবাচিম হাসপাতালের চিকিৎসক ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করেন।
এ ঘটনায় ২৯ সেপ্টেম্বর বিকালে ইউপি চেয়ারম্যান শাহজাহান হাওলাদারের ভাই নাসির হাওলাদারকে আটক করা হয়। পরে নাসিরসহ ৫ জনের বিরুদ্ধে আহত শফিকুলের মা মমতাজ বেগম মামলা করেন।
১ অক্টোবর হামলায় ব্যবহৃত মাহেন্দ্র গাড়িটি ভাণ্ডারিয়া উপজেলার ইকড়ি ইউনিয়নের শিংখালী গ্রাম থেকে পরিত্যক্ত অবস্থায় উদ্ধার করা হয়। তবে চালক পলাতক থাকায় এখন পর্যন্ত তাকে গ্রেফতার করা সম্ভব হয়নি।