দীর্ঘ সাড়ে ৭ বছর পর মঙ্গলবার অনুষ্ঠিত হতে চলেছে লক্ষ্মীপুর জেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলন। সম্মেলনকে ঘিরে উৎসাহ উচ্ছাসের পাশাপাশি শঙ্কা ও উত্তাপে রয়েছে দলীয় নেতা-কর্মীরা। কে হতে চলেছে সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক তা নিয়েই চলছে বেশী আলোচনা। কেন্দ্রীয় নেতারা বিষয়টি খোলাসা না করলেও নেতৃত্ব প্রত্যাশীরা দৌড় ঝাপ শেষে এখন অবস্থান করছেন লক্ষ্মীপুরে। নতুন কমিটি গঠনে শুধু সম্মেলনের আনুষ্ঠানিকতা আর দলীয় প্রধান শেখ হাসিনার দিকে তাকিয়ে আছেন সবাই। এদিকে ত্যাগী ও সাবেক ছাত্র নেতাদের মূল্যায়ন করার প্রত্যাশা ব্যাক্ত করেন তৃণমুল। কমিটিতে নারী নেতৃত্বও বাড়ানোর দাবী উঠেছে বর্তমান সময়ে। পদ ও মনোনয়ন বাণিজ্যের অভিযোগ ইতোমধ্যে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ভাইরাল হওয়ায় শঙ্কা-উত্তাপ বিরাজ করছে জেলার আওয়ামী রাজনীতিতে।
দলীয় সূত্রে জানা যায়, লক্ষ্মীপুর জেলা আওয়ামী লীগের সর্বশেষ সম্মেলন হয় ২০১৫ সালের ৩ মার্চ। ওই সময়ে গোলাম ফারুক পিঙ্কুকে সভাপতি ও অ্যাডভোকেট নুর উদ্দিন চৌধুরী নয়নকে সাধারণ সম্পাদক করে জেলা আওয়ামী লীগের কমিটি ঘোষণা করা হয়। দীর্ঘ কয়েক বছর পর অবশেষে ঐতিহ্যবাহি এ সংগঠনের ত্রি-বার্ষিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হচ্ছে মঙ্গলবার। জেলা স্টেডিয়াম মাঠে অনুষ্ঠিতব্য এ সম্মেলনের সকল প্রস্তুতি ইতোমধ্যে সম্পন্ন করেছে জেলা আওয়ামীলীগ। বর্ধিত সভা ও তৃণমূল প্রস্তুতি সভা করা হয়েছে।
সকাল ১০টায় সম্মেলনের উদ্বোধন করবেন দলের সাধারণ সম্পাদক সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের এমপি। প্রধান অতিথি থাকবেন দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিম এমপি। এছাড়া বিশেষ অতিথি হিসেবে দলটির প্রেসিডিয়াম সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী মোফাজ্জেল হোসেন চৌধুরী মায়া, প্রধান বক্তা হিসেবে যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ এমপি, বিশেষ বক্তা হিসেবে সাংগঠনিক সম্পাদক আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন এমপিসহ কেন্দ্রীয় নেতারা উপস্থিত থাকার কথা রয়েছে।
এদিকে সম্মেলনে লাখো মানুষের সমাগম ঘটানোর টার্গেট নিয়ে সম্মেলন সফল করতে ৭টি উপ-কমিটি গঠন করা হয়েছে। শহরজুড়ে পদ-প্রত্যাশীদের ব্যানার-ফেস্টুন ও বিলবোর্ডে ছেয়ে গেছে। সড়কে সড়কে নির্মাণ করা হয়েছে শতাধিক তোরণ।
এদিকে হঠাৎ করে হাজির পাড়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি মোহাম্মদ সামছুল আলম বাবুলের মন্তব্য ফেসবুকে ভাইরাল হয়েছে। বর্তমান সভাপতির বিরুদ্ধে বিগত ইউপি নির্বাচন গুলোতে শত কোটি টাকার মনোনয়ন বাণিজ্যের অভিযোগ ছড়িয়ে পড়েছে মুঠোফোন থেকে মুঠোফোনে। যে ভিডিওতে বাবুল বলেন, উনি রাজনৈতিক নেতা নয়, উনি আসছেন পয়সা কামাতে, তার পেশায় হলো ব্যবসা করা, তিনি আদম ব্যবসায়ী, কাউকে টাকা ছাড়া মনোনয়ন দেননি, বিগত নির্বাচনে আমার কাছ থেকে ৪০ লাখ টাকা নিয়েছেন, সম্প্রতি অনুষ্ঠিত নির্বাচনে ৬০ লাখ টাকা দাবী করেছেন, আমি দিতে অপরাগতা প্রকাশ করায় মনোনয়ন পায়নি। গোয়েন্দা সংস্থা দিয়ে তদন্ত করে আমার কথাগুলো মিথ্যা প্রমাণিত হলে আমার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেন।
একইভাবে বশিকপুর ইউনিয়নে নৌকার টিকেট পেয়ে পরাজিত হওয়া আওয়ামী লীগ নেতা আবুর কাশেম জেহাদীর কাছ থেকেও শীর্ষ আরেক নেতা ২৬ লাখ টাকা নেয়ার অভিযোগ এখন ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে জেলার ৫টি উপজেলার ৫৮টি ইউনিয়নের প্রায় প্রতিটি ইউনিয়নসহ বিভিন্ন শাখা কমিটি গঠনে পদ ও বিভিন্ন নির্বাচনে মনোনয়ন বাণিজ্য হওয়ার অভিযোগ আছে। প্রতিটি ক্ষেত্রে একাধিক আওয়ামী লীগ নেতাদের কাছ থেকে শীর্ষ নেতারা ১০ লাখ থেকে কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগ উঠেছে। পদ হারানো ও সামাজিক মর্যাদার ভয়ে অনেকেই মুখ খুলছেনা বলে জানান নাম প্রকাশে অনিশ্চুক ভুক্তভোগী বেশ কয়েকজন নেতা।
এমন প্রেক্ষাপটে তৃণমূলের অধিকাংশ নেতা-কর্মী পুরোনো নেতাদের নিয়ে শঙ্কায় রয়েছেন। কর্মী সমর্থকরাও ক্ষোভের উত্তাপ আর চরম অসন্তোষে রয়েছে বলে জানান।
সম্মেলনে শীর্ষ দুই পদে (সভাপতি ও সম্পাদক) অন্তত এক ডজন নেতার নাম আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীদের মুখে শোনা যাচ্ছে। তারা হলেন- সভাপতি পদে জেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি সফিকুল ইসলাম, জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য মো. শাহজান, বিশিষ্ট ব্যবসায়ী এম এ হাসেম, বর্তমান সভাপতি গোলাম ফারুক পিঙ্কু, সাবেক সভাপতি এম আলাউদ্দিন, সাবেক সাধারণ সম্পাদক মিজানুর রহিম। সাধারণ সম্পাদক হিসেবে বর্তমান সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট নুর উদ্দিন চৌধুরী নয়ন এমপি, আমরা ক’জন মুজিব সেনার প্রতিষ্ঠাতা এ এফ জসীম উদ্দিন আহমদ, জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট নুরুল হুদা পাটওয়ারী, জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক জাকির হোসেন ভূঁইয়া আজাদ, পৌর মেয়র মোজাম্মেল হায়দার মাসুম ভুঁইয়া, জেলা আওয়ামী লীগের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক অ্যাডভোকেট রাসেল মাহমুদ মান্না, প্রকৌশলী খোকন পাল, মোজাম্মেল হক মিলনও আলোচনায় আছে।
জানতে চাইলে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট নুর উদ্দিন চৌধুরী নয়ন এমপি বলেন, সম্মেলনকে ঘিরে নেতা-কর্মীদের মাঝে উৎসাহ উদ্দিপনা বিরাজ করছে। প্রবীণ-নবীনের সমন্বয়ে নতুন কমিটি হতে পারে। দলের প্রয়োজনে শীর্ষ পদে যাকেই পদায়িত করা হয় ঐক্যবদ্ধভাবে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জেলার ৪টি আসনে নৌকাকে বিজয়ী করতে সকলে কাজ করবে বলে আমার বিশ্বাস।
এদিকে জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি গোলাম ফারুক পিঙ্কু গণমাধ্যমকে জানান, মনোনয়ন বাণিজ্যের অভিযোগ সঠিক নয়, সামছুুদ্দিন বাবুলের ভাইরাল হওয়া বক্তব্য আগের, তখন ভুল বুঝাবুঝির কারণে হয়েছে, পরে সংবাদ সম্মেলন করে তা তিনি প্রত্যাহার করেছেন। এখন পরিকল্পিতভাবে একটিপক্ষ তা ছড়িয়ে দিয়েছে বলে জানান আওয়ামী লীগের এ নেতা।