যশোরের বেনাপোল মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে সরকারি বই বিক্রির অভিযোগ পাওয়া গেছে।
২০২৩ সালে শিক্ষার্থীদের হাতে সময়মতো নতুন বই পৌঁছাতে পারবে কিনা তা নিয়ে শঙ্কায় আছেন সব শিক্ষকরা। তাই অধিকাংশ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকরা বিদ্যালয়ে যেসব পুরানো বই আছে সেগুলো সংরক্ষণের চেষ্টা করছেন। তবে ব্যতিক্রম ঐতিহ্যবাহী বেনাপোল মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সেখ সিরাজুল ইসলাম।
তিনি বই সংরক্ষণ না করে স্কুল গোডাউনে থাকা লাখ টাকার সরকারি বই রাতের আধারে বিক্রি করে দিয়েছেন। তাকে সহযোগীতা করেছেন স্কুলের দুইজন অস্থায়ী শিক্ষক ও দুইজন কর্মচারী। এর আগেও তিনি এ রকম ঘটনা ঘটিয়েছেন। এছাড়াও ওই প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে শিক্ষক-কর্মচারীসহ অভিভাবক ও ছাত্রছাত্রীদের সঙ্গে দুর্ব্যবহারের অভিযোগ আছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, ৬ নভেম্বর স্কুল ছুটির কিছুক্ষণ পর প্রধান শিক্ষক পুনরায় স্কুলে ফিরে আসেন। এ সময় তার সঙ্গে স্কুলের দুইজন অস্থায়ী শিক্ষক ও দুইজন কর্মচারী ছিল। কিছুক্ষণ পরে একটি বড় পিকআপসহ আরও কিছু লোক স্কুলে আসেন। প্রধান শিক্ষকের নির্দেশে কর্মচারীরা স্কুলের আঙিনার সব লাইট অফ করে দিয়ে গোডাউনে ঢুকে সেখানের সব বই পিকআপে তুলে দেন। যার আনুমানিক মূল্য লাখ টাকার বেশি।
বিষয়টি এতদিন গোপন ছিল। তবে বুধবার (২৩ নভেম্বর) স্কুলের এক শিক্ষক ওই গোডাউনের চাবি চাইলে প্রধান শিক্ষক টালবাহানা শুরু করেন। এক পর্যায়ে উক্ত শিক্ষককে অশ্রাব্য ভাষায় গালাগালি করাসহ মারতে উদ্যত হন। পরে অন্যান্য শিক্ষকরা বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে চাবি নিয়ে গোডাউন খুলে দেখে সেখানে কোনো বই নেই। পরে কর্মচারীরা চাপে পড়ে বই বিক্রির ঘটনাটি অন্যান্য শিক্ষকদের কাছে স্বীকার করেন।
বিদ্যালয়ের এক শিক্ষক নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ওই গোডাউনে ২০২২ সালের নতুন বই ও সংযুক্ত ভোকেশনাল শাখার অনেক বই সংরক্ষিত ছিল। গত বছরও প্রধান শিক্ষক একই ভাবে বই বিক্রি করে দেন। পরে শিক্ষকদের কাছে তিনি ক্ষমা চাইলে, শিক্ষকরা এ ব্যাপারটি চেপে গিয়েছিলেন।
তিনি আরও বলেন, প্রতিবছর প্রধান শিক্ষক প্রয়োজনের চেয়ে বেশি বইয়ের চাহিদা দিয়ে গোপনে বই বিক্রি করেন। এছাড়াও তিনি প্রতিনিয়ত শিক্ষক-কর্মচারীদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করেন।
বিদ্যালয়ের সহকারী প্রধান শিক্ষক আহসানুল কবির তুহিন বলেন, আমি ঘটনার দিন অফিসিয়াল কাজে খুলনা ডিডি অফিসে গিয়েছিলাম। আমি কিছু জানি না। প্রধান শিক্ষকও আমাকে এ বিষয়ে কিছু জানাননি।
বিদ্যালয়ের পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি এনামুল হক মুকুল বলেন, আমি এ বিষয়ে কিছু জানি না। সাংবাদিকদের মাধ্যমে বিষয়টি জেনেছি। তদন্ত করে এ ব্যাপারে সত্যতা পাওয়া গেলে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এ বিষয়ে শার্শা উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার হাফিজুর রহমান চৌধুরী বলেন, বিদ্যালয়ের সরকারি বই বিক্রির কোনো আইন নেই। অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নিবো।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার নারায়ণ চন্দ্র পাল বলেন, একটি স্কুলের প্রধান শিক্ষক এভাবে বই বিক্রি করতে পারেন না। তদন্ত সাপেক্ষে এ ব্যাপারে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এ ব্যাপারে অভিযুক্ত প্রধান শিক্ষক সেখ সিরাজুল ইসলাম বলেন, বইগুলো অনেক পুরাতন তাই এগুলো বিক্রি করেছি। এসব বই বিক্রির টাকা স্কুল ফান্ডে দেওয়া হবে।
কেন রাতের বেলায় বই বিক্রি করলেন ও শিক্ষক-কর্মচারীসহ অভিভাবক ও ছাত্রছাত্রীদের সঙ্গে খারপ ব্যবহারের অভিযোগ সত্য কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি ষড়যন্ত্রের শিকার। একটি মহল আমার বিরুদ্ধে উঠেপড়ে লেগেছে।