অন্য ঢোড়া সাপের সঙ্গে এর পার্থক্য হচ্ছে, এর ঘাড়ের মধ্যে একটি বিশেষ ধরনের দাগ আছে, যা সাধারণ ঢোড়া সাপ বা অন্য ঢোড়া সাপগুলোর মধ্যে নেই। এর আগে ১৯৭৭ সালে ভারত ও নেপালে এই জাতের সাপ দেখা গেছে। বাংলাদেশেও এই জাতের সাপ থাকতে পারে বলে দেশের বন্য প্রাণী বিশেষজ্ঞরা ধারণা করতেন। বিভিন্ন সময়ে এই সাপ দেশে দেখা গেলেও ভালোমতো খেয়াল না করলে এর ঘাড়ের দাগটি আলাদাভাবে বোঝা যায় না।
এ বিষয়ে গবেষক দলের অন্যতম আদনান আজাদ আসিফ প্রথম আলোকে বলেন, সরীসৃপ–জাতীয় প্রাণী নিয়ে গবেষণায় তাঁরা দেশের ১৬টি জেলার নদী ও জলাভূমিতে জরিপ করেছেন। সেখানে এর আগে সাপটি বেশ কয়েকবার দেখা গেছে। কিন্তু তখন একে সাধারণ ঢোড়া সাপ ভেবে এর ছবি সংগ্রহ করেননি। ২০১৯ সালে বন্য প্রাণী-বিষয়ক একটি বইতে বিশেষ দাগটি তাঁদের নজরে আসে। এরপর তা অন্যান্য তথ্য-উপাত্ত মিলিয়ে এবং বিশেষজ্ঞদের দেখানোর পর নিশ্চিত হয়েছেন, এটা বাংলাদেশের নতুন জাতের ওই সাপ।
ডিপ ইকোলজির স্বেচ্ছাসেবকেরা দেড় বছর ধরে দেশে ওই সাপের উপস্থিতি সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য ও উপাত্ত সংগ্রহ করেছেন। দেশে এর আগে ৯৩ প্রজাতির সাপ দেখা গেছে। এর মধ্যে ঢোড়া সাপের ছয়টি প্রজাতি পাওয়া গেছে। এর মধ্যে লাল ঘাড় ঢোড়া ছাড়া অন্য প্রজাতিগুলো যুক্ত হওয়ায় দেশে এখন সাপের প্রজাতি দাঁড়াল ৯৪টিতে।
বাংলাদেশে দেখা যাওয়া, সাপের মধ্যে সবচেয়ে বেশি পাওয়া যায় ঢোড়া সাপ। মাছের পুকুর, বিল, জলাশয়, খাল ও নদীতে এরা সবচেয়ে বেশি থাকে। মূলত ছোট মাছ, ব্যাঙ ও অন্যান্য ছোট প্রাণী খেয়ে এরা বেঁচে থাকে। বিষ না থাকায় সাধারণত দেশের গ্রামাঞ্চলে এই সাপ দেখে মানুষ খুব একটা ভয় পায় না। দেশে দেখা যাওয়া অন্য ঢোড়া সাপগুলোর মধ্যে রয়েছে হিমালয় ঢোড়া সাপ, চেরাপুঞ্জি ঢোড়া সাপ, লাল ঘাড় ঢোড়া সাপ, নকশি ঢোড়া সাপ, ইমি ঢোড়া সাপ ও রঙিলা ঢোড়া সাপ।
এ বিষয়ে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক মনিরুল এইচ খান প্রথম আলোকে বলেন, ‘বাংলাদেশে নতুন প্রজাতির ওই সাপ পাওয়ার বিষয়টি আমি জানতে পেরেছি। ভালোমতো গবেষণা করলে দেশে এ ধরনের আরও অনেক নতুন প্রজাতির সাপ পাওয়া সম্ভব।’ সাপ দেখলে অযথা ভয় না পেয়ে একে পানিতে ছেড়ে দেওয়ার পরামর্শ দেন তিনি।
বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, দেশে জলাভূমি কমে আসায় সাপের সংখ্যাও কমে আসছে। সাপ নিয়ে অহেতুক আতঙ্কের কারণে দেশের যেখানেই সাপ দেখা যায়, সেখানেই স্থানীয় ব্যক্তিরা একে পিটিয়ে মেরে ফেলেন। যে কারণে বাসস্থান কমে আসার পাশাপাশি মানুষের আক্রমণের শিকার হয়েও সাপ কমে আসছে।