বুধবার , ১৪ ডিসেম্বর ২০২২ | ১৪ই বৈশাখ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
  1. অর্থনীতি
  2. আইন-আদালত
  3. আন্তর্জাতিক
  4. উপ-সম্পাদকীয়
  5. কৃষি ও প্রকৃতি
  6. ক্যাম্পাস
  7. খেলাধুলা
  8. চাকরি
  9. জাতীয়
  10. জীবনযাপন
  11. তথ্যপ্রযুক্তি
  12. দেশগ্রাম
  13. দেশজুড়ে
  14. ধর্ম
  15. নারী ও শিশু

বিশ্বকাপ থেকে ছিটকে পড়া দলের পতাকায় ছিন্নমূল শিশুদের স্কুল ড্রেস

প্রতিবেদক
নিউজ ডেস্ক
ডিসেম্বর ১৪, ২০২২ ১১:৩৬ পূর্বাহ্ণ

বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান কিশোর কুমার দাস লাতিন আমেরিকার দেশ পেরুতে থাকেন। তিনি তাঁর ফেসবুকে লিখেছেন, দরিদ্র ঘরের সন্তান হওয়ায় বছর বছর নতুন স্কুল ড্রেস পেতেন না। বড় ভাইয়েরাও স্কুলে পড়তেন। তাঁদের পোশাক ছোট হলে সেটা তিনি পেতেন, আর তাঁর ছোট হলে তা তাঁর ছোট ভাই পেতেন। এভাবেই বড় পুরোনো স্কুল ড্রেস পরে বছরের পর বছর স্কুলে গিয়েছেন। স্কুলের শিক্ষকেরা মলিন হয়ে যাওয়া অপরিচ্ছন্ন পোশাকের জন্য ক্লাসে শাস্তি দিতেন।

ফুটবল বিশ্বকাপের সময়ে বিভিন্ন বাড়ির ছাদে বড় বড় পতাকা উড়তে দেখতেন স্কুলপড়ুয়া কিশোর কুমার দাস। তখন তাঁর মনে হতো, বাড়ির ছাদে ওড়ানো এসব পতাকা তাঁকে দিলেই তো তিনি স্কুল ড্রেস বানাতে পারতেন। ফেসবুকে কিশোর কুমার দাস আরও লিখেছেন, ছোটবেলায় সেই স্বপ্ন তাঁর পূরণ হয়নি। তবে বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশন এই উদ্যোগ নিয়েছে। বিশ্বকাপ শেষে পতাকাগুলো দিলে হাজারো মানুষের কাপড় বানানো সম্ভব বলেও সেখানে উল্লেখ করেছেন কিশোর কুমার দাস।

কিশোর কুমার দাস প্রথম আলোকে বলেন, ‘একই পোশাকে একাধিক রং ব্যবহার করা হচ্ছে না। ব্রাজিলের পতাকার সবুজ ও হলুদ রঙের কাপড় আলাদা করে পোশাক তৈরিতে ব্যবহার করা হচ্ছে। তাই এতে পতাকার যে অবমাননা হচ্ছে, সেটা বলা যায় না। আমরা পতাকার প্রতি পূর্ণ সম্মান দেখিয়েই এ কাজটি করছি।’

বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশনের যোগাযোগ বিভাগের প্রধান সালমান খান ইয়াছিন প্রথম আলোকে বলেন, ‘বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশনের দুটি স্কুলে প্রায় ৩০০ শিশু পড়ছে। অনেকেই নতুন। এখনো ৮৭ জনের স্কুল ড্রেস দেওয়া সম্ভব হয়নি। ওদের স্কুল ড্রেসের জন্য আর্জেন্টিনা, ব্রাজিল ও ইংল্যান্ডের পতাকা থেকে তিনটি রঙের কাপড় লাগছে। অন্য দেশের পতাকা থেকে যে কাপড় পাওয়া যাবে, তা দিয়ে বালিশের কাভার, বিছানার চাদর বানানো হবে। স্কুল ড্রেস বানানোর মজুরি প্রায় ৩০০ টাকা।’

ফেলে দেওয়া পতাকা দিয়ে চলছে স্কুলের পোশাক তৈরি

ফেলে দেওয়া পতাকা দিয়ে চলছে স্কুলের পোশাক তৈরি
ছবি:  বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশনের সৌজন্যে

সালমান খান বলেন, এ আহ্বানে ভালো সাড়া পাচ্ছেন তাঁরা। আর্জেন্টিনা সমর্থকদের কাছ থেকে পতাকা পেতে বিশ্বকাপ শেষ হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। ব্রাজিলের পতাকা পেতে শুরু করেছেন। ইংল্যান্ড ও জার্মানির পতাকাও পাচ্ছেন। ঢাকা ও চট্টগ্রামে স্কুল ড্রেস বানানোর কারিগরেরা ইতিমধ্যে কাজও শুরু করেছেন।

সালমান খান তাঁর ফেসবুকে লিখেছেন, বিশ্বকাপ শেষে পতাকাগুলো বিবর্ণ হবে, পরে আবর্জনা হিসেবে ডাস্টবিনে চলে যাবে। তিনি চট্টগ্রামের সাজেদা নামের এক শিশুর কথা উল্লেখ করেছেন, তার বাবা কুলির কাজ করতেন। পা ভেঙে যাওয়ায় পড়েছেন বিপাকে। পাড়ায় ঝুলতে থাকা ব্রাজিলের পতাকার সবুজ কাপড়টি দিয়েই সাজেদার জন্য স্কুল ড্রেস বানানো হয়েছে। এভাবে অব্যবহৃত পতাকাগুলো দিয়ে পোশাক বানাতে পারলে অনেক বাবা-মা এভাবে চাপমুক্ত হতে পারবেন।

রাজধানীর মিরপুরের দরজি মো. রুহুল আমিন পতাকার কাপড় দিয়ে ছিন্নমূল শিশুদের জন্য স্কুল ড্রেস বানানোর দায়িত্ব পেয়েছেন। তিনি বললেন, আড়াই গজ বহরের একটি পতাকা দিয়ে একটি শার্ট বানানো যায়। পতাকা থেকে কাটাকাটি করে শুধু এক রঙের কাপড়টুকুই নিতে হয়। ফলে শ্রম ও সময় দুটোই লাগে বেশি।

রুহুল আমিন বললেন, পরিশ্রম ও সময় বেশি লাগলেও এই কাজ করতে পেরে তাঁর ভালো লাগছে। কেননা, তিনি যে শার্ট বা ফ্রক বানাচ্ছেন, তা গায়ে দেবে দরিদ্র পরিবারের শিশুরা। এ ধরনের কাজের সুযোগ তো আর সব সময় পাওয়া যায় না।

সর্বশেষ - সারাদেশ