চীনের সঙ্গে সীমানা বিরোধের জেরে সংশ্লিষ্ট সীমান্ত এলাকায় সেনা উপস্থিতি অভূতপূর্বভাবে বাড়িয়েছে ভারত। ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুব্রামানিয়াম(এস) জয়শঙ্কর সোমবার এ তথ্য জানান। অরুণাচল প্রদেশের সীমান্তে দুই দেশের সেনাদের ছোটখাটো এক সংঘর্ষের কয়েক দিন পর ভারতীয় সেনা বৃদ্ধির কথা সামনে এলো।
রাজধানী নয়াদিল্লিতে বহুল প্রচারিত ভারতীয় সংবাদপত্র ইন্ডিয়া টুডে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে চীন সীমান্ত পরিস্থিতিসহ বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন এস জয়শঙ্কর।
অনুষ্ঠানে ভারতীয় পররাষ্ট্রমন্ত্রী জানান, ভারত যেভাবে সেনা মোতায়েন করেছে, তা আগে কখনো করা হয়নি। তিনি বলেন, এটি করা হয়েছে চীনা সেনাদের আগ্রাসন মোকাবেলা করার জন্য। প্রকৃত নিয়ন্ত্রণ রেখা (এলএসি) ‘একতরফাভাবে বদলের’ যেকোনো চেষ্টা প্রতিহত করার জন্য ভারতীয় সেনা মোতায়েন করা হয়েছে।
জয়শঙ্কর বলেন, সম্প্রতি অরুণাচলে চীনের সেনাদের অনুপ্রবেশের চেষ্টার পর ভারতীয় সেনাদের সঙ্গে সংঘর্ষ বাধে।
গত সপ্তাহে ভারতের প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং বলেন, গত ৯ ডিসেম্বর অরুণাচলের তাওয়াং এলাকায় চীনের পিপলস লিবারেশন আর্মির (পিএলএ) সেনারা অনুপ্রবেশের চেষ্টা করে। ভারতীয় সেনাদের প্রতিরোধের মুখে বেইজিংয়ের সেনারা পিছু হটে।
অন্যদিকে চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে বলা হয়, ভারত সীমান্ত পরিস্থিতি ‘সাধারণভাবে স্থিতিশীল’ এবং দুই পক্ষের মধ্যে এ নিয়ে আলোচনা চালু রয়েছে।
এর মধ্যে সোমবার সেনা মোতায়েন নিয়ে এস জয়শঙ্কর নতুন তথ্য দিলেন। এ বিষয়ে বেইজিং তাত্ক্ষণিকভাবে কোনো প্রতিক্রিয়া জানায়নি।
চীনের সঙ্গে ভারতের সীমানা তিন অংশে বিভক্ত। লাদাখ অংশের সীমান্তকে বলা হয় পশ্চিমাঞ্চলীয় বিভাগ। অরুণাচল সীমান্তের অংশটি হচ্ছে পূর্বাঞ্চলীয় বিভাগ। এ ছাড়া এই দুইয়ের মধ্যে তিব্বত সীমান্তবর্তী ভারতের হিমাচল রাজ্য ও উত্তরাখণ্ড রাজ্য নিয়ে গঠিত আরেক সীমান্ত এলাকা।
চীন-ভারত সীমান্তরেখার অনেক জায়গায় সেনারা মুখোমুখি অবস্থানে রয়েছে। এসব জায়গায় মাঝে মাঝে সংঘর্ষ হয়। এর মধ্যে ২০২০ সালের জুন মাসে লাদাখ অঞ্চলের গালওয়ান উপত্যকায় সেনাদের বড় ধরনের মুখোমুখি সংঘর্ষে ২০ জন ভারতীয় এবং চারজন চীনা সেনার মৃত্যু হয়। কোনো কোনো সূত্রে ওই ঘটনায় আরো চীনা সেনার মৃত্যুর কথা বলা হলেও বেইজিং তা নিশ্চিত করেনি।
১৯৪৭ সালে ব্রিটেনের কাছ থেকে ভারতের স্বাধীনতার সময় লাদাখ থেকে অরুণাচল পর্যন্ত চীনের সঙ্গে কোনো আনুষ্ঠানিক সীমান্তরেখা ছিল না। তবে ১৯৫৯ সালে ভারতের প্রতিবেশী অঞ্চল তিব্বতে চীনের প্রত্যক্ষ নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার পর দুই দেশের মধ্যে বিশাল সীমান্ত প্রতিষ্ঠিত হয়। তিব্বত ও ভারতের মধ্যে ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসকদের প্রতিষ্ঠিত ম্যাকমোহন রেখাকে এখনো স্বীকার করে না চীন। সেই মোতাবেক অরুণাচলকে ‘দক্ষিণ তিব্বত’ অভিহিত করে তা নিজের অংশ বলে মনে করে বেইজিং।
ভারত ও চীনের সীমান্ত বিরোধ ১৯৬২ সালে যুদ্ধে রূপ নিয়েছিল। ওই বছর এলএলসি ভেঙে প্রবেশ করে পিএলএ সেনারা এবং অরুণাচলের বিশাল এলাকা দখল করে নেয়। গত ৯ ডিসেম্বর অরুণাচলের তাওয়াং এলাকায় সংঘর্ষ হয়েছিল দুই দেশের মধ্যে, সেটি ১৯৬২ সালেও দখল করেছিল বেইজিং। ওই বছর ২০ অক্টোবর লাদাখেও শুরু হয় দুই দেশের সেনাদের সংঘর্ষ। সংঘাতের এক পর্যায়ে অরুণাচল থেকে পিএলএ সেনারা চলে গেলেও আকসাই চীনে (বৃহত্তর কাশ্মীরের অংশ) এখনো বেইজিংয়ের নিয়ন্ত্রণ রয়েছে।
নয়াদিল্লি দাবি করে, দুই দেশের সীমানা তিন হাজার ৪০০ কিলোমিটারের আশপাশে। অন্যদিকে বেইজিং দাবি করে, এই সীমানা দুই হাজার কিলোমিটারের অল্প কিছু বেশি। সূত্র : বিবিসি