অনেক বড় বোদ্ধা ও বিশেষজ্ঞর ধারনা, শেরে বাংলার মন্থর গতি আর নিচু বাউন্সের খানিক স্পিন সহায়ক পিচে খেলে খেলেই বাংলাদেশের কাঙ্খিত উন্নতি হয়নি। শেরে বাংলায় উইকেট পেতে তেমন কষ্ট করতে হয় না। বলের কারুকাজ কম থাকলেও সাফল্যের দেখা মেলে; কিন্তু ভাল উইকেটে গিয়ে আর তা সম্ভব না।
তখন উইকেট পেতে অনেক কাঠখড় পোড়াতে হয়। একইভাবে শেরে বাংলার স্লথ গতি ও নিচু বাউন্সি পিচে খেলায় ব্যাটারদের স্বচ্ছন্দ ও সাবলিল উইলোবাজির অভ্যাস গড়ে ওঠে না তেমন। তাদেরও ফ্ল্যাট পিচে গিয়ে রকমারি ও বাহারি শটস খেলার অভ্যাস তৈরি হয় না।
বিপিএলেও শেরে বাংলার পিচ সব সময়ই ভাল আকর্ষনীয় ক্রিকেটের জন্য বড় বাঁধা। বল দেরিতে ব্যাটে আসে। নিচে থাকে। যে কারণে হত খুলে বিগ হিট নেয়া যায় না। আর তাই হোম অফ ক্রিকেটে রান ওঠে কম। লো স্কোরিং গেম হয় বেশি।
দীর্ঘদিন পর এবার শেরে বাংলার মরা, নিষ্প্রাণ-নির্জিব পিচে প্রাণের সঞ্চার ঘটেছে। রান খরা কেটে হাই স্কোরিং গেম হচ্ছে। কুয়াশার কারণে প্রথম খেলায় উইকেটে ময়েশ্চার জমে স্লো থাকছে। তাই দুপুরের ম্যাচে প্রথম দু’দিন রান কম উঠেছে; কিন্তু শেষ দু’দিন রোদ থাকায় দিনের খেলায়ও মোটামুটি রান উঠেছে।
আর রাতের ম্যাচে প্রতিদিনই রানের ফলগুধারা। চার ও ছক্কার নহর বইছে। ১৯৪ রানও নিরাপদ থাকছে না। চেজ হয়ে যাচ্ছে। রাতের খেলায় গড়পড়তা স্কোর থাকছে ১৭০ প্লাস। গত ৪ দিনে দুটি সেঞ্চরি, একটি ৮০ প্লাস ইনিংসের দেখা মিলেছে।
এবারের উইকেট দেখে খুব সন্তুষ্ট মাশরফি বিন মর্তুজা। দেশের ক্রিকেটের এ বড় তারা এবার শেরে বাংলার উইকেট দেখে খুব খুশি। তার ভাষায়, বহুদিন পর দারুন উইকেটে এবার খেলা হচ্ছে শেরে বাংলায়। জাতীয় দলের এ সফলতম অধিনায়কের অনুভব, ‘ভাল উইকেট ভাল ব্যাটিং ও বোলিংয়ের পূর্বশর্ত এবং ব্যাটার ও বোলারদের নিজেদের গড়ে তুলতে ভাল উইকেটের বিকল্প নেই।’
গতকাল মঙ্গলবার রাতে ঢাকা ডমিনেটরসকে হারিয়ে সংবাদ সম্মেলনে কথা বলতে এসে সিলেট স্ট্রাইকার্স অধিনায়ক মাশরাফি অনেক কথার ভিড়ে শেরে বাংলার উইকেট নিয়ে কথা বলেন। এক পর্যায়ে মাশরাফি বলে ওঠেন, ‘বিপিএল নিয়ে হাজার কথার মধ্যে আমার কাছে মনে হয়েছে যে উইকেট ভাল।’
মাশরাফি মনে করেন, এই উইকেটে নিয়মিত খেলা হলে ব্যাটার ও বোলাররা উপকৃত হবেন। তাদের পারফরমেন্স উন্নত হবে। মাশরাফি যোগ করেন, ‘উইকেট ভাল হলে সবার জন্য ভাল খেলা সহজ হয়। উইকেট তো শুধু চট্টগ্রামেরটাই ভাল পাওয়া যায়। এবার শেরে বাংলায় যেমন পিচে খেলা হচ্ছে, এরকম উইকেট সচরাচর পাওয়া যায় না; কিন্তু এবার শেষ ৩ দিনে যে উইকেট দেখলাম, দারুন উইকেট। এরকম উইকেট হলে আমাদের টি-টোয়েন্টি প্লেয়ার তৈরি হবে। এটা খুব ভাল লক্ষণ এত সমলোচনা হচ্ছে, এত আলোচনা হচ্ছে; কিন্তু এর মধ্যে ভাল দিক হচ্ছে খেলাটা ঠিক আছে। উইকেট ভাল। ব্যাটসম্যানরা ভাল ব্যাটিং করার সুযোগ পাচ্ছে। ভাল ব্যাটিং করছে।’
শেরে বাংলার এই ব্যাটিং সহায়ক উইকেট বোলারদের মান উন্নত করায়ও ভূমিকা রাখতে পারে- এমন বিশ্বাস মাশরাফির। তাই মুখে এমন কথা, ‘এমন উইকেট কিন্তু আমাদের বোলারদের জন্যও ভাল। কারণ সারা বছর শেরে বাংলার নির্জীব, মন্থর আর কম বাউন্সি পিচে খেলে ২-৩ উইকেট পেয়ে যায় বোলাররা। যা হয় ভাল উইকেটে গিয়ে গিয়ে সমস্যার কারণ। ভাল উইকেটে বল না করতে করতে তাদেরও আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে গিয়ে একটা সমস্যা হয়। সেখানে ভাল ও ফ্ল্যাট উইকেট থাকে। ভাল বলও মার খায়। অনেক শটস খেলে ব্যাটসম্যানরা। তখন ব্যাটারদের আটকানো কঠিন হয়; কিন্তু এমন উইকেট পেলে বোলারদেরও ওই এবিলিটি বাড়বে। তারাও বুঝবে এ উইকেটে বেশি জায়গা দিয়ে ফেললেই বিপদ। তখন নিজের সামর্থ্য বাড়ানোর প্রয়োজনীয়তা অনুভব করবে। এই কম্বিনেশন ভাল উইকেটের। এমন উইকেটে খেলা ইম্প্রুভ হবে। হাজার কথার ভিড়ে আমার কাছে মনে হয়েছে যে, উইকেট ভাল। এবং উইকেট ভালোর কারণে খেলাটা ভাল হচ্ছে।’