সোমবার , ১৬ জানুয়ারি ২০২৩ | ১৪ই বৈশাখ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
  1. অর্থনীতি
  2. আইন-আদালত
  3. আন্তর্জাতিক
  4. উপ-সম্পাদকীয়
  5. কৃষি ও প্রকৃতি
  6. ক্যাম্পাস
  7. খেলাধুলা
  8. চাকরি
  9. জাতীয়
  10. জীবনযাপন
  11. তথ্যপ্রযুক্তি
  12. দেশগ্রাম
  13. দেশজুড়ে
  14. ধর্ম
  15. নারী ও শিশু

কক্সবাজারে ভ্যাটের হাজার কোটি টাকা লোপাট এনবিআর-ডিসিকে তদন্তের নির্দেশ, হাইকোর্টে শুনানি আজ

প্রতিবেদক
নিউজ ডেস্ক
জানুয়ারি ১৬, ২০২৩ ৫:৪৫ পূর্বাহ্ণ

কক্সবাজারে ভ্যাটের হাজার কোটি টাকা লোপাট করার অভিযোগ উঠার পর তা তদন্তের নির্দেশ দিয়েছিলেন হাইকোর্ট। জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) ও কক্সবাজার জেলা প্রশাসককে (ডিসি) এই নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। সেই তদন্ত প্রতিবেদনের বিষয়ে করা রিটের শুনানি রয়েছে আজ সোমবার (১৬ জানুয়ারি)।

বিষয়টি জাগো নিউজকে নিশ্চিত করেছেন রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল একেএম আমিন উদ্দিন মানিক।

অভিযোগ রয়েছে, হোটেল-রেস্টুরেন্টগুলো মাসিক চুক্তি অনুযায়ী ভ্যাট কর্মকর্তাদের ঘুস দিয়ে নামমাত্র ভ্যাট দিয়ে যাচ্ছে। আর এভাবে কক্সবাজার কাস্টমস এক্সাইজ ও ভ্যাট অফিসের কর্মকর্তারা ভ্যাটের হাজার কোটি টাকা লোপাট করছেন।

এই অভিযোগ উঠার পর এ বিষয়ে তদন্ত করে প্রতিবেদন দাখিলের জন্য এনবিআর ও কক্সবাজার জেলা প্রশাসককে নির্দেশ দিয়েছিলেন হাইকোর্ট। একই সঙ্গে দায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণে কর্তৃপক্ষের নিষ্ক্রিয়তা কেন অবৈধ ও বেআইনি ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে চেয়ে রুলও জারি করেন। রুলের বিষয়ে দুদকসহ সংশ্লিষ্টদের জবাব দিতে বলা হয়।

গত বছরের ২১ নভেম্বর হাইকোর্টের বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি খিজির হায়াতের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ এ আদেশ দেন। সেদিন আদালতে রিটের পক্ষে শুনানিতে ছিলেন অ্যাডভোকেট ইসরাত জাহান সান্ত্বনা ও অ্যাডভোকেট মো. শামসুদ্দোহা। আর দুদকের পক্ষে ছিলেন অ্যাডভোকেট মো. খুরশীদ আলম খান। অন্যদিকে রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল একেএম আমিন উদ্দিন মানিক।

এর আগে গত বছরের ১৬ নভেম্বর ‘ভ্যাটের হাজার কোটি টাকা মিলেমিশে লোপাট’ শিরোনামে
জাতীয় দৈনিক একটি প্রতিবেদন প্রকাশ হয়। সেই প্রতিবেদনে কক্সবাজার কাস্টমস এক্সাইজ ও ভ্যাট অফিসের ‘দুর্নীতি’ তুলে ধরা হয়।

এরপর ১৭ নভেম্বর সেই প্রতিবেদন হাইকোর্টের নজরে আনেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী অ্যাডভোকেট ইসরাত জাহান সান্ত্বনা। আদালত বিষয়টি আমলে নিয়ে রাষ্ট্রপক্ষ এবং দুদককে প্রতিবেদনের সত্যতা অনুসন্ধান করতে বলেন।

ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এ কে এম আমিন উদ্দিন মানিক জানান, হাইকোর্ট রাষ্ট্র ও দুদককে খবর নিতে মৌখিক নির্দেশ দিয়েছেন। এ বিষয়ে আগামী ২০ নভেম্বর সংশ্লিষ্টদের আদালতে অগ্রগতি জানাতে হবে। এরই ধারাবাহিকতায় এ রিট আবেদনটি করা হয়। ওই রিটের শুনানি নিয়ে রুল জারিসহ নির্দেশনা দেন আদালত।

দুদক চট্টগ্রাম সমন্বিত জেলা কার্যালয়-২ এর অনুসন্ধানে উঠে এসেছে, কক্সবাজারে অনেক হোটেল-রেস্টুরেন্ট ভ্যাট পরিশোধ করছে না। বেশিরভাগ হোটেলে অতিথিদের এন্ট্রি রেজিস্ট্রার সংরক্ষণ করে না। রুম ভাড়ার তালিকা রাখে না। এছাড়া রেস্টুরেন্টগুলো ভ্যাট ফরমও ব্যবহার করে না। তারা ভ্যাট কর্মকর্তাদের মাসিক রেটে নির্দিষ্ট ভ্যাট পরিশোধ করে থাকে। এক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট ভ্যাট কর্মকর্তা হোটেল-রেস্টুরেন্ট থেকে অবৈধ সুবিধা গ্রহণ করে থাকেন। ভ্যাট ফাঁকি দিতে রাজস্ব কর্মকর্তাদের পরামর্শে বিক্রির একাধিক রেজিস্ট্রার রাখা হয়। একটি ভ্যাট অফিসের জন্য, অন্যটি মালিকপক্ষের জন্য। এতে সরকার বিপুল অঙ্কের রাজস্ব হারাচ্ছে।

এ বিষয়ে দীর্ঘ অনুসন্ধান করতে গিয়ে পিলে চমকানো তথ্য পাওয়া যায়। প্রায় অর্ধশতাধিক হোটেল মালিক ও সংশ্লিষ্টরা স্বীকার করেছেন যে, ভ্যাটের চেয়ে তাদের দ্বিগুণ ঘুস দিতে হয় সংশ্লিষ্ট সংস্থার কর্মকর্তাদের। এর বিনিময়ে দুই থেকে তিনগুণ ভ্যাটের দায়মুক্তি পান তারা। ভ্যাট আদায়ের চেয়ে ঘুস আদায়ে তৎপর থাকার অভিযোগ রয়েছে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে।

কক্সবাজারের পর্যটন শহরের তৃতীয় সারির একটি হোটেল গত বছরের আগস্টে প্রায় লাখ টাকার কাছাকাছি ভ্যাট দিয়েছে। তার বিপরীতে কাস্টমস এক্সাইজ ও ভ্যাট কর্মকর্তাদের ঘুস দিতে হয়েছে দেড় লাখ টাকার বেশি। এরপরও হোটেলটির ২ লাখ টাকার বেশি সাশ্রয় হয়েছে।

হোটেলটির হিসাব রক্ষকের তথ্যমতে, প্রতিবছর ৮ থেকে ১২ লাখ টাকা পর্যন্ত ভ্যাট দেন তারা। তবে এর বিপরীতে ঘুস দিতে হয় ১৫ থেকে ১৮ লাখ টাকা পর্যন্ত। এরপরও তাদের সাশ্রয় হয় দ্বিগুণ টাকা। অর্থাৎ ৩০ লাখ টাকারও বেশি ভ্যাট লোপাটের সুযোগ পাচ্ছে হোটেলটি।

হোটেল ম্যানেজারের দাবি, শুধু এই একটি হোটেল নয়। কক্সবাজার পর্যটন শহরের ৪ শতাধিক হোটেল-মোটেল, কটেজ ছাড়াও রেস্টুরেন্ট, স্বর্ণের দোকান ও বিপণিবিতানগুলোতেও একই পদ্ধতিতে ভ্যাট আদায় করা হয়।

অভিযোগ আছে, শালিক রেস্টুরেন্টে প্রতিমাসে বিক্রি হয় দুই কোটি টাকা। সরকারের নির্ধারিত ১০ শতাংশ ভ্যাট দিলে দিতে হবে সাড়ে ২০ লাখ টাকা। অথচ কাস্টমস কর্মকর্তাদের মোটা অংকের ঘুসের বিনিময়ে মাসে মাত্র ১ থেকে দেড় লাখ টাকা ভ্যাট দেন তারা।

আল গণি হোটেলের থানার সামনে এবং থানা রাস্তার মাথায় দুটি শাখায় প্রতিমাসে বিক্রি হয় ১ কোটি ৮০ লাখ টাকা। তারা সাড়ে ২৬ লাখ টাকা ভ্যাটের পরিবর্তে দেন মাত্র ৫০ হাজার টাকা।

সর্বশেষ - সারাদেশ