গাজীপুর মহানগরের পুবাইল এলাকায় ২০২১ সালের ২৫ সেপ্টেম্বর দুপুরে ছয় বছর বয়সী শিশু সিহাব নিখোঁজ হয়। বিভিন্ন জায়গায় খোঁজাখুঁজি করেও কোনো সন্ধান পায়নি তার পরিবার।
নিখোঁজের পর দিন বাড়ির অদূরে মাজুখান গ্রামের উত্তরপাড়া এলাকা থেকে তার মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য হাসপাতালে পাঠায় পুলিশ। এ ঘটনায় নিহতের নানি নাছিমা বেগম বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা আসামিদের বিরুদ্ধে পুবাইল থানায় মামলা দায়ের করেন।
দীর্ঘ সময় তদন্তের পর পুলিশ শিশু সিহাব হত্যায় জড়িত থাকার অভিযোগে মো. নাসির মিয়া নামে এক যুবককে গ্রেফতার করে পুলিশ।
গ্রেফতার নাসির মিয়া (২৮) নোয়াখালী জেলার কবিরহাট থানার সোনাপুর জমিদারহাট গ্রামের পাকমুন্সীহাট এলাকার মো. কামাল মিয়ার ছেলে। সে গাজীপুর মহানগরের পুবাইল থানার মাজুখানবাগের টেক এলাকার মো. সাঈদ আহমেদের বাড়িতে ভাড়া থাকত।
ভিকটিম সিহাব হোসেন (৬) পুবাইল থানার মাজুখান উত্তরপাড়া এলাকার বাসিন্দা জুয়েলের ছেলে। নাসির এ ঘটনায় নিজেকে জড়িয়ে আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি প্রদান করে।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা গাজীপুর পিবিআইয়ের পরিদর্শক মো. রফিকুল ইসলাম জানান, গাজীপুর মহানগরীর মাজুখান উত্তরপাড়ায় মো. ফারুকের মুরগির দোকানে কর্মচারী হিসেবে কাজ করত নাসির মিয়া। মালিক ফারুক দোকানে সময় দিতেন না। নাসির মিয়া নিজেই মুরগি ও মুরগির খাবার বেচাকেনা করতেন। ফিড খেয়ে ফেলার সময় মুরগি তাড়ানোর জন্য দোকানদার নাসির খেলনা পিস্তল দিয়ে মুরগি লক্ষ্য করে গুলি ছুড়তেন।
পাশের গলির জুয়েলের ছেলে সিহাব মাঝে মধ্যেই তার কাছে আসতো এবং খেলনা পিস্তলের ছোড়া গুলি ভিকটিম সিহাব কুড়িয়ে আনতো। নাসির মাঝে মধ্যে সিহাবকে চিপস্ কিনে দিত। ভিকটিম সিহাব নাসিরকে মুরগি চাচ্চু বলে ডাকত। এভাবে ভিকটিম সিহাবের সঙ্গে নাসিরের সম্পর্ক গড়ে উঠে।
আসামি নাসির একই মহল্লায় ইমনদের বাসায় ভাড়া থাকত। ঘটনার দিন নাসির বাসায় নিজ কক্ষে ল্যাপটপে ব্লু ফিল্ম দেখছিল। দুপুরে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টির সময় ভিকটিম সিহাব নাসিরের রুমে যায়। তখন নাসিরের মাথায় বিকৃত চিন্তা আসে এবং সিহাবকে বলাৎকার করতে চাইলে সে চিৎকার দেয়।
আসামি নাসির মুখ চেপে ধরলে ভিকটিম শিশু সিহাবের দেহ নিথর-নিস্তেজ হয়ে যায়। সিহাবের মৃতদেহ খাটের নিচে রেখে দরজা লাগিয়ে নাসির বাইরে চলে যায়। পরবর্তীতে ভোররাতে ভিকটিম সিহাবের মৃতদেহ সালাম মুন্সীর বাড়ির পাশে ফেলে রাখে। ঘটনার তিন দিন পর নাসির এলাকা ছেড়ে চট্টগ্রাম চলে যায়।
দুই দিন পর চট্টগ্রাম থেকে ফিরে আসে নাসির। এর এক সপ্তাহ পর নাসির ৪০ দিনের জন্য চিল্লায় চলে যায়।
মরদেহ উদ্ধারের পর নিহত সিহাবের দাদি নাছিমা বেগম বাদী হয়ে অজ্ঞাত আসামিদের নামে পুবাইল থানায় মামলা দায়ের করেন। দীর্ঘদিন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তদন্ত শেষে পিবিআই শিশু হত্যার রহস্য উদঘাটন করে।
এ বিষয়ে পিবিআই গাজীপুরের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মাকছুদের রহমান বিপিএম বলেন, আসামি নাসির বিকৃত মানসিকতা সম্পন্ন। ল্যাপটপে নীল ছবি দেখে উত্তেজিত হয়ে ভিকটিম শিশু সিহাবকে বলাৎকারের চেষ্টাকালে পাশবিক নির্যাতন করে হত্যাকাণ্ড ঘটায়।