আবহাওয়া মান বাংলার চিরায়ত সাংস্কৃতির শেকড় যাত্রাপালা। শিল্পীদের একমাত্র আয়ের উৎসও ছিল যাত্রাপালা। কিন্তু ৯০ দশকের পর আকাশ সংস্কৃতির প্রভাব আর রাজনৈতিক অস্থিরতায় অনেকেই মুখ ফিরিয়ে নিয়েছেন যাত্রাপালা থেকে।
গ্রাম বাংলার ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনতে মেহেরপুরে জেলা শিল্পকলা একাডেমীর আয়োজনে ড. শহীদ সামসুজ্জোহা পার্কে শনিবার (৪ ফেব্রুয়ারি) মঞ্চায়িত হয়েছে যাত্রাপালা। ৯ দিনব্যাপী এ যাত্রা উৎসব চলবে ১২ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত।
হৃদয় কাঁপানো অট্টহাসি আর যাত্রা শিল্পীদের মনোমুগ্ধকর অভিনয়ের দেখা মেলা এখন দায়। অথচ আশির দশক পর্যন্ত দর্শকদের মনের খোরাক যুগিয়েছে এ যাত্রাপালা। গভীর রাত থেকে ভোর পর্যন্ত সবাই উপভোগ করতেন যাত্রা। অভিনয় করে সংসার চালাতেন এর সঙ্গে জড়িতরা। কিন্তু কালের বিবর্তন হারিয়ে যেতে বসেছে লোকজ বিনোদনের ধারক যাত্রাপালা। বেকার হয়ে পড়েছেন এর সঙ্গে জড়িত কলাকুশলীরা। যাত্রার হারনো সেই ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনতেই মেহেরপুর জেলা শিল্পকলা একাডেমীর এ আয়োজন।
এদিকে অনেকদিন পর অভিনয় করতে পেরে খুশি যাত্রাশিল্পীরা। সারাদেশে এ আয়োজনের ধারাবাহিকতা চান তারা। আর নতুন প্রজন্মের ছেলেমেয়েরা অভিনয় দেখে আবেগে আপ্লুত।
যাত্রাশিল্পী বাসন্তী খাতুন ও শ্বাসত নিপ্পন জানান, অশ্লীলতার কারণে রুচিশীল দর্শকরা মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে যাত্রাপালা থেকে। কিন্তু সুষ্ঠু ও মনোরম পরিবেশের মধ্যে যাত্রাপালার আয়োজন করতে পারলে আবারও দর্শকরা আকৃষ্ট হবে। এ শিল্পকে ধরে রাখার জন্য যাত্রা শিল্পীদের সুসংগঠিত হওয়া ছাড়াও নিয়মিত যাত্রাপালার আয়োজন করতে হবে।
দর্শক আয়েশা খাতুন ও আফসানা ইয়াসমিন বলেন, অনেক দিন পর অশ্লীলতাবিহীন যাত্রাপালা দেখে অনেক ভালো লাগছে। আগে এ যাত্রাপালা সাধারণ দর্শদের মনের খোরাক যুগিয়েছে। অশ্লীলতা না থাকায় যাত্রাপালা উপভোগ করতে এসেছে হাজারো দর্শক। নিয়মিত এমন আয়োজন করলে দেশের হারানো ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনা সম্ভব।
সাংস্কৃতিক ব্যক্তি হাসানুজ্জামান মালেক বলেন, যাত্রাপালার অতীত ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনতে বছর ভিত্তিক আয়োজন নয়, পাড়া-মহল্লা ও ইউনিয়ন পর্যায়েও এ ধরনের উদ্যোগ নিতে হবে।
মেহেরপুর জেলা প্রশাসক ড. মনসুর আলম খান বলেন, বাংলাদেশের লোকসংগীতের যে ঐতিহ্য সেটি নতুন প্রজন্মের কাছে ছড়িয়ে দিতে যাত্রা উৎসবের আয়োজন করা হয়েছে। আর নিয়মিত যাত্রাপালা আয়োজনে সব ধরনের সহযোগিতা করা হবে।