সীতাকুণ্ডে সীমা অক্সিজেন প্ল্যান্টে ভয়াবহ বিস্ফোরণে ছয়জন নিহতের ঘটনায় কারখানার অভ্যন্তরে উদ্ধার কার্যক্রম সমাপ্ত ঘোষণা করা হয়েছে। রোববার বিকাল সাড়ে ৩টায় চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসকের তদন্ত কমিটি ঘটনাস্থলে এসে এ সমাপ্তির কথা ঘোষণা করেন তদন্ত কমিটির প্রধান অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মো. রাকিব হাসান।
শনিবার দুর্ঘটনার পর উদ্ধার কার্যক্রম শুরু হলে রাতে বিরতি দিয়ে রোববার ভোর ৬টা থেকে আবার উদ্ধার কার্যক্রম শুরু করে কুমিরা ফায়ার সার্ভিসের একটি দল। পরে সকাল ৯টা থেকে আগ্রাবাদ ফায়ার সার্ভিসের আরও একটি দল তাদের সঙ্গে যুক্ত হয়ে দুপুর ১টা পর্যন্ত পুরো কারখানা সার্চ করে। তবে এতে কোনো আহত বা নিহতের সন্ধান পায়নি ফায়ার সার্ভিস সদস্যরা।
ফায়ার সার্ভিস চট্টগ্রামের উপ-সহকারী পরিচালক (ডিএডি) আবদুল হামিদ মিয়া বলেন, বিস্ফোরণে পুরো অক্সিজেন কারখানাটি লণ্ডভণ্ড হয়ে গেছে। এলোমেলো হয়ে পড়ে আছে অক্সিজেন সিলিন্ডার।
ঘটনার পর থেকে মালিক পক্ষের কেউ ঘটনাস্থলে না আসলেও রোববার দুপুর ১২টার সময় ঘটনাস্থলে আসেন অক্সিজেন প্ল্যান্টের ম্যানেজার আবদুল আলিম। তিনি সাংবাদিকদের বলেন, কী কারণে বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে, এখনই কিছু বলা যাচ্ছে না। সাধারণত অক্সিজেন প্ল্যান্টের মূল বয়লারে এভাবে বিস্ফোরণ হয় না। এটি বিস্ফোরিত হওয়াতে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ বেশি হয়েছে। এ প্ল্যান্টটি ২০১৮ সালে চায়না প্রযুক্তিতে স্থাপন করা হয়। গত সপ্তাহেও চায়না বিশেষজ্ঞদের একটি টিম নিয়মিত তদারকির অংশ হিসেবে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে যান। তারা আমাদের প্ল্যান্টের কোনো সমস্যার কথা জানাননি।
সরেজমিন ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায়, উৎসুক জনতা সকাল থেকে ভিড় জমাচ্ছেন। তাদের নিয়ন্ত্রণের জন্য কারখানা ফটকে কাজ করছেন পুলিশ সদস্যরা। কারখানার আশপাশে আরও ৭টি কারখানার অভ্যন্তরে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। এইচ আর গ্রুপের একটি তিনতলা বিল্ডিংয়ে ফাটল দেখা দিয়েছে। কারখানার পশ্চিমাংশের দেয়ালটি হেলে পড়েছে। কারখানার অভ্যন্তরে ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞের চিহ্ন বিদ্যমান। অক্সিজেনের বোতল নিতে আসা ৫টি ট্রাকও দারুণ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
এদিকে সকাল থেকে এ পর্যন্ত কারখানায় কেউ স্বজনদের খোঁজে আসেননি। তাই প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, হতাহত আর কোনো ব্যক্তি ঘটনাস্থলে নেই। এখন পর্যন্ত ছয়জনের মৃতদেহ ও ৩৩ জনকে আহত অবস্থায় উদ্ধার করা হয়েছে। তবে এর মধ্যে তিনজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক বলে জানা গেছে। তারা চমেক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন।
সকালে ঘটনাস্থল পরিদর্শনে আসেন বিস্ফোরক অধিদপ্তরের চট্টগ্রামে প্রধান কর্মকর্তা তোফাজ্জল হোসেন। এ ছাড়াও ঘটনাস্থল পরিদর্শনে আসেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. শাহাদাত হোসেন। পরিদর্শন শেষে শাহাদাত হোসেন বলেন, ঘটনার মূল কারণ এখনো বলা যাচ্ছে না। তদন্তের পরে বিস্তারিত বলা যাবে।
বিকাল সাড়ে ৩টার সময় তদন্ত টিমের প্রধান অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মো. রাকিব হাসানের নেতৃত্বে ছয় সদস্যের একটি দল কারখানার অভ্যন্তরে প্রবেশ করেন। তারা পুরো কারখানা আবারো সার্চ করে আলামত সংগ্রহ ও ক্ষয়ক্ষতির সিজার লিস্ট তৈরি করেন এবং কী কারণে এ বিস্ফোরণ হয়েছে তার কারণ খুঁজে বের করার চেষ্টা করেন।
পরে সাংবাদিকদের সঙ্গে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট রাকিব হাসান বলেন, প্রাথমিক তদন্তে বোতল রিফিল করার কলম থেকে বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে বলে মনে হচ্ছে। অভিজ্ঞরা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করার জন্য বিভিন্ন আলামত সংগ্রহ করেছেন।