শনিবার , ২২ এপ্রিল ২০২৩ | ১৪ই বৈশাখ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
  1. অর্থনীতি
  2. আইন-আদালত
  3. আন্তর্জাতিক
  4. উপ-সম্পাদকীয়
  5. কৃষি ও প্রকৃতি
  6. ক্যাম্পাস
  7. খেলাধুলা
  8. চাকরি
  9. জাতীয়
  10. জীবনযাপন
  11. তথ্যপ্রযুক্তি
  12. দেশগ্রাম
  13. দেশজুড়ে
  14. ধর্ম
  15. নারী ও শিশু

‘ঈদে কারও কিছু দিতে পারিনি, গাড়িভাড়া নিয়ে গ্রামে এসেছি’

প্রতিবেদক
নিউজ ডেস্ক
এপ্রিল ২২, ২০২৩ ৪:০০ অপরাহ্ণ

‘আগে ঢাকায় ঈদ করতাম। এখন দোকানপাট পুড়ে গেছে। সব হারিয়ে নি:স্ব হয়ে গেছি। গ্রামে চলে এসেছি। কারও জন্য কিছুই কিনতে পারিনি। কোনো রকম পথের ভাড়া নিয়ে গ্রামে এসেছি।’ এ কথাগুলো বঙ্গবাজারে অগ্নিকাণ্ডে নিঃস্ব ব্যবসায়ী আব্দুর রহমানের। ঈদের দিন জাগো নিউজকে তিনি এসব কথা বলেন।

স্ত্রী ও প্রতিবন্ধী সন্তান নিয়ে আব্দুর রহমানের সংসার। বঙ্গবাজার কমপ্লেক্স মার্কেটে ফাহিমা গার্মেন্টস নামে দুটি দোকান ছিল তার। ঈদ সামনে রেখে দোকানে প্রায় ৫০ লাখ টাকার মালামাল তুলেছিলেন আব্দুর রহমান। দোকানে ছিল নগদ আড়াই লাখ টাকা। গত ৪ এপ্রিল ভোরে বঙ্গবাজারে লাগা ভয়াবহ আগুনে সব পুড়ে ছাই হয়ে যায়। রুটি-রুজির একমাত্র অবলম্বন হারিয়ে পাগলপ্রায় এ ব্যবসায়ী।

শনিবার (২২ এপ্রিল) দেশে উৎসাহ-উদ্দীপনার মধ্যদিয়ে উদযাপিত হচ্ছে পবিত্র ঈদুল ফিতর। তবে আব্দুর রহমানের পরিবারে ঈদের আনন্দ নেই। ঢাকায় দীর্ঘ দুই যুগের ব্যবসায়ের সব হারিয়ে নিঃস্ব-রিক্ত হয়ে ফিরেছেন লক্ষ্মীপুরের রামগঞ্জের নিজ গ্রামে। সেখানে গিয়ে আত্মীয়-স্বজন, পাড়া-প্রতিবেশীদের সান্তনা পেলেও মন স্থির থাকছে না আব্দুর রহমানের।

বঙ্গবাজারের ব্যবসায়ীদের জন্য সরকার ক্ষতিপূরণের টাকা দিয়েছে। তবে তা পাননি বলে জানান আব্দুর রহমান। মোবাইলে তিনি জাগো নিউজকে বলেন, ‘সরকার ব্যবসায়ীদের যে ২৫ হাজার ৪০০ টাকা করে দিয়েছে, সেখানে আমার নামটা ওঠেনি। আমার আগের গলির অনেক দোকানদার পেয়েছেন। এটা সরকার বিকাশে দিয়েছে। হয়তো ৪০ শতাংশ লোক পেয়েছেন। কিন্তু আমিসহ অনেকেই টাকা পাইনি। সংসার চালানোটাও এখন আমার জন্য কষ্টের।’

ঈদ কেমন কাটছে, জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘যাদের কাছে টাকা পাই, তারাও টাকা দিতে পারেননি। আজ ঈদের দিন। তেমন কিছু রান্নাও হয়নি। টুকটাক যা প্রয়োজন ছিল, তাই খেয়েছি। বন্ধু-বান্ধব, আত্মীয়-স্বজন, পাড়া-প্রতিবেশীরা সবাই এসেছেন। মানসিকভাবে সাপোর্ট (সমর্থন) দিচ্ছেন তারা।’

ব্যবসা শুরু করা প্রসঙ্গে আব্দুর রহমান বলেন, ‘খোলা জায়গায় দোকান খুলি নাই। আমার তো মাল নাই, কিছুই নাই। আমি কী নিয়ে দোকান খুলবো। দুই যুগ ধরে ব্যবসা করেছি। এমন খারাপ সময় আর কখনো আসেনি।’

‘ঈদে কারও কিছু দিতে পারিনি, গাড়িভাড়া নিয়ে গ্রামে এসেছি’

আগামী দিনের পরিকল্পনা সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘সামনের পরিকল্পনা আপাতত ঢাকায় যাবো। কিছু পাওনা টাকা উদ্ধারের চেষ্টা করবো। দোকানে এক বছরের ভাড়া দিয়ে দিয়েছি। সেখানে মালিককে বুঝিয়ে কিছু টাকা যদি পাওয়া যায়, সেই চেষ্টা করবো। সেটা হলে ফুটপাতে হোক কিংবা অন্য কোথাও একটু বসার চেষ্টা করবো। সংসার তো চালাতে হবে।’

আব্দুর রহমান জানান, তিনি রাজধানীর আলু বাজারে বড় বাসা নিয়ে থাকতেন। স্ত্রী ও প্রতিবন্ধী ছেলে নিয়ে তার পরিবার। তাদের সঙ্গেই থাকতেন বাবা, মা, ছোট ভাই ও তার স্ত্রী-সন্তান। এখন তো সব হারিয়ে ফেলেছেন। বড় বাসায় থাকতে পারবেন না। দু-তিন মাস পর ঢাকায় এসে ছোট একটা বাসা নেবেন।

আগুনে ক্ষয়ক্ষতির বিবরণ দিয়ে বঙ্গবাজারের এ ব্যবসায়ী বলেন, ‘সাড়ে ৭টার দিকে জানতে পারি। পৌনে ৮টায় মার্কেটে যাই। আমার দুটি দোকান। এক দোকানে আড়াই লাখ টাকার মতো ক্যাশ ছিল। আইসা কিছুই পাই নাই। সেই টাকাটা পাইলেও চলতে পারতাম। আরেক দোকান ও গোডাউন মিলিয়ে ৫০ লাখ টাকার মতো মালামাল ছিল। সব পুড়ে গেছে। সারা জীবনের স্বপ্ন-শ্রম শেষ। ছোট ভাইটাও আমার সঙ্গে ব্যবসা করতো। সব হারিয়ে সেও আজ নিঃস্ব।’

বঙ্গবাজারে ভবিষ্যতে কী হবে- এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘শুনছি, ওখানে ১০ তলা মার্কেট হবে। কিন্তু আমি তো ভাড়াটিয়া। কবে আমি দোকান পাবো, কবে ব্যবসা শুরু করতে পারবো, মাল ওঠাতে পারবো, সেটা বলতে পারছি না। পজিশন নিতে যে টাকা লাগবে, সেটাও দিতে পারবো কি না, তা তো জানি না।’

সর্বশেষ - সারাদেশ