‘পদ-পদবি চিরস্থায়ী নয়। এগুলো নিয়ে সবসময় মনোবেদনা থাকবেই। কেউ দায়িত্বে আসবে, কেউ বিদায় নেবে, এটাই নিয়ম।’ সংগঠনের নেতৃত্ব নিয়ে দ্বন্দ্বে বা মান-অভিমানে না জড়াতে এভাবে নেতাকর্মীদের আশ্বস্ত করেছেন স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদের (স্বাচিপ) মহাসচিব অধ্যাপক ডা. কামরুল হাসান মিলন।
শনিবার (৬ মে) দুপুরে স্বাচিপ শিশু-মাতৃ স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট (আইসিএমএইচ) শাখা সংবর্ধনা অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। এতে স্বাচিপের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি ও মহাসচিবকে সংবর্ধনা দেওয়া হয়।
আগামী জাতীয় নির্বাচনে স্বাচিপ নেতাকর্মীদের সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়ে ডা. কামরুল হাসান মিলন বলেন, ‘সামনে জাতীয় নির্বাচন। তারা (বিএনপি) নির্বাচনে আসতে চান না। তাদের ভয়, নির্বাচনে তারা হেরে যাবে। অথচ তারা দোহাই দেন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের। তারা বলছেন, আন্দোলনের রূপরেখা দেবেন। আমরা রাজপথের পরীক্ষিত সৈনিক। আমরা কচুরিপানার মতো ভেসে আসিনি। আওয়ামী লীগ কারও রক্তচক্ষুকে ভয় পায় না। স্বাচিপ, ছাত্রলীগ, যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগের নেতাকর্মী আছেন। আমরা বসে থাকবো না।’
সংবর্ধন অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ড. মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন, ঢাকা-৫ আসনের সংসদ সদস্য কাজী মনিরুল ইসলাম মনু, স্বাচিপের কেন্দ্রীয় সভাপতি ডা. জামাল উদ্দিন চৌধুরী।
ডা. মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন বলেন, ‘নির্বাচন আসন্ন, স্বাধীনতাবিরোধী শক্তিও সক্রিয় হয়ে উঠছে। স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদকে (স্বাচিপ) সুসংগঠিত হতে হবে। দেশের ধারাবাহিক উন্নয়ন অগ্রযাত্রাকে অব্যাহত রাখতে শেখ হাসিনার সরকারকে আরেকবার নির্বাচিত করতে হবে। বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা বিনির্মাণের লক্ষ্যে পৌঁছানোর জন্য স্বাচিপের প্রতিটি ইউনিটকে নিরলসভাবে কাজ করতে হবে।’
তিনি বলেন, ‘নির্বাচনের আগেই দেশের প্রতিটি ইউনিটে যোগ্যদের নিয়ে কমিটি গঠন করা প্রয়োজন। এক্ষেত্রে কোনো ‘মাই ম্যান’ খুঁজলে হবে না। প্রতিটি জেলায় গিয়ে সবার সঙ্গে আলোচনা করে যোগ্যদের নিয়ে কমিটি করতে হবে।’
ঢাকা-ে৫ আসনের সংসদ সদস্য কাজী মনিরুল ইসলাম মনু বলেন, ‘চিকিৎসক-নার্সদের ভালো আচরণে রোগী অর্ধেক সুস্থ হয়ে যান। মুমূর্ষু রোগীও নতুন করে বাঁচার প্রেরণা পান। আইসিএমএইচ-এর সেবার মান ও পরিবেশ নিয়ে রোগীদের এখন আর তেমন অভিযোগ নেই। তাই চিকিৎসকদের পদোন্নতিসহ অন্যান্য সুযোগ-সুবিধার বিষয়ে আমরা স্বাস্থ্যমন্ত্রীর সঙ্গে অবশ্যাই আলোচনা করে সমাধান করবো।’
স্বাচিপের কেন্দ্রীয় সভাপতি ডা. জামাল উদ্দিন চৌধুরী বলেন, ‘আমাদের মধ্যে অনেক বিভ্রান্তি কাজ করে। সময় এসেছে জাতির সামনে সত্য তুলে ধরার। বিশ্বে এখন বাংলাদেশ রোল মডেল। আপনারা জানেন শেখ হাসিনা চিকিৎসাসেবায় কী উন্নয়ন করেছে। শেখ হাসিনা ১৯৯৬ সালে প্রথমবার ক্ষমতায় এসে চিকিৎসকদের ক্যাডারভুক্ত করেছিলেন।’
স্বাচিপের কেন্দ্রীয় মহাসচিব ডা. কামরুল হাসান মিলন বলেন, ‘বলা হয়ে থাকে, আল্লাহ যাকে যোগ্য মনে করেন এবং পছন্দ করেন তাকেই তিনি ক্ষমতা দান করেন। আমি বিশ্বাস করি, আল্লাহ নিজ হাতেই তাকে (শেখ হাসিনা) বারবার ক্ষমতায় বসাচ্ছেন। তিনি মানুষের কথা ভাবেন, স্বাস্থ্যসেবা নিয়ে চিন্তা করেন। চিকিৎসক হিসেবে আমাদের প্রধানমন্ত্রীর কাছে কিছুই দাবি করতে হয় না। যে কোনো সমস্যা তার কানে পৌঁছালেই তিনি সেটা সমাধান করে দেন। শিশু-মাতৃ স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের চিকিৎসকদের পদোন্নতি নিয়ে ক্ষোভ আছে। আমরা সচিবের সঙ্গে কথা বলবো। আশা করি, এ সমস্যার সুরাহা হয়ে যাবে।’
তিনি আরও বলেন, শিশু-মাতৃ স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট ২০০ বেডের একটি হাসপাতাল। এখানে অনেক অর্জন আছে। আমাদের শিশু-মাতৃমৃত্যু কম। নিশ্চয়ই এ হাসপাতালের ভূমিকা রয়েছে।
স্বাচিপের আইসিএমএইচ শাখার মভাপতি অধ্যাপক ডা. এম এ মান্নানের সভাপতিত্বে সভায় আরও বক্তব্য রাখেন সাবেক স্বাচিপ নেতা ডা. শফিকুর রহমান ও আইসিএমএইচ স্বাচিপ সাধারণ সম্পাদক ডা. নাজমুল হোসেন প্রমুখ।