সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির নির্বাচন নিয়ে গত দুই মাস ধরে উত্তপ্ত দেশের সর্বোচ্চ আদালত প্রাঙ্গণ। গত ১৫ ও ১৬ মার্চ হট্টগোলের মধ্যে সমিতির নির্বাচন হয়। এতে সবকটি পদে জয়ী হন আওয়ামীপন্থি আইনজীবীরা। এ ভোট বর্জন করেন বিএনপিপন্থিরা। সুপ্রিম কোর্ট বারের নির্বাচনে ‘ভোট ডাকাতি’ হয়েছে- এমন অভিযোগ তুলে তারা ধারাবাহিক আন্দোলন করে যাচ্ছেন। এরই ধারাবাহিকতায় গত ১৬ মে দুপুরে সুপ্রিম কোর্ট বার সম্পাদকের কক্ষে ভাঙচুর চালানো হয়। এসময় দুপক্ষের ‘হাতাহাতি’র ঘটনাও ঘটে।
ঘটনার দিন রাতেই বিএনপিপন্থি আইনজীবীদের আসামি করে মামলা করেন সুপ্রিম কোর্ট বারের সহকারী সুপারিন্টেডেন্ট মো. রফিকউল্লাহ। রাজধানীর শাহবাগ থানায় করা এ মামলায় ২৫ আইনজীবীর নাম উল্লেখ করে আরও ১৫০ জনকে অজ্ঞাতনামা আসামি করা হয়। তারা সবাই বিএনপিপন্থি বলে পরিচিয়ত। এ মামলার এজাহারে বিএনপিপন্থি আইনজীবীদের বিরুদ্ধে ভাঙচুর, নারী আইনজীবীদের যৌন হয়রানি, এক লাখ টাকা দামের স্বর্ণের চেইন, নগদ ৫০ হাজার টাকা এবং ১৫ হাজার টাকার কেসিও ঘড়ি চুরির অভিযোগ করেছেন বাদী।
মামলায় আসামি যারা
বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব ও আইনজীবী সমিতির সাবেক সম্পাদক ব্যারিস্টার এ এম মাহবুব উদ্দিন খোকন, বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির আইনবিষয়ক সম্পাদক ব্যারিস্টার কায়সার কামাল, সমিতির সাবেক সম্পাদক ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল, জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের সুপ্রিম কোর্ট ইউনিটের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট গাজী মো. কামরুল ইসলাম সজল, বারের এডহক কমিটির আহ্বায়ক মো. মহসিন রশিদ, এডহক কমিটির সদস্যসচিব অ্যাডভোকেট শাহ আহমেদ বাদল, সংবিধান সংরক্ষণ কমিটির সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট সৈয়দ মামুন মাহবুব।
অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ আলী, অ্যাডভোকেট কাজী মোস্তাফিজুর রহমান আহাদ, অ্যাডভোকেট মো. ঈশা, অ্যাডভোকেট নূরে আলম সিদ্দিকী সোহাগ, অ্যাডভোকেট মো. কাইয়ুম, অ্যাডভোকেট মো. সাগর হোসেন, অ্যাডভোকেট মো. রেজাউল করিম রেজা, অ্যাডভোকেট মো. উজ্জল হোসেন, অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ ওসমান চৌধুরী, অ্যাডভোকেট মাহবুবুর রহমান খান, অ্যাডভোকেট মাহফুজ বিন ইউসুফ, অ্যাডভোকেট মো. রবিউল আলম সৈকত, অ্যাডভোকেট নজরুল ইসলাম ছোটন, ব্যারিস্টার রেদোয়ান আহমেদ রানজিব, অ্যাডভোকেট মো. মাহমুদ হাসান, অ্যাডভোকেট মো. কামাল হোসেন, অ্যাডভোকেট সাকিবুজ্জামান, অ্যাডভোকেট মো. আনিসুর রহমান (রাহান) ও আব্দুল কাইয়ুম।
তবে মামলার ৬নং আসামি অ্যাডভোকেট মহসিন রশিদ ঘটনার দিন সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গণে ছিলেন না বলে দাবি করেছেন। এছাড়া ২৫নং আসামি আনিসুর রহমান আহাদ গত ১০ মে থেকে ভারতে অবস্থান করছেন। ফেসবুক লাইভ করে তিনি এ তথ্য জানিয়েছেন।
যা বলা হয়েছে এজাহারে
মামলার এজাহারে বাদী উল্লেখ করেছেন, আসামিরা বিএনপি-জামায়াতের আইনজীবী নামে সন্ত্রাসী বাহিনীর ক্যাডার। তাদের দলীয় এজেন্ডা বাস্তবায়ন করতে ১-৮নং আসামি গত ১৬ মে আনুমানিক ১টা ১৫ মিনিটে রাষ্ট্রীয় শান্তি-শৃঙ্খলা বিনষ্ট করতে পূর্বনির্ধারিত বঙ্গবন্ধু আওয়ামী আইনজীবী পরিষদের শান্তি সমাবেশ ভণ্ডুল ও শান্তি সমাবেশে অংশ নেওয়া নজরুল ইসলাম প্রামাণিককে হত্যার পরিকল্পনা করতে আসামি গাজী কামরুল ইসলাম সজল সুপ্রিম কোর্ট বার মূল ভবনের নিচতলায় গোপন বৈঠকে মিলিত হয়।
ষড়যন্ত্র বাস্তবায়নের উদ্দেশ্যে ১৬ মে দুপুর ১টা ১৫ মিনিটে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সম্পাদক ও সভাপতির কক্ষের সামনে বঙ্গবন্ধু আওয়ামী আইনজীবী পরিষদের শান্তি সমাবেশ চলাকালে পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী ১-৮নং আসামির নেতৃত্বে ও প্ররোচনায় ৯-২৫নং আসামিসহ আরও অজ্ঞাতনামা ১০০-১৫০ জন আসামি দেশীয় অস্ত্রে সজ্জিত হয়ে শান্তিপূর্ণ সমাবেশের ওপর হামলা চালায়।
এ সময় তারা বঙ্গবন্ধু আওয়ামী আইনজীবী পরিষদের নেতাকর্মীদের এলোপাতাড়ি মারধর শুরু করে। মারধরের একপর্যায়ে ৯-১৫নং আসামিরা বার সম্পাদকের কক্ষের ফটক থেকে পূর্বপরিকল্পনার অংশ হিসেবে অ্যাডভোকেট নজরুল ইসলাম প্রামাণিককে টেনেহিঁচড়ে দেশীয় অস্ত্র দিয়ে মারতে মারতে ভবনের ১নং হলরুমে নিয়ে যায়। ১নং হলরুমে নিয়ে ৯নং আসামি অ্যাডভোকেট কাজী মোস্তাফিজুর রহমান আহাদ তার ডান পা দিয়ে প্রাণনাশের উদ্দেশ্যে অ্যাডভোকেট নজরুল ইসলাম প্রামাণিকের তলপেটে লাথি মারে।
এতে তিনি জোরে চিৎকার করে ও মেঝেতে লুটিয়ে পড়েন। তখন নজরুল ইসলাম প্রামাণিকের চোখ বিনষ্ট করার জন্য লোহার রড দিয়ে উপর্যুপরি আঘাত করে আসামিরা। এতে তার ডান চোখ মারাত্মকভাবে আঘাতপ্রাপ্ত হয়। এ সময় তার পকেটে রক্ষিত নগদ ৫০ হাজার টাকা, হাতে থাকা কেসিও ঘড়ি, যার দাম আনুমানিক ১৫ হাজার টাকা, গলায় থাকা এক ভরি ওজনের স্বর্ণের চেইন, যার মূল্য আনুমানিক এক লাখ টাকা চুরি করে নেয়।
এসময় ১০নং আসামি নজরুল ইসলাম প্রামাণিকের বুকের ওপর উঠে লাফাতে থাকেন। ১১নং আসামি তার হাতে থাকা লোহার রড দিয়ে নজরুল ইসলাম প্রামাণিককে প্রাণনাশের উদ্দেশ্যে মাথায় আঘাত করতে গেলে সেই আঘাত তার ডান হাতের কনুইয়ে লাগে। এতে তিনি গুরুতর রক্তাক্ত জখম হয়। ১০নং আসামি নজরুল ইসলাম প্রামাণিকের বুকের ওপর লাফানোকালে ১২নং আসামি উল্লাসে মেতে ওঠে।
এরপর ১০নং আসামিকে সরিয়ে তিনি নজরুলের বুকের ওপর উঠে লাফাতে থাকে। এসময় বঙ্গবন্ধু আওয়ামী আইনজীবী পরিষদের নেতারা ১নং হলরুমের ঘটনাস্থলে গিয়ে তাকে উদ্ধার করে। নজরুল ইসলাম প্রামাণিককে উদ্ধারের পর সব আসামিরা আরও বেশি ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে এবং সম্পাদকের কক্ষ ভাঙচুরের উদ্দেশ্যে সেদিকে যেতে থাকে। একপর্যায়ে ১৪নং আসামি সম্পাদকের কক্ষের পশ্চিম পাশের জানালার কাচ তার হাতে থাকা লোহার রড দিয়ে ভাঙচু করে।
১৫নং আসামিও সেখানে থাকা কাঠের চেয়ার দিয়ে সম্পাদকের কক্ষের পশ্চিম পাশের জানালার কাচ ভাঙচুর করে। ১৬নং আসামি সম্পাদকের কক্ষের দরজায় লাথি মেরে দরজাসহ কাচ ভাঙচুর করে। এসময় উপস্থিত বঙ্গবন্ধু আওয়ামী আইনজীবী পরিষদের নারী আইনজীবীরা সম্পাদকের কক্ষ রক্ষায় এগিয়ে আসলে ১৬নং আসামি তাদের অনেকের গায়ে চড়-থাপ্পড় মারতে থাকে। তখন অ্যাডভোকেট সাবিনা আক্তার মলি এগিয়ে আসলে ১৭নং আসামি তাকে যৌন হয়রানি করে।