বাংলাদেশের নামকরণ করা ঘূর্ণিঝড় বিপর্যয় আগেই অতিপ্রবল ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নিয়েছিল। এরপরও দ্রুত শক্তি বাড়িয়ে চলেছে ঝড়টি। এরই মধ্যে অত্যাধিক প্রবল ঘূর্ণিঝড়ে (এক্সট্রিমলি সিভিয়ার সাইক্লোনিক স্টর্ম) পরিণত হয়েছে ‘বিপর্যয়’। এর জন্য ভারতের পর পাকিস্তানেও বিশেষ সতর্কতা জারি করা হয়েছে।
সাধারণত ঘূর্ণিঝড়ের কেন্দ্রে বাতাসের গতিবেগ যদি ৬২ থেকে ৮৮ কিলোমিটারের মধ্যে থাকে, তাহলে সেটিকে স্বাভাবিক ঘূর্ণিঝড় বলা হয়। কেন্দ্রে বাতাসের গতিবেগ ৮৯ থেকে ১১৭ কিলোমিটারের মধ্যে হলে সেটি প্রবল ঘূর্ণিঝড় এবং বাতাসের গতিবেগ ১১৮ থেকে ২২০ কিলোমিটারের মধ্যে হলে তাকে অতিপ্রবল ঘূর্ণিঝড় হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। আর বাতাসের গতিবেগ যদি ঘণ্টায় ২২০ কিলোমিটারের বেশি হয়ে থাকে, তাহলে সেটিকে সুপার সাইক্লোন বলা হয়।
শনিবার (১০ জুন) অতিপ্রবল ঘূর্ণিঝড় থাকা অবস্থায় ‘বিপর্যয়ের’ বাতাসের গতিবেগ ঘণ্টায় ১৪৫ কিলোমিটার বলে জানিয়েছিল ভারতের আবহাওয়া বিভাগ (আইএমডি)। এরপর ঝড়ের গতি আরও বেড়েছে।
রোববার (১১ জুন) সকালে আইএমডি জানিয়েছে, ঘূর্ণিঝড় বিপর্যয় খুব দ্রুত শক্তিবৃদ্ধি করছে। ঝড়টি বর্তমানে ভারতের পোরবন্দর থেকে ৪৮০ কিলোমিটার দক্ষিণ-দক্ষিণপশ্চিমে, দ্বারকা থেকে ৫৩০ কিলোমিটার দক্ষিণ-দক্ষিণপশ্চিমে এবং নালিয়া থেকে ৬১০ কিলোমিটার দক্ষিণ-দক্ষিণপশ্চিমে অবস্থান করছে।
এটি ধীরে ধীরে উত্তর দিকে অগ্রসর হয়ে আগামী ১৫ জুন ভারতের গুজরাট ও পাকিস্তানের করাচি উপকূলে আঘাত হানতে পারে। এর প্রভাবে আগামী পাঁচদিন ধরে উপকূলীয় এলাকাগুলো, বিশেষ করে ভারতের সৌরাষ্ট্র ও কোচ অঞ্চলে শক্তিশালী ঝড়ো বাতাস বয়ে যেতে পারে।
আইএমডি জানিয়েছে, ঘূর্ণিঝড় বিপর্যয়ের কারণে আগামী বুধবার (১৪ জুন) পর্যন্ত গুজরাট উপকূলে সমুদ্রের অবস্থা ‘উত্তাল থেকে অতিউত্তাল’ এবং বৃহস্পতিবার (১৫ জুন) ‘অতিউত্তাল থেকে উচ্চ উত্তাল’ অবস্থায় পৌঁছাতে পারে।
ঝড়ের প্রভাবে সৃষ্ট সুউচ্চ ঢেউ এবং প্রবল বাতাসের কারণে আগামী ১৪ জুন পর্যন্ত গুজরাটের তিথাল সমুদ্র সৈকতে পর্যটকদের প্রবেশ নিষিদ্ধ করেছে কর্তৃপক্ষ।
সাগর উত্তাল থাকায় গুজরাট, কেরালা, কর্ণাটক এবং লক্ষদ্বীপের জেলেদের সমুদ্রে না যাওয়ার পরামর্শ দিয়েছে আইএমডি। শুক্রবার কেরালার আটটি জেলায় হলুদ সতর্কতা জারি করা হয়েছে।
ঘূর্ণিঝড় বিপর্যয়ের কারণে সতর্ক অবস্থায় রয়েছে পাকিস্তানও। দেশটির জাতীয় বিপর্যয় ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ (এনডিএমএ) করাচি উপকূলীয় এলাকার বাসিন্দাদের জন্য সতর্কতা জারি করেছে। ঝড়টি চলে না যাওয়া পর্যন্ত আগামী সোমবার থেকে জেলেদের আরব সাগরে না যাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
বিশেষ করে, সিন্ধু ও বেলুচিস্তান প্রশাসনকে সতর্ক থাকার নির্দেশ দিয়েছে পাকিস্তান সরকার।
প্রসঙ্গত, ঘূর্ণিঝড় বিপর্যয়ের নামকরণ করেছে বাংলাদেশ। মূলত বঙ্গোপসাগর ও আরব সাগরে তৈরি হওয়া ঘূর্ণিঝড়গুলোর নামকরণ করে এ অঞ্চলের ১৩টি দেশ। প্যানেল অন ট্রপিকাল সাইক্লোনের কাছে একের পর এক ঘূর্ণিঝড়ের নামের প্রস্তাবিত তালিকা জমা পড়ে। সেখান থেকেই বেছে নেওয়া হয় পরবর্তী ঝড়ের নাম।
ঘূর্ণিঝড় বিপর্যয়ের পরে যে ঝড়টি আঘাত হানবে, তার নাম তেজ। এই নাম প্রস্তাব করেছে ভারত। তেজের পর আসবে ঘূর্ণিঝড় হামুন (ইরান), মিধালি (মালদ্বীপ), মিগজাউম (মিয়ানমার), রিমাল (ওমান), আসনা (পাকিস্তান), ডানা (কাতার), ফিনজাল (সৌদি আরব), শক্তি (শ্রীলঙ্কা), মনথা (থাইল্যান্ড), সেনিয়ার (সংযুক্ত আরব আমিরাত), দিতওয়াহ (ইয়েমেন) প্রভৃতি।
সূত্র: এনডিটিভি, সামা টিভি