বাংলাদেশের দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে নতুন ভিসানীতি ঘোষণা করেছে যুক্তরাষ্ট্র। এতে রাজনীতিতে নতুন উদ্যম খুঁজে পেয়েছে সরকারবিরোধী রাজনৈতিক শিবির। প্রধান বিরোধীদল বিএনপির মধ্যম সারির নেতৃত্ব বেশ চাঙা। বিশেষ করে যারা নিজেদের রাজনৈতিক ক্যারিয়ারের শেষ দেখছিলেন তারা সরকার পরিবর্তনের আশায় নতুন করে উদ্দীপনা পাচ্ছেন মাঠের রাজনীতিতে।
তারা বলছেন, বাংলাদেশের দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ঘিরে যুক্তরাষ্ট্র যে ভিসানীতি ঘোষণা করেছে রাজনীতিতে তার ব্যাপক প্রভাব পড়েছে। যারা সততা, নিষ্ঠার সঙ্গে গণতান্ত্রিক চর্চা অব্যাহত রাখবে এই নীতির ফলে তাদের রাজনৈতিক ভবিষ্যৎও ভালো হবে। আর যারা অগণতান্ত্রিক পথ বেছে নেবে তারা ক্যারিয়ারের শেষ দেখবে।
গত ২৪ মে বাংলাদেশের জন্য নতুন ভিসানীতি ঘোষণা করে যুক্তরাষ্ট্র। এর পরপরই গাজীপুর সিটি নির্বাচনে ক্ষমতাসীন দলের প্রার্থীর পরাজয় হয়। দেশের রাজনীতিতে শুরু শোরগোল। সরকারবিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো এতে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করে। রাজপথের প্রধান বিরোধীদল বিএনপির ভবিষ্যৎ নেতৃত্বে যারা এগিয়ে থাকবেন, বিগত দিনের ছাত্ররাজনীতি থেকে যারা জাতীয় রাজনীতির মূল ধারায় রয়েছেন তারা কী ভাবছেন বিষয়টি নিয়ে?
বিএনপির সহ-শিক্ষা বিষয়ক সম্পাদক হেলেন জেরিন খান জাগো নিউজকে বলেন, মার্কিন ভিসানীতির ফলে রাজনীতিতে ব্যাপক পরিবর্তন এসেছে। আগে তো আওয়ামী লীগ বিএনপির নামই শুনতে পারতো না। এখন সেটা নেই। এর আগে আমরা যারা সততা, নিষ্ঠার সঙ্গে রাজনীতি করি, গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে রাজনীতি করি তাদের জন্য বিশাল একটা বাধা ছিল। আমার মধ্যেও হতাশা তৈরি হয়েছিল রাজনীতির ভবিষ্যৎ নিয়ে। মার্কিন ভিসানীতি ঘোষণায় আমরা খুশি। এ নীতি নিয়ে আমার উদ্বেগের কোনো কারণ নেই। যারা সন্ত্রাস করে, গণতন্ত্রকে ব্যাহত করছে এটা তাদের জন্য উৎকণ্ঠার।
সহ-দপ্তর সম্পাদক তাইফুল ইসলাম টিপু বলেন, যখন একটা স্বাধীন রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে অন্য রাষ্ট্র নেগেটিভ কোনো সিদ্ধান্ত নেয়, সেটা গোটা জাতির জন্যই লজ্জার। এর দায় সে সময় যে সরকার থাকে তার ওপর বর্তায়। সরকারের ব্যর্থতার কারণেই এ ধরনের ঘটনা ঘটে। এখন এ ঘটনার প্রভাব সব মানুষের ওপর পড়বে। শুধু আমার কেন, সবার রাজনৈতিক ক্যারিয়ারেই এর প্রভাব পড়বে।
সহ-তথ্য গবেষণা বিষয়ক সম্পাদক আমিরুজ্জামান খান শিমুল বলেন, আমাদের লোকজন এমনিতেই আত্মবিশ্বাসী যে শেখ হাসিনা এবার ক্ষমতায় থাকতে পারবেন না। মার্কিন ভিসানীতি ঘোষণার পর সেই বিশ্বাস আরও দৃঢ় হয়েছে। তারা যে বিদেশি শক্তির কথা বলে, কোনো শক্তি এখন তাদের পক্ষে নেই।
এই ভিসানীতি আপনার রাজনৈতিক ক্যারিয়ারে কোনো প্রভাব ফেলবে কি না এমন প্রশ্নের জবাবে শিমুল বলেন, ব্যক্তিগত ক্যারিয়ারের কিছু নেই, দলীয় নেতাকর্মীদের মধ্যে নতুন করে উৎসাহ-উদ্দীপনা তৈরি হয়েছে।
তিনি বলেন, ভবিষ্যৎ ক্যারিয়ারে আমার কাজ তো আমারই করতে হবে। ভিসানীতির প্রভাব ভালোই পড়বে। কারণ আমরা তো দুই নম্বরি কাজ করতে যাবো না।
দলের সহ-প্রচার সম্পাদক আমিরুল ইসলাম খান আলিম বলেন, এতে আমি বা আমাদের ওপর কোনো প্রভাব পড়বে না। যারা স্বৈরতন্ত্রের পক্ষে তাদের জন্য সমস্যা। আমরা গণতন্ত্রকামী, গণতন্ত্রে বিশ্বাস করি।
জাতীয়তাবাদী কৃষকদলের সাধারণ সম্পাদক শহিদুল ইসলাম বাবুল বলেন, আমরা নেতিবাচক রাজনীতি করি না। সুতরাং, এই ভিসানীতি আমাদের ক্যারিয়ারের জন্য ইতিবাচক।
সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুস সালাম আজাদ জাগো নিউজকে বলেন, আমি গণতন্ত্রের শত্রু না। গণতন্ত্রের স্বপক্ষের সৈনিক। যারা দুর্নীতিবাজ, গণতন্ত্রের বিপক্ষে অবস্থান নেবে তারা এই ভিসানীতির আওতায় পড়বেন।
সমাজসেবা বিষয়ক সম্পাদক কামরুজ্জামান রতন বলেন, বাংলাদেশের একজন নাগরিক হিসেবে আমি খুব লজ্জিত। একজন বাংলাদেশি হিসেবে এই লজ্জা কতকাল বয়ে বেড়াতে হবে সেটা আমরা জানি না। কোন পরিস্থিতিতে সুপার পাওয়ার আমেরিকা ভিসানীতি দিয়েছে সেটা প্রথমে উপলব্ধি করতে হবে। শাসকগোষ্ঠী যদি এ সমস্যা সমাধানে সচেষ্ট হয় আমরা সেক্ষেত্রে সহযোগিতা করবো। রাষ্ট্র পরিচালনায় থেকে যারা অপকর্ম করছে এই ভিসানীতি তাদের জন্য।
তিনি আরও বলেন, আমার পরিবারের চারজন আমেরিকা থাকে। তারা আমেরিকান স্কলারশিপ নিয়ে ওখানে পড়ছে। কই আমার ভেতরে তো এ ব্যাপারে কোনো উদ্বিগ্নতা নেই।