ইউক্রেনে রাশিয়ার হামলার পর থেকেই ন্যাটো জোটে যোগ দিতে পশ্চিমাদের তাড়া দিয়ে যাচ্ছেন দেশটির প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি। মঙ্গলবার (১১ জুলাই) লিথুয়ানিয়ায় ন্যাটোর সম্মেলন শুরু হয়। পশ্চিমা বিশ্বের নেতারা এখন রাশিয়ার প্রতিবেশী এই দেশটিতে জড়ো হয়েছেন। এদিকে ন্যাটো সামরিক জোটে যোগদানের জন্য ইউক্রেনকে কখন আমন্ত্রণ জানানো হবে সে বিষয়ে কোনরকম দিন তারিখ নির্ধারণ না করাটা ‘অযৌক্তিক’ সময় নষ্ট বলে উল্লেখ করেছেন জেলেনস্কি।
তবে ন্যাটোভুক্ত দেশগুলো বলেছে, যখন মিত্র দেশগুলো সম্মত হবে এবং শর্ত পূরণ করা হবে তখনই এই সামরিক জোটে যোগ দিতে পারবে ইউক্রেন। তবে সেটা কবে তা এখনও স্পষ্ট নয়। ফলে ন্যাটোতে ইউক্রেনের যোগদানের বিষয়টি নিয়ে এখনো ধোঁয়াশা থেকেই যাচ্ছে।
এক বিবৃতিতে ন্যাটো জানিয়েছে, এই সামরিক জোটে ইউক্রেনের দ্রুত যোগ দেওয়ার প্রয়োজনীয়তার বিষয়টি তারা স্বীকার করেছে তবে এখনই কোনও সময়সীমা দেওয়া যাচ্ছে না। এর আগে জেলেনস্কি হতাশা প্রকাশ করে বলেছিলেন যে, ইউক্রেনকে ন্যাটোতে আমন্ত্রণ জানানো বা সদস্য করার কোনও প্রস্তুতি আছে বলে তার মনে হচ্ছে না। বর্তমানে ভিলনিয়াসে অবস্থান করছেন তিনি।
গত রোববার সিএনএনকে দেওয়া এক সাক্ষাতকারে প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বলেছেন, যুদ্ধ শেষ না হওয়া পর্যন্ত এমনটা হবে না। তিনি বলেন, ইউক্রেনকে এখন ন্যাটোতে অন্তর্ভূক্ত করা মানে রাশিয়ার বিরুদ্ধে ন্যাটোর যুদ্ধ শুরু হওয়া। বাইডেন বলেন, অনুচ্ছেদ ৫-এর অধীনে আক্রমণের শিকার যে কোনও সদস্য দেশকে রক্ষা করতে ন্যাটো প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। তিনি বলেন, যাই হোক না কেন এটি একটি প্রতিশ্রুতি যা আমরা সবাই মিলে তৈরি করেছি। যদি যুদ্ধ চলমান থাকে তার অর্থ আমরা সবাই যুদ্ধে আছি। এখন ইউক্রেন ন্যাটোতে যোগ দেওয়া মানে রাশিয়ার বিরুদ্ধে আমাদের যুদ্ধ করা।
এদিকে কিয়েভও স্বীকার করেছে যে, রাশিয়ার সঙ্গে যুদ্ধ চলাকালীন সময় তারা যে ন্যাটোতে যোগ দিতে পারবে না সেটা তারা জানে। কিন্তু যুদ্ধ শেষ হওয়ার পর যত দ্রুত সম্ভব তারা এই সামরিক জোটে যোগ দিতে চায়। কিন্তু জেলেনস্কি এর আগে এক টুইট বার্তায় বলেছিলেন, ইউক্রেনকে ন্যাটোতে অন্তর্ভূক্ত করার বিষয়ে একটি নির্দিষ্ট সময়সীমা না দেওয়া মানে তার দেশের চূড়ান্ত সদস্যপদ একটি দর কষাকষিতে পরিণত হতে পারে।
তার মতে, রাশিয়ার সঙ্গে আলোচনার সময় দরকষাকষির ক্ষেত্রে হয়তো ইউক্রেনকে ন্যাটোতে নেওয়া বা না নেওয়ার বিষয়টি সুযোগ হিসেবে কাজে লাগানো হতে পারে। তিনি বলেন, অনিশ্চয়তা হচ্ছে একটি দুর্বলতা। ইউক্রেন কখন এবং কীভাবে সামরিক জোটে যোগ দিতে পারে তা হয়তো ন্যাটো জানায়নি। কিন্তু কূটনীতিকরা জোর দিয়েছিলেন যে, তারা ইউক্রেনের সদস্য হওয়ার জন্য একটি পরিষ্কার পথ নির্ধারণ করেছেন এবং এই প্রক্রিয়া সংক্ষিপ্ত করা হয়েছে।
সামরিক জোট স্বীকৃতি দিয়েছে যে, ইউক্রেনের সেনাবাহিনী রাজনৈতিকভাবে ন্যাটো বাহিনীর সঙ্গে আরও একীভূত হয়েছে এবং এটি ইউক্রেনের গণতন্ত্র ও নিরাপত্তাখাতে সংস্কারের বিষয়ে সমর্থন দিয়ে যাবে। কূটনীতিকরা একটি নতুন ন্যাটো-ইউক্রেন কাউন্সিল গঠনের কথাও তুলে ধরেছেন। এর মাধ্যমে কিয়েভকে পুরো জোটের বৈঠক ডাকার অধিকার দেওয়া হবে। কিন্তু ন্যাটোতে যোগদানের বিষয়ে স্পষ্ট কোনও ধারণা না দেওয়ার সিদ্ধান্তকে ইউক্রেনের জন্য একটি বড় ধাক্কা হিসেবেই দেখা হচ্ছে।