পাবনার ঈশ্বরদীতে চাষ বেড়েছে আগাম জাতের শিম। যার নাম দেওয়া হয়েছে ‘অটো শিম’। এ জাতের শিম চাষে এখানকার কৃষকরা প্রতিবারই লাভবান হন। এরই মধ্যে গাছে শিম ধরা শুরু হয়ে গেছে। ১৫ দিন পরই চাষিরা বাজারে তুলবেন নতুন এসব শিম।
উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, ঈশ্বরদীতে গত বছর শিমের আবাদ হয় ১১৩০ হেক্টর জমিতে। এবার শিমের আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ হয়েছে ১১৯০ হেক্টর জমি। এরমধ্যে মুলাডুলি ইউনিয়নেই ৮৫০ হেক্টর জমিতে শিম চাষ হয়।
সরেজমিনে দেখা যায়, অটো জাতের শিম গাছ এরই মধ্যে মাচায় উঠে ফুলে ফুলে ভরে গেছে। তাই গাছের পরিচর্যায় ব্যস্ত সময় পার করছেন মুলাডুলি ইউনিয়নের কৃষকরা। ১৫ দিনের মধ্যে আগাম শিম বাজারে তুলতে পারবেন বলে জানিয়েছেন তারা। জ্যৈষ্ঠের মাঝামাঝিতে আগাম শিম চাষ শুরু করেন চাষিরা। শ্রাবণের শেষের দিকে বাজারে তোলা হয়।
জানা যায়, এক যুগ ধরে এখানে অটো শিমের আবাদ চলছে। ফলন ভালো ও কৃষকরা লাভবান হওয়ায় প্রতিবছরই আবাদ বাড়ছে। এ শিম চাষে প্রতিবছরই সফলতা পান এখানকার চাষিরা। শিম চাষকে কেন্দ্র করে ঈশ্বরদীর মুলাডুলিতে গড়ে উঠেছে বিশাল বাজারও।
মুলাডুলির বাঘহাচলা গ্রামের শিম চাষি আলাউদ্দিন খাঁ বলেন, আগাম জাতের অটো শিম চাষ করে এখানকার কৃষকরা বেশ লাভবান হয়। গত বছর ১২ কাঠা জমিতে অটো শিমের আবাদ করেছিলাম। এতে সব খরচ বাদ দিয়ে ১ লাখ ২০ হাজার টাকা লাভ হয়েছে। আমার মতো অনেক কৃষক আগাম অটো শিমের আবাদ করে স্বাবলম্বী হয়েছেন। এখন শিম গাছ ফুলে ফুলে ভরে গেছে। ফুল থেকে শিমের ফলনও শুরু হয়ে গেছে। শ্রাবণ মাসের মাঝামাঝিতে শিম বাজারে তুলতে পারলে ২০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করা যাবে।
শেখপাড়া গ্রামের শিম চাষি আজমল হোসেন বলেন, শিম শীতকালীন সবজি হলেও এ এলাকায় ৮-১০ বছর ধরে আগাম জাতের শিমের আবাদ হচ্ছে। শ্রাবণ মাসের শেষের দিকে শিমের ফলন শুরু হয়। প্রতি বছরই চাষিদের লাভ হয়। আগাম শিমের বাজারে চাহিদা বেশি থাকে দামও ভালো পাওয়া যায়। তবে এ শিম উৎপাদনে চাষিদের খুবই পরিশ্রম করতে হয়। এ শিমের ক্ষেতে পোকার আক্রমণ বেশি হয়। এছাড়া অতি বৃষ্টি ও অতি খরার কারণে শিমের ফলন বিপর্যয়ের সম্ভাবনা থাকে।
বাঘহাচলা গ্রামের ইন্তাজ উদ্দিন বলেন, প্রতি বিঘা জমিতে অটো শিমের আবাদ করতে খরচ হয় প্রায় ৩০-৩৫ হাজার টাকা। অন্য ফসলের চেয়ে শিমের আবাদে খরচ বেশি। আবহাওয়া ভালো থাকলে ফলন ভালো হয়। ফলন ভালো হলে প্রতি বিঘা জমির শিম ১ লাখ ৪০ হাজার থেকে ১ লাখ ৫০ হাজার টাকা বিক্রি হয়। বাজারে প্রথম যে শিমগুলো উঠে সেগুলোর দাম বেশি থাকে। প্রথম অবস্থায় ২০০ টাকা কেজি বা তার চেয়ে বেশি থাকে বিক্রি করা যায়।
মুলাডুলি দৈনিক সবজি বাজার সমিতির উপদেষ্টা আমিনুল ইসলাম বাবু জাগো নিউজকে বলেন, আগাম জাতের শিম জ্যৈষ্ঠমাসে চাষাবাদ শুরু হয়েছে। এখনো আড়তে শিম আসা শুরু হয়নি। আশা করছি যাচ্ছে ১৪-১৫ দিনের মধ্যেই বাজারে অটো জাতের শিম উঠবে।
কৃষি উপ-সহকারী কর্মকর্তা জাহিদুল ইসলাম জাহিদ জাগো নিউজকে বলেন, অটো-রূপবান-ঘৃত কাঞ্চন-রূপসী নামে আগাম জাতের শিম এখানে চাষাবাদ বেশি হয়। অটো জাতের শিম জ্যৈষ্ঠ মাস থেকে আবাদ শুরু হয়েছে। এ শিম শ্রাবণ মাসের শেষের দিকে বাজারে পাওয়া যাবে । আবার কিছু চাষি এখন শিমের আবাদ শুরু করছেন। এসব শিমের ফলন পাওয়া যাবে কার্তিক মাসে। গত বছরের চেয়ে এবার উপজেলায় শিমের আবাদ বাড়বে বলে আশা করা যাচ্ছে। গত বছর ১১৩০ হেক্টর জমিতে শিমের আবাদ হয়েছিল। এবার ১১৯০ হেক্টর জমিতে আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ হয়েছে।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মিতা সরকার জাগো নিউজকে বলেন, ঈশ্বরদীতে জ্যৈষ্ঠমাসের শুরুতেই আগাম জাতের শিমের আবাদ শুরু হয়েছিল। সেসব শিম গাছ ফুলে ভরে গেছে। আগামী ১৫ দিনের মধ্যেই চাষিরা এসব শিম বাজারে বিক্রি করতে পারবে। দেশের সবচেয়ে বেশি শিমের আবাদ হয় এ উপজেলায়। রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন বাজারে আগাম জাতের যে পাওয়া যায় সেগুলো ঈশ্বরদীতে উৎপাদন হয়। সার ও কীটনাশক কম ব্যবহার করে কীভাবে আগাম শিম উৎপাদন করা যায় সে বিষয়ে কৃষকদের নানা পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।