চুয়াডাঙ্গায় বিরিয়ানি খেয়ে একই বিদ্যালয়ের ২০ শিক্ষক-কর্মচারী ও তাদের পরিবারের আরও ১০ সদস্য গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। কেউ কেউ ভর্তি হয়েছেন হাসপাতালে।
অসুস্থতার কারণে আটজন শিক্ষক বিদ্যালয়ে অনুপস্থিত থাকায় সোমবার শ্রেণি কার্যক্রম চরমভাবে ব্যাহত হয়। চুয়াডাঙ্গা সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে এ ঘটনা ঘটে।
এক শিক্ষকের ছেলেসন্তান হওয়ার পর খুশিতে রোববার তিনি বিদ্যালয়ের শিক্ষক-কর্মচারীদের বিরিয়ানি খাওয়ান। ওই দিন চুয়াডাঙ্গা জেলা শহরের শাহী নান্না বিরিয়ানি হাউস থেকে ৫০ প্যাকেট বিরিয়ানি এনে শিক্ষক-কর্মচারীরা খান। কেউ কেউ বাসায় নিয়ে যান।
ফলে বিদ্যালয়ের ২০ শিক্ষক-কর্মচারীসহ তাদের পরিবারের আরও ১০ জন গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন। সোমবার বিকাল সাড়ে ৪টার দিকে বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক সাজিদ আহমেদ সেতু এ ব্যাপারে ফেসবুকে একটি পোস্ট দিলে বিষয়টি সাংবাদিকদের নজরে আসে।
চুয়াডাঙ্গা সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক সাজিদ আহমেদ সেতু দৈনিক যুগান্তরকে বলেন, ‘আমরা রোববার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে জেলা শহরের শাহী নান্না বিরিয়ানি হাউস থেকে ৫০ প্যাকেট বিরিয়ানি এনে দুপুর ২টার মধ্যে খাওয়া দাওয়া শেষ করি। রাতে প্রায় সবাই অসুস্থ হয়ে পড়ি। আমার নাক-মুখ দিয়ে বমি হয়েছে। সঙ্গে পাতলা পায়খানা। মনে হচ্ছিল আমি মারা যাব।’
একই রকম কথা বলেন সহকারী শিক্ষক শামীম আহমেদ। তিনি বলেন, ‘আমার সন্তানসম্ভবা স্ত্রীসহ আমি ওই বিরিয়ানি খাই। আমরা এত অসুস্থ হয়ে পড়ি যে, মনে হচ্ছিল জান বুঝি বেরিয়ে যাবে।’
বিদ্যালয়ের সিনিয়র শিক্ষক মহসীন আলী অভিযোগ করে বলেন, ‘ওই বিরিয়ানি নিঃসন্দেহে বাসি ছিল। রাতের বাসি বিরিয়ানি নতুন বিরিয়ানির সঙ্গে মিশেল দিয়ে বিক্রি করেছিল। এ কারণে আমাদের প্রায় ২০ জন শিক্ষক-কর্মচারী বিরিয়ানি খেয়ে অসুস্থ হয়ে পড়েন। অসুস্থতার কারণে আটজন শিক্ষক সোমবার বিদ্যালয়ে উপস্থিতই হতে পারেননি। এতে বিদ্যালয়ে শ্রেণি কার্যক্রম চরমভাবে ব্যাহত হয়।’
তিনি আরও বলেন, ‘অসুস্থতার কারণে তিনজন শিক্ষক চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। আমরা এ বিষয়ে কয়েকবার ওই বিরিয়ানি হাউসে গিয়েছি কিন্তু প্রতিষ্ঠানের মালিক গা-ঢাকা দিয়েছেন। আমরা এ ব্যাপারে জেলা প্রশাসনসহ ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরে লিখিতভাবে অভিযোগ জানাব।’
এ বিষয়ে শাহী নান্না বিরিয়ানি হাউসের স্বত্বাধিকারী মো. ফেরদৌস বলেন, ‘শিক্ষকরা আমাকে ফোন করে বলেছেন। কিন্তু আমরা তো ভালো বিরিয়ানিই দিয়েছি, এমনটি হওয়ার কথা নয়। বিরিয়ানি দুই ঘণ্টার মধ্যে খাওয়ার জন্য আমাদের প্যাকেটেই নির্দেশনা আছে। কেউ দেরি করে খেলে তো আমরা দায়ী হব না।’
জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর চুয়াডাঙ্গার সহকারী পরিচালক সজল আহমেদ যুগান্তরকে বলেন, ‘বিদ্যালয়ের কয়েকজন শিক্ষক বিষয়টি আমাকে ফোনে জানিয়েছেন। বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে নিচ্ছি। অভিযুক্ত বিরিয়ানি হাউসের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’