মঙ্গলবার , ২৯ আগস্ট ২০২৩ | ১৫ই বৈশাখ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
  1. অর্থনীতি
  2. আইন-আদালত
  3. আন্তর্জাতিক
  4. উপ-সম্পাদকীয়
  5. কৃষি ও প্রকৃতি
  6. ক্যাম্পাস
  7. খেলাধুলা
  8. চাকরি
  9. জাতীয়
  10. জীবনযাপন
  11. তথ্যপ্রযুক্তি
  12. দেশগ্রাম
  13. দেশজুড়ে
  14. ধর্ম
  15. নারী ও শিশু

বেদেপল্লিতে বেড়ে ওঠা অদম্য আবু বকর

প্রতিবেদক
নিউজ ডেস্ক
আগস্ট ২৯, ২০২৩ ৫:৩০ পূর্বাহ্ণ

বেদেপল্লির সন্তান হওয়ায় মানুষ তুচ্ছতাচ্ছিল্য করতো। স্কুলের বারান্দা থেকে চাকরির ক্ষেত্রে পদে পদে হতে হয়েছে বঞ্চনার শিকার। তবুও দমে যাননি। এ বঞ্চনা থেকেই জন্ম নিয়েছিল জেদ। সেই জেদকে পুঁজি করে আজ তিনি চাকরি করছেন বাংলাদেশ আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীতে।

বলছিলাম আবু বকর নামের ২৭ বছর বয়সী এক তরুণের জীবনের গল্প। তিনি একজন বেদে সম্প্রদায়ের ছেলে। বাড়ি শরীয়তপুর সদর উপজেলার ডোমসার ইউনিয়নের কোয়ারপুর এলাকায়। মুন্সিরহাট এলাকার কীর্তিনাশা নদীর কোলঘেঁষা উত্তর-পশ্চিম দিকের ছোট একটি বেদেপল্লিতে বেড়ে ওঠা তার। ওই পল্লির আব্দুল ছাত্তার আকন ও জোসনা বেগম দম্পতির ছোট ছেলে আবু বকর। ১২ বছর আগে আবু বকরের জীবনের ঘটে যাওয়া ছোট্ট একটি ঘটনা ঘুরিয়ে দিয়েছে তার জীবনের মোড়।

আবু বকর সিদ্দিক জানান, ছোটবেলা থেকেই তার পড়াশোনার প্রতি ছিল ভীষণ ঝোঁক। তবে গরিব আর বেদেপল্লির সন্তান হওয়ায় সেভাবে পড়াশোনার সুযোগ ছিল না তার। পড়াশোনার খরচ চালাতে রংমিস্ত্রির কাজ করতেন। কোনোমতে স্কুলের গণ্ডি পার করলেও আটকে যান জে এস সি পরীক্ষার কাছাকাছি সময়টাতে এসে। সালটা তখন ২০১১। পড়াশোনা করতেন শরীয়তপুর কালেক্টরেট পাবলিক হাই স্কুলে। সামনে পরীক্ষা কিন্তু এখনো জোগাড় হয়নি ফরম পূরণের টাকা। কেনা হয়নি ইংরেজি ও বাংলা ব্যাকরণ বই।

একদিন নৌকায় বাড়ি ফেরার পথে মানুষের মুখে শুনেছিলেন সামনে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন। নির্বাচনে কিছু লোককে অস্থায়ী আনসার সদস্য হিসেবে নেওয়া হবে নির্বাচনী কাজে সহায়তা করার জন্য। এখানে কাজ করলে বেশ ভালো কিছু টাকা পাওয়া যাবে। একথা শুনে সেদিন ফরম পূরণ আর বই কেনার চিন্তা থেকে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র নিয়ে ছুটে যান জেলা আনসার ক্যাম্পে। প্রাথমিকভাবে বাছাইয়ে টিকে গেলেও কোনো এক অজানা কারণে তাকে আর নেওয়া হয়নি। বিষয়টি সরাসরি প্রকাশ না করলেও পরিষ্কার বোঝা গিয়েছিল বেদে সম্প্রদায়ের মানুষ হওয়ায় সেদিন তাকে বাদ দেওয়া হয়েছিল। আর তখনি তার জেদ চেপে বসে—যত কষ্টই হোক একদিন এ আনসার বাহিনীতে চাকরি করবেন তিনি।

সেদিনের ফরম পূরণের টাকাটা অবশ্য লোকের কাছ থেকে ধারে নিয়েই জোগাড় করতে হয়েছিল আবু বকরকে। এরপর জেএসসি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে আনসার ভিডিপির জেলা কার্যালয় থেকে গ্রামপুলিশের ১০ দিনের মৌলিক প্রশিক্ষণ ও পরবর্তী সময়ে ২১ দিনের অস্ত্রসহ প্রশিক্ষণ সম্পন্ন করেন। পরে তিনি গাজীপুরের সফিপুর থেকে সাধারণ আনসার প্রশিক্ষণ সম্পন্ন করেন। আর এরপরই মেলে তার সেই কাঙ্ক্ষিত আনসার বাহিনীর স্বপ্নের চাকরি।

বেদেপল্লিতে বেড়ে ওঠা অদম্য আবু বকর

চাকরির পাশাপাশি অবশ্য পড়াশোনাটা ধরে রেখেছিলেন আবু বকর। পরে অবশ্য উন্মুক্ত থেকে মাধ্যমিক ও বেসরকারি একটি কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক সম্পন্ন করেন। তার চাকরিজীবনের প্রথম কর্মস্থল ছিল কিশোরগঞ্জের ভৈরব থানায়। সেখানে এলিন ফুড প্রোডাক্ট লিমিটেড নামের এক কোম্পানিতে গার্ড হিসেবে নিযুক্ত হন। বর্তমানে তিনি চট্টগ্রামের কদম রসুল এলাকায় সানমুন টেক্সটাইল নামের একটি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করছেন। পাশাপাশি করেছেন বিয়ে। তার সংসারে স্ত্রী তামান্না বেগম আর তিন বছর বয়সী ফাতেমা নামের একটি কন্যাশিশু রয়েছে।

আবু বকর সিদ্দিক জাগো নিউজকে বলেন, ‘স্কুলে যখন পড়াশোনা করতাম তখন বেদে সম্প্রদায়ের মানুষ বলে সহপাঠীরা আমার সঙ্গে বসতো না। এমনকি আমার দেওয়া খাবারও খেতো না। তখন খুব খারাপ লাগতো। পড়াশোনা করে এতোদূর আসা আমাদের মতো বেদে সম্প্রদায়ের মানুষের পক্ষে সম্ভব না। জেদ আর চেষ্টাই আমাকে আজ এতোদূর নিয়ে এসেছে।’

আবু বকর সিদ্দিকের বাবা ছাত্তার সরদার বলেন, ‘দুই বেলা যেখানে খাওন জোটে না আমাদের, সেখানে বেদে সম্প্রদায়ের মানুষের পড়াশোনা করা তো অসম্ভব। আমার কোনো সামর্থ্য ছিল না ওরে পড়াশোনা করানোর। আমার বাচ্চাটা বহুত কষ্ট করে এতোদূর আসছে। এখন গর্ব করে বলতে পারি আমার ছেলে একজন বাহিনীর লোক।’

মা জোসনা বেগম বলেন, ‘এলাকায় ঘুরে সামান্য কিছু রোজগার করে সংসার চালিয়েছি। ওদের ঠিকমতো ভালোমন্দ খাওয়ানোর মতোও আয় হতো না। এতো কষ্টের সংসারেও আমার পোলাডা পড়াশোনা করেছে। এই বাইদ্যা পল্লিতে একমাত্র আমার পোলাই চাকরি করে।’

কথা হয় শরীয়তপুরের আনসার ভিডিপির জেলা কমান্ড্যান্ট মইনুল ইসলামের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘আবু বকর নামের ওই ছেলেটির কথা আমি শুনেছি। সে আমাদের আনসার বাহিনীর একজন সদস্য। প্রতিকূল পরিবেশে বেড়ে উঠেও নিজের ইচ্ছাশক্তির জন্য সে এতোদূর আসতে পেরেছে। আমাদের পক্ষ থেকে যতটুকু সম্ভব তাকে সহযোগিতা করা হবে।’

সর্বশেষ - সারাদেশ

আপনার জন্য নির্বাচিত