বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতির অবনতি নিয়ে ইউরোপীয় পার্লামেন্টে গৃহীত প্রস্তাব প্রত্যাহারের আহ্বান জানিয়েছে বাংলাদেশ সিভিল সোসাইটি ইন ইউরোপ। সংগঠনটি ইউরোপীয় কমিশনের ভাইস প্রেসিডেন্ট জোসেফ বোরেলকে একটি চিঠি দিয়ে তাদের এ দাবি জানিয়েছে।
গত ১৪ সেপ্টেম্বর ‘বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি, বিশেষ করে “অধিকারের” বিরুদ্ধে মামলা’ নিয়ে ইউরোপীয় পার্লামেন্টে প্রস্তাব গৃহীত হয়েছে।
ইউরোপে বসবাসরত বিভিন্ন দেশের বিজ্ঞানী, শিক্ষক, গবেষক, সাংবাদিক, ব্যবসায়ী, চাকরিজীবীসহ নানা পেশাজীবীর সংগঠন বাংলাদেশ সিভিল সোসাইটি ইন ইউরোপ। জোসেফ বোরেলকে দেওয়া চিঠিতে সংগঠনটি বলেছে, বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি, বিশেষ করে অধিকারের মামলা-সংক্রান্ত বিষয়ে ইউরোপীয় পার্লামেন্টের যে প্রস্তাব পাস করা হয়েছে, সে বিষয় নিয়ে তারা বিচলিত।
ইউরোপীয় পার্লামেন্টের প্রস্তাবে অধিকারকে নতুন করে কাজ করতে দেওয়ার যে প্রস্তাব পাস করা হয়েছে, সেই বিষয়ে তারা গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। বিষয়টি একটি সার্বভৌম দেশের অভ্যন্তরীণ আইনি বিষয়ে সরাসরি হস্তক্ষেপ বলে মনে করে বাংলাদেশ সিভিল সোসাইটি ইন ইউরোপ। তাদের চিঠিটিতে বলা হয়েছে, ‘অধিকার মামলাটি’ বাংলাদেশের মানবাধিকার সংগঠন অধিকারের প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনের কারণে করা হয়েছিল। বাংলাদেশের আইন প্রয়োগকারী সংস্থা হেফাজতে ইসলাম নামের সংগঠনের মাধ্যমে সংঘটিত ২০১৩ সালের ৫ মে ধ্বংসাত্মক আন্দোলনকে সরকার ব্যর্থ করে দেয়। এ ঘটনায় ২০১৩ সালের ১০ জুন তারিখে অধিকার রিপোর্টে ৬১ জন নিহত হওয়ার দাবি করা হয়। কয়েকটি উল্লেখযোগ্য স্বাধীন সংস্থা ‘অধিকার’-এর দেওয়া মৃত্যুর তালিকায় ব্যাপক অনিয়ম ও ভুল তথ্যের প্রমাণ পায়।
ইউরোপীয় পার্লামেন্টের প্রস্তাবে জুডিশিয়াল সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের উদ্বেগ
চিঠিতে বলা হয়, ‘অধিকারের সে রিপোর্ট সেই সময় উগ্রপন্থীদের তুষ্ট করেছে এবং ধর্মনিরপেক্ষ শক্তির বিরুদ্ধে তাদের ক্রোধকে আরও উসকে দিয়েছিল। আমরা মনে করি, ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) বিশ্বব্যাপী মানবাধিকার রক্ষায় একটি প্রশংসনীয় প্রচেষ্টা রয়েছে। তবু এ ধরনের একটি প্রস্তাব পাস করার পূর্বে বিষয়টি গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করা অপরিহার্য।’
ইউরোপীয় পার্লামেন্টে গৃহীত প্রস্তাব প্রত্যাহারের অনুরোধ জানিয়ে ২৮৮ আইনজীবীর বিবৃতি
বাংলাদেশ সিভিল সোসাইটি ইন ইউরোপের চিঠিতে বলা হয়, ইইউ পার্লামেন্ট স্বচ্ছ ও ন্যায়সম্মত আইনি প্রক্রিয়ার পক্ষে যেকোনো প্রস্তাব পাস করতে পারে, তবে তা অবশ্যই ন্যায়বিচার এবং মানবাধিকারের নীতিগুলোকে সমর্থনের ভিত্তিতে হতে হবে। এ ক্ষেত্রে অবশ্যই বাংলাদেশের আইনের শাসনকে সম্মান এবং দেশটির আইনি কাঠামো এবং সেই মোতাবেক গৃহীত সিদ্ধান্তগুলো বজায় রাখার গুরুত্বের ওপর জোর দিতে হবে। একটি জাতির সার্বভৌমত্বকে সম্মান করা এবং মানবাধিকার ও ন্যায়বিচারের পক্ষে ওকালতি করার বিষয়টির মধ্যে অবশ্যই একটি ভারসাম্য থাকা প্রয়োজন।
বাংলাদেশ সিভিল সোসাইটি ইন ইউরোপ তাদের চিঠিতে ইইউ পার্লামেন্টকে প্রস্তাবটি পুনর্মূল্যায়ন করার জন্য অনুরোধ করেছে।