সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি ৯টি প্রস্তাবের পরিপ্রেক্ষিতে ১ হাজার ৫১৩ কোটি ৬ লাখ ৫০ হাজার ৯৫৮ টাকা ব্যয় করার অনুমোদন দিয়েছে। বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের জন্য ১৪ তলা বিশিষ্ট রেকর্ড ভবন ও আইসিবির প্রধান কার্যালয়ের জন্য ৩২ তলা বিশিষ্ট ভবন নির্মাণের দুটি আলাদা প্রস্তাবসহ ৯টি ক্রয় প্রস্তাবের অনুমোদন দিয়েছে সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি।
বুধবার (১ নভেম্বর) অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত কমিটির এক ভার্চুয়াল সভায় প্রস্তাবগুলোতে অনুমোদন দেওয়া হয়। সভায় কমিটির সদস্য, মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সিনিয়র সচিব, সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সচিব ও ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
প্রাপ্ত তথ্যমতে জানা গেছে, আজ অর্থনৈতিক বিষয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির সভায় ২টি এবং ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির সভায় ৯টি ক্রয় প্রস্তাব অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। ক্রয় কমিটির ৯টি প্রস্তাবে মোট টাকার পরিমাণ ১ হাজার ৫১৩ কোটি ৬ লাখ ৫০ হাজার ৯৫৮ টাকা।
সূত্র জানায়, ‘ইরিগেশন ম্যানেজমেন্ট ইমপ্রুভমেন্ট প্রজেক্ট ফর মুহুরী ইরিগ্রেশন প্রজেক্ট (৩য় সংশোধিত)’ প্রকল্পে নিয়োজিত পরামর্শক প্রতিষ্ঠানের ভেরিয়েশন প্রস্তাবে অনুমোদন দিয়েছে কমিটি। প্রকল্পের পরামর্শক প্রতিষ্ঠান হিসেবে নিউজিল্যান্ডের এফসিজি এএনজেডডিইসি লিমিটেডকে ৫০ কোটি ৭৪ লাখ ৬৫ হাজার ৩৪৩ টাকায় নিয়োগের চুক্তি করা হয়। চুক্তি অনুসারে কাজ চলমান অবস্থায় প্রকল্পের পূর্ত কাজের মেয়াদ বৃদ্ধি হওয়ায় পরামর্শক সেবার জন্য ভেরিয়েশন বাবদ অতিরিক্ত ৭ কোটি ৫৪ লাখ ৬৬ হাজার ৯৫ টাকা ব্যয় বৃদ্ধির ক্রয় প্রস্তাবে অনুমোদন দিয়েছে কমিটি।
সভায় সৌদি আরব থেকে চারটি লটে ৩০ হাজার মেট্রিক টন বাল্ক গ্র্যানুলার ইউরিয়া সার আমদানির অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। সৌদি আরবের সঙ্গে চুক্তি অনুসারে সারের মূল্য নির্ধারণ করে চারটি লটে ৩০ হাজার মেট্রিক টন বাল্ক গ্র্যানুলার ইউরিয়া সার প্রতি মেট্রিক টন ৩৯৯.১৭ মার্কিন ডলার হিসেবে ব্যয় হবে মোট ১ কোটি ১৯ লাখ ৭৫ হাজার ১০০ মার্কিন ডলার সমপরিমাণ বাংলাদেশি মুদ্রায় ১৩২ কোটি ৩২ লাখ ৪৮ হাজার ৫৫০ টাকা।
রাষ্ট্রীয় চুক্তির মাধ্যমে সংযুক্ত আরব আমিরাত থেকে দ্বিতীয় লটে ৩০ হাজার মেট্রিক টন বাল্ক গ্র্যানুলার ইউরিয়া সার আমদানির অনুমোদন দিয়েছে কমিটি। দেশটির সঙ্গে চুক্তি অনুসারে দ্বিতীয় লটে ৩০ হাজার মেট্রিক টন বাল্ক গ্র্যানুলার ইউরিয়া সার আমদানিতে ব্যয় হবে ১ কোটি ১৯ লাখ ৭৫ হাজার ১০০ মার্কিন ডলার, যা বাংলাদেশি মুদ্রায় ১৩২ কোটি ৩২ লাখ ৪৮ হাজার ৫৫০ টাকা।
তিউনিশিয়া থেকে তৃতীয় লটে ২৫ হাজার মেট্রিক টন টিএসপি সার আমদানি করা হবে। বিএডিসি কর্তৃক তিউনিশিয়া হতে রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে চুক্তির মাধ্যমে টিএসপি সার আমদানি করা হয়। তিউনিশিয়া থেকে তৃতীয় লটে ২৫ হাজার মেট্রিক টন টিএসপি সার বর্তমান আন্তর্জাতিক বাজার মূল্যে ব্যয় হবে ৯৭ লাখ ২৫ হাজার মার্কিন ডলার, বাংলাদেশি মুদ্রায় ১০৭ কোটি ৪৬ লাখ ১২ হাজার ৫০০ টাকা। প্রতি মেট্রিক টন টিএসপি সার ৩৮৯ মার্কিন ডলার।
সভায় রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে চুক্তির আওতায় রাশিয়া থেকে তৃতীয় লটে ৩০ হাজার মেট্রিক টন মিউরেট-অব-পটাশ (এমওপি) সার আমদানির একটি প্রস্তাব অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। সার আমদানি চুক্তিতে উল্লিখিত মূল্য নির্ধারণ পদ্ধতি অনুসারে রাশিয়া থেকে তৃতীয় লটে ৩০ হাজার মে. টন এমওপি সারের বর্তমান আন্তর্জাতিক বাজার মূল্যে ব্যয় হবে ৯৮ লাখ ৩২ হাজার ৫০০ মার্কিন ডলার, বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ১০৮ কোটি ৬৪ লাখ ৯১ হাজার ২৫০ টাকা। প্রতি মেট্রিক টন এমওপি সারের দাম ৩২৭.৭৫ মার্কিন ডলার।
ঢাকার রাজারবাগে আইসিবি‘র প্রধান কার্যালয়ের জন্য ৩২ তলা বিশিষ্ট ভবন নির্মাণে পূর্ত কাজের ক্রয় প্রস্তাবে অনুমোদন দিয়েছে কমিটি। দরপত্রের সব প্রক্রিয়া শেষে টিইসি কর্তৃক সুপারিশকৃত রেসপনসিভ সর্বনিম্ন দরদাতা প্রতিষ্ঠান যৌথভাবে (১) এনডিই এবং (২) ইউসিসি বাস্তবায়ন করবে। এতে ব্যয় হবে ১৭৬ কোটি ৬০ লাখ টাকা।
বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের জন্য ১৪ তলা বিশিষ্ট রেকর্ড ভবন নির্মাণের পূর্ত কাজের ক্রয় প্রস্তাবে অনুমোদন দিয়েছে কমিটি। দরপত্রের সব প্রক্রিয়া শেষে টিইসি কর্তৃক সুপারিশকৃত রেসপনসিভ সর্বনিম্ন দরদাতা প্রতিষ্ঠান ন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট ইঞ্জিনিয়ার্স লিমিটেড প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে। এতে ব্যয় হবে ১৫৫ কোটি ৭০ লাখ ৪৫ হাজার ৬৫০ টাকা।
সভায় ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ সেকশনে বিদ্যমান মিটারগেজ রেললাইনের সমান্তরাল একটি ডুয়েলগেজ রেললাইন নির্মাণ প্রকল্পে নিয়োজিত পরামর্শক প্রতিষ্ঠানের দ্বিতীয় ভেরিয়েশন প্রস্তাবে অনুমোদন দিয়েছে কমিটি। প্রকল্পের পরামর্শক প্রতিষ্ঠান হিসেবে মেসার্স ডেভেলপমেন্ট ডিজাইন কনসালটেন্টস লিমিটেডকে ১১ কোটি ৯৭ লাখ ৪০ হাজার ২৩৮ টাকায় নিয়োগের চুক্তি করা হয়। চুক্তি অনুযায়ী কাজ চলমান অবস্থায় প্রকল্পের মেয়াদ বৃদ্ধি হওয়ায় পূর্ত কাজ চলমান অবস্থায় পরামর্শক সেবার জন্য ভেরিয়েশন বাবদ অতিরিক্ত ৫ কোটি ৯৮ লাখ ৬১ হাজার ১৬৮ টাকা ব্যয় বৃদ্ধির প্রস্তাবে অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।
ঢাকা-টঙ্গী সেকশনে ৩য় ও ৪র্থ ডুয়েলগেজ লাইন এবং টঙ্গী-জয়দেবপুর সেকশনে ডুয়েলগেজ ডাবল লাইন নির্মাণ প্রকল্পের তৃতীয় ভেরিয়েশন প্রস্তাবে অনুমোদন দিয়েছে কমিটি। প্রকল্পের পূর্ত কাজ যৌথভাবে (১) এফকন এবং (২) কেপিটিএল’র কাছ থেকে ১ হাজার ৩৯৩ কোটি ৭৮ লাখ ৯০ হাজার ৭৪১ টাকায় ক্রয়ের চুক্তি করা হয়েছে। চুক্তি অনুসারে কাজ চলমান অবস্থায় বাস্তবতার নিরিখে পূর্ত কাজের কিছু আইটেম হ্রাস/বৃদ্ধি এবং নতুন আইটেম যুক্ত হওয়ায় তৃতীয় ভেরিয়েশন বাবদ অতিরিক্ত ৬৮৬ কোটি ৪৬ লাখ ৭৭ হাজার ১৯৫ টাকা ব্যয় বৃদ্ধির প্রস্তাবে অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এছাড়া, টেবিলে আরও ২টি প্রস্তাব ছিল। তবে বিস্তারিত জানা যায়নি।
এর আগে অর্থমন্ত্রীর সভাপতিত্বে অর্থনৈতিক বিষয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির সভায় দুটি প্রস্তাবে নীতিগত অনুমোদন দেওয়া হয়।