দেশের ব্যাংকখাতে পুনঃতফসিল করা ঋণের স্থিতি এখন দুই লাখ ১৩ হাজার কোটি টাকা। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের দেওয়া বিশেষ নীতি সুবিধার কারণে ঋণ পুনঃতফসিলের পাহাড় তৈরি হয়েছে। ক্ষমতার অপব্যবহার করে কেউ যেন পুনঃতফসিল সুবিধা নিতে না পারে সে বিষয়টি শক্তভাবে তদারকির পরামর্শ দিয়েছে ইকোনোমিক রিপোর্টারস ফোরাম (ইআরএফ)।
সোমবার (৬ নভেম্বর) বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে এক বৈঠকে এসব পরামর্শ দেন ইআরএফ’র নেতারা। বৈঠকে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার, অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগের সচিব ড. খায়েরুজ্জামান মজুমদার, আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব মোহাম্মদ সলিমুল্লাহ, অন্যান্য ডেপুটি গভর্নর, ইআরফ’র সভাপতি মোহাম্মদ রেফায়েত উল্লাহ মৃধা, সাধারণ সম্পাদক আবুল কাশেম প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা নিয়ে অর্থনীতিবিদদের সঙ্গে পরামর্শমূলক সভার অংশ ছিল এটি।
বৈঠক শেষে ইআরএফ সভাপতি রেফায়েতউল্লা মৃধা বলেন, অর্থনীতিকে কীভাবে আরও স্থিতিশীল করা যায় সে বিষয়ে পরামর্শ দিয়েছে ইআরএফ। এর জবাবে আমাদের অর্থনীতি খুব দ্রুতই স্থিতিশীল অবস্থার দিকে যাবে বলে আশ্বাস দেন গভর্নর। গভর্নর আবদুর রউফ তালুকদার জানান, এই মুহূর্তে রিজার্ভ থেকে আর কোনো বিনিয়োগ করবে না বালাদেশ ব্যাংক।
ইআরএফ সভাপতি বলেন, বিলাসী পণ্য আমদানিতে যেসব বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে তা ঠিকমতো তদারকির কথা বলেছি। পাশাপাশি পণ্য আমদানি-রপ্তানির আড়ালে কোনোভাবেই যেন অর্থপাচার না হয় সে বিষয়ে গুরুত্ব দিতে বলেছি।
সর্বশেষ ২০২২ সালে ৬৩ হাজার ৭১৯ কোটি টাকার খেলাপি ঋণ পুনঃতফসিল করেছে ব্যাংকগুলো। সেটি অনুমোদন করে বাংলাদেশ ব্যাংক। একইভাবে ব্যাংকগুলো নিজেরাও পুনঃতফসিল করেছে। এর ফলে এসব ঋণ খেলাপি হিসেবে চিহ্নিত করা হয়নি। গত জুন শেষে খেলাপি ঋণ ১ লাখ ৫৬ হাজার ৩৯ কোটি টাকা ছাড়িয়ে গেছে। আর পুনঃতফসিল করা ঋণকে খেলাপি হিসেবে চিহ্নিত করা হলে ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণ ২০ শতাংশ ছাড়িয়ে যেতো।
গত ২৩ অক্টোবর গবেষণা সংস্থা সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক অন ইকোনমিক মডেলিং (সানেম)-এর সঙ্গে একই বৈঠক করে বাংলাদেশ ব্যাংক। বৈঠক শেষে সানেমের গবেষণা পরিচালক ড. সাইমা হক বিদিশা জানান, সম্প্রতি ব্যাংকের পক্ষ থেকে রেমিটেন্স কেনার ক্ষেত্রে আড়াই শতাংশ পর্যন্ত প্রণোদনা দেওয়ার যে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে তা দীর্ঘমেয়াদে কাজে আসবে না। যতক্ষণ পর্যন্ত ডলারের অফিসিয়াল এবং আন-অফিসিয়াল রেটে পার্থক্য থাকবে ততক্ষণ রেমিটাররা অবৈধ পথেই ডলার পাঠাবেন।
এরপর গত ২১ সেপ্টেম্বর সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদের সঙ্গে একই বিষয়ে বৈঠক করে বাংলাদেশ ব্যাংক। ওই বৈঠকে নতুন করে টাকা ছাপিয়ে সরকারকে ঋণ না দিতে বাংলাদেশ ব্যাংককে পরামর্শ দেন অর্থনীতিবিদ ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ। কারণ এ প্রবণতা মূল্যস্ফীতি বাড়িয়ে দিতে পারে বলে জানান তিনি।