রাজধানীর সরকারি ও বিশেষায়িত হাসপাতালগুলোতে প্রতিদিন সকাল থেকেই রোগী ও স্বজনদের থাকে উপচেপড়া ভিড় লেগে থাকতো। ভিড়ে টিকিট কাটা নিয়ে দেখা দেয় রোগীদের দীর্ঘ লাইন। তবে অবরোধে আউটোডোরে রোগীর সংখ্যায় কিছুটা ভাটা পড়েছে। ঢাকার হাসপাতালগুলোতে ঢাকার বাইরের অনেক রোগী চিকিৎসা নিতেই আসেন। দূরপাল্লার বাস বন্ধ থাকা কিংবা কম চলাচলে অনেক রোগীই ঢাকার বাইরে থেকে আসতে পারছে না। জরুরি প্রয়োজন ছাড়া হাসপাতালমুখী হচ্ছে না রোগীরা।
বৃহস্পতিবার (১৬ নভেম্বর) মহাখালী জাতীয় ক্যান্সার ইনস্টিটিউট, ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ), সুপার স্পেশালাইজড হাসপাতালসহ কয়েকটি হাসপাতাল ঘুরে দেখা যায়, সাধারণ সময়ের চেয়ে তুলনামূলক অনেক কম রোগীই এসেছেন হাসপাতালে। ঢাকার বিভিন্ন এলাকা ও নারায়ণগঞ্জ, গাজীপুরসহ আশপাশের এলাকার রোগীরা এসেছেন বেশি। তবে ঢাকার বাইরের জরুরি প্রয়োজন ছাড়া রোগীর উপস্থিতি চোখে পড়েনি। রোগীরা বেশি আসছেন সিএনজি চালিত অটোরিকশায়। ঢাকার বহির থেকে যে রোগী আসছেন তাদের বেশিরভাগই আসছেন অ্যাম্বুলেন্সে।
রাজধানীর জাতীয় ক্যান্সার ইনস্টিটিউটের আউটডোরে প্রতিদিন গড়ে ৪০০ এর বেশি রোগী আসে। এ দিন সকালে যাদের পুর্বনির্ধারিত তারিখ ঠিক করা ছিল তাদের অনেকেই আজ এসেছেন। তবে নতুন রোগী ঢাকার বাহিরে থেকে আউটডোরে আসেননি বলে জানিয়েছেন কর্মচারীরা। এক আনসার সদস্যা জানায়, প্রতিদিন এখানে রোগীর জন্য দাঁড়ানো যায় না। তবে টানা অবরোধে রোগীর চাপ অনেকটুকু কমেছে।
জাতীয় ক্যান্সার হাসপাতাল ও ইনস্টিটিউটে চিকিৎসা নিতে এসেছেন আমেনা বেগম (৪৫)। সাথে তার ভাই হামিম এসেছেন বোনের চিকিৎসা সহযোগী হিসেবে। তিনি জানান, আমরা রাজধানীর উত্তরা থেকে হাসপাতালে অটোরিকশায় এসেছি। হাসপাতালে ক্যামো দেওয়ার দিন ধার্য করা ছিল। ভয় ছিল মনে। দেশে রাজনৈতিক অস্থিরতা বেড়েছে মনে হয়।
বিএসএমএমইউর আউটডোরে প্রতিদিন গড়ে চার থেকে ৫ হাজার রোগী আসে। থাকে উপচেপড়া ভিড়। এদিন দুপুর ১২টায় দেখা যায় রোগীর সংখ্যা অনেকটাই কম। হাসপাতালের কর্মচারীরা জানান, এ হাসপাতালে সকাল ও বিকেল ২ সময়েই রোগী দেখা হয়। সকালের আউটডোরে রোগীর চাপে দাঁড়ানো কষ্ট হয়। সেখানে হরতাল অবরোধে রোগী অনেকটুকু কমেছে।
বিএসএমইউর সুপার স্পেশালাইজড হাসপাতালেও দেখা যায় একই চিত্র। হাসপাতালের রিসিপসনিস্ট রাহাত জাগো নিউজকে জানান, প্রতিদিন গড়ে ২০০ থেকে ২৫০ রোগী আসে হাসপাতালে। তবে হরতাল অবরোধে এ সংখ্যা অনেকটাই কমেছে। সকালে ৫০ জনের মতো ও বিকেলে ১০ থেকে জনের মতো রোগী এসেছে। এর কারন হিসেবে ঢাকার বাহিরের রোগী আসতা না পারার কথা জানান তিনি।
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক বিগ্রেডিয়ার জেনারেল মো. নাজমুল হক বলেন, অবরোধে রোগীর ওপরে কিছুটা হলেও প্রভাব পড়েছে। ঢাকার বাইরে থেকে রোগী কম আসছে। তবে যাদের জরুরি চিকিৎসা প্রয়োজন তারা অ্যাম্বুলেন্সে করে হাসপাতালে উপস্থিত হচ্ছে। সার্বিকভাবে হাসপাতালে রোগীর চাপ কিছুটা কম।
বিএসএমইউতে আসা এক রোগীর স্বজন জানান, আমরা নারায়ণগঞ্জ থেকে এসেছি সেই সকালে। তখন সিএনজি করে বোনকে নিয়ে এসেছি। তার হঠাত পেটে ব্যথা বেড়ে যায়। একেবারে দুর্বল হয়ে গেছে। তাই সাহস করেই চলে এসেছি। অসুস্থ থাকলে তো হাসপাতালে আসতে হয়। তখন বাহিরের পরিস্থিতি চিন্তা করার সযোগ নেই।