তবে কি আবারও নিজের পুরনো ফর্মুলায় ফিরে যাচ্ছেন চন্ডিকা হাথুরুসিংহে? সিলেট টেস্টের শুরুটা দেখে সে ইঙ্গিতই দিয়েছিলেন বাংলাদেশের সাবেক অধিনায়ক মোহাম্মদ আশরাফুল।
সিলেটে তিন স্পিনারের সাথে এক পেসার নিয়ে মাঠে নামা দেখেই জাতীয় দলের এই সাবেক অধিনায়কের মনে হয়েছিল, কোচ হাথুরুসিংহে আবার নিজের পুরনো কৌশলে ফিরে যাচ্ছেন।
আজ ৬ ডিসেম্বর ঢাকা টেস্টের প্রথম দিনের উইকেট দেখে অনেকের মনেও একই কথা ঘুরছে। শেরে বাংলায় এ বছর শেষ ২ টেস্টে ৩ পেসার নিয়ে খেলার পর চলতি টেস্টে কিউইদের বিপক্ষে টাইগার একাদশে একমাত্র পেসার (শরিফুল)।
সিলেটের মত ঢাকা টেস্টেও দলে ৩ স্পিনার- তাইজুল, মিরাজ ও নাইম হাসান প্রথম দিন শেষে খেলার চালচিত্র বদলে দিচ্ছেন। ওই ৩ স্পিনার দিয়েই টিম সাউদির দলকে হারানোর পথে বাংলাদেশ।
মাত্র ১৭২ রানে প্রথম ইনিংস শেষ করেও লিড নেয়ার কথা ভাবছে শান্তর দল। কারণ, পাল্টা ব্যাটিংয়ে নেমে ৫৫ রানে করতেই ইনিংসের অর্ধেকটা খুইয়ে ভীষণভাবে ধুঁকছে কিউইরা। বলে রাখা ভাল, এর আগে চন্ডিকা হাথুরুসিংহে যখন প্রথমবার কোচ হয়ে আসেন, তখনও এমন স্পিন বান্ধব পিচে খেলে টেস্টে ইংল্যান্ড এবং অস্ট্রেলিয়াকে হারিয়ে হইচই ফেলে দিয়েছিল বাংলাদেশ।
বুধবার খেলা শেষে স্বাগতিক দলের অফস্পিনার মেহেদি হাসান মিরাজও বলে ফেলেছেন, ‘আজ যে উইকেটে খেলা হলো, তা অনেকটাই ২০১৬ সালের ইংল্যান্ড এবং ২০১৭ সালের অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ম্যাচের উইকেটের মত। ইংল্যান্ড-অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে অনেকটা এমন উইকেটেই আমরা জিতেছি।’
ইতিহাসও সেটা জানাচ্ছে। ৭ বছর আগে ২০১৬ সালের অক্টোবরের শেষভাগে চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে টেস্ট অভিষেকে বল হাতে নিয়েই ৬ উইকেট শিকারী মেহেদী হাসান মিরাজ। কিন্তু তাতেও শেষ রক্ষা হয়নি। মিরাজ ওই ম্যাচে ৭ উইকেট পাওয়ার পরও ২২ রানে হেরে যায় বাংলাদেশ।
কিন্তু একই মাসের (অক্টোবরের শেষ ভাগে) এই শেরে বাংলায় ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় টেস্টেই স্পিন ঘূর্ণিতে ইংলিশ বধ করেছেন মিরাজ। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে (৬/৮২ ও ৬/৭৭) ম্যাচে ১২ উইকেট পেয়ে দল জিতিয়ে মাঠ ছাড়েন খুলনার ১৯ বছর বয়সী আনকোরা যুবা মিরাজ। তার স্পিন ঘূর্ণিতে দিশেহারা হয়ে ইংলিশদের সে কি অসহায় আত্মসমর্পন!
এরপর ২০১৭ সালে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষেও তেমন স্পিন বান্ধব উইকেটে সাকিব ম্যাজিকে ২০ রানে হার মানে স্টিভেন স্মিথরা। ব্যাট হাতে ৮৪ রানের দারুন ইনিংস খেলার পর বল হাতে (৫/৬৮, ৫/৮৫) ১০ উইকেট দখল করে অস্ট্রেলিয়া বধের রূপকার, নায়ক বনে যান সাকিব।
এবারও কি তাই হতে যাচ্ছে? সেটাই দেখার।
পরিসংখ্যান জানাচ্ছে ইংল্যান্ডের বিক্ষে প্রথম ইনিংসে ২২০ এবং অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে প্রথম ইনিংসে ২৬০ করেও জিতেছিল বাংলাদেশ।
আজ প্রথম দিনের খেলা শেষে সংবাদ সম্মেলনে আসা মিরাজের কথা শুনে মনে হলো, তারা এবারও দুশ’র বেশি রান করে জেতার কথা ভাবছেন।
তার ব্যাখ্যা, ‘উইকেট অনুযায়ী আমরা ৩০-৪০ রান কম করেছি। ২০০ রানের বেশি করলে মনে করতাম আদর্শ স্কোর। ওখানেই ভুল করেছি।’
আশাবাদী মিরাজ মনে করেন, এই পুঁজি নিয়েও প্রথম ইনিংসে লিড নেয়া সম্ভব। তিনি বলেন, ‘ভালো জায়গায় যদি বল করি ওদের জন্য কঠিন হবে। আমরাও অনেক সংগ্রাম করেছি, রান করতে কষ্ট হয়েছে। এখানে আমরা খেলতে অভ্যস্ত। জানি কন্ডিশন কেমন হতে পারে। আত্মবিশ্বাস ছিল, বোলারদের উপর আস্থা ছিল। ভালো জায়গায় যদি বল করতে পারি, মিরপুরের উইকেটে আমাদের এডভান্টেজ বেশি থাকবে। এটাই চিন্তা করেছিলাম।’