কিশোরগঞ্জ-৩ (করিমগঞ্জ-তাড়াইল) আসনের জাতীয় পার্টির প্রার্থী, দলটির মহাসচিব মুজিবুল হকের প্রার্থিতা চ্যালেঞ্জ করে নির্বাচন কমিশনে আপিল করা হয়েছে। আপিলটি করেছেন ওই আসনের আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী নাসিরুল ইসলাম খান।
নাসিরুল ইসলামের আইনজীবী মো. জিশান মাহমুদ বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, ‘কিশোরগঞ্জ-৩ আসনের জাপা প্রার্থী মুজিবুল হক ঋণ খেলাপির তথ্য গোপন করে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তাঁর হলফনামা জমা দিয়েছেন। তাঁর মনোনয়নপত্র কোনোভাবেই বৈধ হতে পারে না। এর বিরুদ্ধে আমরা ইসিতে আপিল করেছি। আশা করি, নির্বাচন কমিশন সঠিক রায় দেবেন।’
এ বিষয়ে নাসিরুল ইসলাম খান বলেন, ‘আগামী ১৩ তারিখ আপিলের শুনানি। ১৫ তারিখের মধ্যে রায় হবে। আমরা শতভাগ আশাবাদী মুজিবুল হকের মনোনয়নপত্র বাতিল হবে।’
ফরিদপুরে শামীম হকের প্রার্থিতা চ্যালেঞ্জ করে এ কে আজাদের আপিল
আজ শুক্রবার বেলা ১১টায় রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন কমিশনারের কার্যালয়ে গিয়ে আপিল আবেদনের সঙ্গে ব্যাংক থেকে নেওয়া মুজিবুল হকের ঋণ খেলাপের তথ্য যুক্ত করে জমা দেন নাসিরুল ইসলাম খান। গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ ১৯৭২-এর অনুচ্ছেদ ১৪ (৫)-এর অধীনে এই আপিল করেন তিনি।
কিশোরগঞ্জে জাপা মহাসচিবের আসনে আওয়ামী লীগ প্রার্থীর মনোনয়নপত্র বাতিল
আপিলে নাসিরুল অভিযোগ করেন, মুজিবুল হক ঋণখেলাপি হয়েও তথ্য গোপন করে কিশোরগঞ্জের রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছ থেকে মনোনয়নের বৈধতা পেয়ে যান। মানিকগঞ্জের আলবাটর ফ্যাশন লিমিটেডের নামে রূপালী ব্যাংক পুরানা পল্টন করপোরেট শাখা থেকে মুজিবুল হক ব্যক্তিগত গ্যারান্টার হয়ে ৫ কোটি ৭০ লাখ টাকা ঋণ তুলে দেন। দীর্ঘদিন ধরে ওই ঋণটি খেলাপি হয়ে আছে। বিষয়টি তিনি তাঁর দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের হলফনামায় উল্লেখ করেননি। তিনি তথ্য গোপন করেছেন। তাঁর মনোনয়ন আইন মোতাবেক বাতিলযোগ্য। এ ছাড়া বাংলাদেশ ব্যাংকের সিআইবি রিপোর্ট গোপন করে রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে মনোনয়নপত্র দাখিল করেন মুজিবুল হক।
এ বিষয়ে বক্তব্য জানতে মুজিবুল হকের সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করলেও তিনি ফোন ধরেননি।
প্রার্থিতা ফিরে পেতে ইসিতে হিরো আলমের আপিল

নাসিরুল ইসলাম খান দীর্ঘদিন ধরে করিমগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক। ২০১৯ সালের ২৪ মার্চের নির্বাচনে তিনি করিমগঞ্জ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দলের মনোনয়ন পেয়ে তিনি উপজেলার পরিষদ চেয়ারম্যানের পদ থেকে পদত্যাগ করেন।
৩ ডিসেম্বর মনোনয়নপত্র যাচাই-বাছাইয়ে আওয়ামী লীগের প্রার্থী নাসিরুল ইসলাম খানের প্রার্থিতা বাতিল হয়ে যায়। জানা গেছে, ২০১৪ সালের একটি মামলায় এজাহারনামীয় আসামি ছিলেন তিনি। পরে অভিযোগপত্র থেকে তাঁর নাম বাদ দেওয়া হয়। ওই অভিযোগপত্রের তথ্য হলফনামায় উল্লেখ না করায় মুজিবুল হকের কর্মীদের অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে নাসিরুলের মনোনয়নপত্র বাতিল করা হয়। তবে নিজের প্রার্থিতা ফিরে পেতে ৫ ডিসেম্বর নির্বাচন কমিশনে আপিল করেছেন নাসিরুল।
নৌকার শাম্মীর মনোনয়নপত্র বাতিল, পংকজের বৈধ
কিশোরগঞ্জ-৩ আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য মুজিবুল হক। তিনি ১৯৮৬ সালে অনুষ্ঠিত তৃতীয় জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও ১৯৮৮ সালে অনুষ্ঠিত চতুর্থ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জাতীয় পার্টির প্রার্থী হিসেবে তৎকালীন কিশোরগঞ্জ-৪ আসনের সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। তিনি ২০০৮ সালে নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মহাজোটের প্রার্থী হিসেবে কিশোরগঞ্জ-৩ আসন থেকে প্রার্থী হয়ে বিজয়ী হন। এরপর ২০১৪ সালে অনুষ্ঠিত দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও বিজয়ী হন। সর্বশেষ ২০১৮ সালের একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মহাজোট থেকে তিনি পুনরায় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।
এ আসনে গত তিনটি সংসদ নির্বাচনেই আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন পেয়েছিলেন নাসিরুল ইসলাম খান। তিনবারই জোটের স্বার্থে নাসিরুল ইসলাম খানকে শেষ মুহূর্তে মনোনয়ন প্রত্যাহার করতে হয়।