একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধকালীন সংঘটিত অপহরণ, হত্যা, গণহত্যাসহ মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে করা মামলায় ঠাকুরগাঁওয়ের আবেদ হোসেনের (৬৫) বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষের যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষ করা হয়েছে। পরবর্তী যুক্তিতর্ক উপস্থাপনের জন্য আগামী ২২ জানুয়ারি দিন ঠিক করেছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল।
ওই দিন আসামিপক্ষের আইনজীবী তার পক্ষে যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করবেন। রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী প্রসিকিউটর অ্যাডভোকেট রেজিয়া সুলতানা চমন বিষয়টি জাগো নিউজকে নিশ্চিত করেছেন।
রোববার (২৪ ডিসেম্বর) ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. শাহিনুর ইসলামের নেতৃত্বে তিন সদস্যের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল এ আদেশ দেন। ট্রাইব্যুনালের অন্য দুই সদস্য হলেন- বিচারপতি আবু আহমেদ জমাদার ও বিচারপতি কে এম হাফিজুল আলম।
আদালতে রাষ্ট্রপক্ষের শুনানিতে ছিলেন প্রসিকিউটর মো. সাহিদুর রহমান। তার সঙ্গে ছিলেন প্রসিকিউটর রেজিয়া সুলতানা চমন। অন্যদিকে, আসামিপক্ষের শুনানিতে সময় আবেদন করেন অ্যাডভোকেট আবদুস সাত্তার পালোয়ান।
এ মামলায় তদন্ত কর্মকর্তাসহ (আইও) রাষ্ট্রপক্ষের মোট নয়জনের সাক্ষ্যগ্রহণ করা হয়েছে। এদিকে, আসামিপক্ষের একজন সাফাই সাক্ষ্য দিয়েছেন। সাক্ষ্যগ্রহণ শেষে মামলায় যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শুরু হয়।
প্রসিকিউটর অ্যাডভোকেট রেজিয়া সুলতানা চমন জাগো নিউজকে জানান, ২০১৮ সালের ২৯ জুলাই থেকে এ মামলার তদন্ত শুরু করে ২০১৯ সালের ৮ আগস্ট শেষ করা হয়। ওইদিন আসামির বিরুদ্ধে প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়। আসামি আবেদ হোসেন একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন মে থেকে ২২ নভেম্বর পর্যন্ত বিভিন্ন ধরনের অপরাধ সংঘটিত করেন বলে মামলার অভিযোগে উল্লেখ রয়েছে।
তিনি বলেন, ঠাকুরগাঁওয়ের বালিয়াডাঙ্গী থানার বোবড়া এলাকার আবু তৈয়বের ছেলে আবেদ হোসেন। তাকে ২০১৯ সালের ২৫ জুন গ্রেফতার করা হয়। তিনি অসুস্থ। আসামির বিরুদ্ধে একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের সময় সংঘটিত অপহরণ, হত্যা, গণহত্যাসহ মানবতাবিরোধী অপরাধের তিনটি অভিযোগ আনা হয়েছে।
আসামির বিরুদ্ধে যত অভিযোগ
প্রথম অভিযোগে বলা হয়, একাত্তরে মে মাসের শেষের দিকে ঠাকুরগাঁও জেলার বালিয়াডাঙ্গী থানার আধারিদিঘীর পাড়ে পাকিস্তান বাহিনী ও তাদের দোসর স্থানীয় রাজাকার আবেদ হোসেনসহ অন্য রাজাকাররা আধারদিঘীর পার্শ্ববর্তী বোবড়া ও অন্য গ্রাম থেকে সাতজন নিরীহ লোককে আটক করে ব্যাংকার তৈরির কাজে শ্রমসাধ্য মাটি খননের কাজ করায়। ব্যাংকার তৈরির কাজে যেতে না চাইলে তখন আসামি আবেদ হোসেন ও তার সহযোগীরা কাজে যেতে বাধ্য করতো।
দ্বিতীয় অভিযোগে বলা হয়, একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধকালীন পাকিস্তানি বাহিনী ও রাজাকারদের অবস্থান সম্পর্কে স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধাদের খোঁজখবর দিয়ে সহায়তার কারণে পবেদ আলী, দুমপেল ও মজনুকে ধরে নিয়ে তীরনই নদীর পাড়ে গুলি করে মরদেহ পানিতে ফেলে দেয়। ওই ঘটনায় পবেদ আলী হাতে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় জীবিত উদ্ধার হলেও বাকি দুজনের কোনো খোঁজ পাওয়া যায়নি।
তৃতীয় অভিযোগে বলা হয়, আহত পবেদ আলীকে আবার ধরে নিয়ে তীরনই নদীর পাড়ে নিয়ে গুলি করে মরদেহ পানিতে ফেলে দেয়। পরে পবেদ আলীর মরদেহের সন্ধান পাওয়া যায়নি। আসামির বিরুদ্ধে ২০১৮ সালের ২৯ জুলাই থেকে তদন্ত শুরু হয়। রাজনৈতিক পরিচয়ে আসামি জামায়াতে ইসলামীর সমর্থক বলেও উল্লেখ করা হয়েছে।