ভোলা-লক্ষ্মীপুর রুটের মেঘনা নদীতে অসংখ্য ডুবোচরে প্রতিনিয়ন ব্যাহত হচ্ছে লঞ্চ ও ফেরি চলাচল। ডুবোচরের কারণে মাত্র সোয়া এক ঘণ্টার পথ পাড়ি দিতে হচ্ছে ৩-৪ ঘণ্টায়। আর চরে আটকা পড়লে জোয়ারের অপেক্ষা করতে হয় আরও ৭-৮ ঘণ্টা। এতে করে চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন এই রুটে চলাচলকারী সাধারণ যাত্রীরা।
সরেজমিনে গিয়ে জানা গেছে, ভোলার সঙ্গে দেশের ২১ জেলার সহজ যোগাযোগ মাধ্যম ভোলা-লক্ষ্মীপুর নৌরুটের ২০ কিলোমিটার নৌপথটি। প্রতিদিন সকাল থেকে ভোলার ইলিশা লঞ্চঘাট থেকে ১৫টি লঞ্চ ও ফেরিঘাট থেকে ৫টি ফেরি লক্ষ্মীপুরের মজু চৌধুরীহাট ঘাটের উদ্দেশ্যে ছেড়ে যায়। এতে লঞ্চ ও ফেরিতে প্রায় ২০ হাজার মানুষের পাশাপাশি প্রায় শতাধিক যাত্রীবাহী বাস,পণ্যবাহী ট্রাকসহ বিভিন্ন ধরনের যানবাহন পারাপার হয়ে থাকে।
কিন্তু বর্তমানে শীত মৌসুমে এই নৌরুটে ৭-৮টি পয়েন্টে জেগে উঠেছে ডুবোচর। যার কারণে লঞ্চ ও ফেরিগুলো ঘুরে ২০ কিলোমিটারের পথ ৩০ কিলোমিটার পাড়ি দিয়ে আসলেও মাঝে-মধ্যে আটকা পড়ে ডুবোচরে। আর এতে করে প্রতিদিনই ব্যাহত হচ্ছে লঞ্চ ও ফেরি চলাচল।
এ রুটের সাধারণ যাত্রী মো. সাহাবুদ্দিন, নজরুল ইসলাম, হুমায়রা আক্তার, অধির দাস, মো. আব্দুর রব ও মো. বেলাল হোসেন জানান, তারা প্রতিনিয়ত লঞ্চ ও ফেরি দিয়ে ভোলার ইলিশাঘাট থেকে লক্ষ্মীপুরের মজুচৌধুরী হাট ঘাট হয়ে চট্টগ্রাম, ফেনি, কুমিল্লা, চাঁদপুর ও ঢাকাসহ বিভিন্ন জেলায় যাতায়াত করেন। আগে ইলিশা থেকে লঞ্চে মজুচৌধুরী হাট ঘাটে সময় লাগতো সোয়া এক ঘণ্টা থেকে দেড় ঘণ্টা। কিন্তু এখন শীত মৌসুমে লঞ্চ চরের কারণে ঠিকমতো যেতে পারে না, আস্তে আস্তে চলে। যার কারণে ৩-৪ ঘণ্টা সময় লাগে। আর ফেরিতেও সময় আগের চেয়ে ২-৩ ঘণ্টা বেশি লাগে। যার কারণে আমরা সময়মতো নির্দিষ্ট স্থানে পৌঁছাতে পারছি না। এতে করে আমাদের অনেক সমস্যা সৃষ্টি হচ্ছে।
তারা আরও জানান, এ রুটে লঞ্চ ও ফেরি ছাড়া যেহেতু অন্য কোনো পথ নেই তাই এ অবস্থায় দ্রুত সমাধান হওয়া উচিত।
এমভি আইমান লঞ্চের মাস্টার মো. শহিদুল ইসলাম, গ্রীন লঞ্চের মাস্টার মো. মনির হোসেন ও কুসুম কলি ফেরির মাস্টার মো. আব্দুল মাসুদ আকন জানান, এ রুটে অসংখ্য ডুবোচরের কারণে ২০ কিলোমিটারের পথ ঘুরে ৩০ কিলোমিটার পাড়ি দিয়ে যেতে হয়। তারপরও ইলিশা থেকে আমরা লঞ্চ ও ফেরি ছেড়ে গেলেই ডুবোচরের মধ্যে পড়ি। যার কারণে আস্তে আস্তে চালাতে হয়। এতে যাত্রীরা আমাদের গালমন্দ করেন। আস্তে চালানোর পরও অনেক সময় চরে আটকা পড়ি। তখন জোয়ারের অপেক্ষা করতে হয় ঘণ্টার পর ঘণ্টা।
তারা আরও জানান, এতে আমাদের জ্বালানি খরচ অনেক বেশি হয়। আমাদের অনেক হয়রানির শিকারও হতে হচ্ছে। এ অবস্থায় দ্রুত নদীর ডুবোচর খননের জন্য আবেদন করছি।
বিআইডব্লিউটিসির মেরিন অফিসার মো. আল আমিন জানান, এ রুটের ৭-৮টি পয়েন্টে ডুবোচর রয়েছে। বিষয়টি দ্রুত সমাধানের জন্য কর্তৃপক্ষেকে জানানো হয়েছে। আশা করছি দ্রুত সমাধানের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
বিআইডব্লিউটিএ ভোলা নদী বন্দরের সহকারী পরিচালক মো. শহিদুল ইসলাম জানান, ডুবোচরের বিষয়ে লঞ্চের মাস্টার বা মালিক লিখিতভাবে জানালে তিনি খননের বিষয়ে ঊর্ধ্বতন কৃর্তপক্ষকে জানাবেন।