রবিবার , ৩১ ডিসেম্বর ২০২৩ | ১৪ই বৈশাখ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
  1. অর্থনীতি
  2. আইন-আদালত
  3. আন্তর্জাতিক
  4. উপ-সম্পাদকীয়
  5. কৃষি ও প্রকৃতি
  6. ক্যাম্পাস
  7. খেলাধুলা
  8. চাকরি
  9. জাতীয়
  10. জীবনযাপন
  11. তথ্যপ্রযুক্তি
  12. দেশগ্রাম
  13. দেশজুড়ে
  14. ধর্ম
  15. নারী ও শিশু

বছর শেষ হয় বাসাভাড়া বাড়ানোর নোটিশে

প্রতিবেদক
নিউজ ডেস্ক
ডিসেম্বর ৩১, ২০২৩ ১২:৫৬ অপরাহ্ণ

বছর ঘুরলে ক্যালেন্ডারের পাতায় যেমন একটি বাড়তি সংখ্যা যোগ হয়, ঢাকা শহরে বাসা ভাড়ায়ও তেমন নতুন বোঝা যোগ হয়। ২০২৩ সালের পর ২০২৪ আসা যেমন অবধারিত, ২ কোটির বেশি মানুষের এ শহরে বাসাভাড়া বাড়ানোও যেন তেমনই অবধারিত। এ নিয়ে দেশে বাড়িভাড়া নিয়ন্ত্রণ আইন-১৯৯১ রয়েছে। অথচ সেটি নিয়ে নেই কোনো প্রচার। ভাড়াটিয়া বা বাড়িওয়ালা কারও মধ্যেই নেই কোনো সচেতনতা। স্বাভাবিকভাবেই এর প্রয়োগও শূন্য।

সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এবার রাজধানীর এলাকাভেদে এক হাজার থেকে তিন হাজার টাকা পর্যন্ত বাসাভাড়া বাড়িয়েছেন বাসার মালিকরা। জানুয়ারি থেকেই পরিশোধ করতে হবে বাড়তি ভাড়া। এরসঙ্গে প্রতি বছরই ক্রমবর্ধমান গ্যাস-বিদ্যুৎ বিল তো আছেই। এ নিয়ে মালিক-ভাড়াটিয়ার মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে। তবে কোথাও সমস্যা সমাধানের কোনো পথ দেখা যায়নি।

মালিকদের অভিযোগ, ব্যয় বাড়ছে তাদের। এতে বাধ্য হচ্ছেন ভাড়া বাড়ায়। ভাড়াটিয়া পরিষদ বলছে, দেশের মধ্যে মূল্যস্ফীতি বেড়ে যাওয়ায় ‘মানবিকতার’ পরিচয় দেওয়া উচিত বাসার মালিকদের। তাদের আরও মানবিক হওয়ার পরামর্শ পরিষদের।

সংস্কার করার অজুহাত দেখিয়ে এক হাজার টাকা বৃদ্ধি করেছিলেন। বছর ঘুরতেই আবারও দেড় হাজার টাকা ভাড়া বৃদ্ধির নোটিশ দিয়েছেন। অন্যথায় বাসা ছেড়ে দিতে বলেছেন। বাচ্চাদের স্কুল বাসার কাছে। দূরে বাসা নিলে তাদের জন্য নতুন স্কুলে ভর্তিতে আবারও খরচ করতে হবে

ইলিয়াস হোসেন দীর্ঘ পাঁচ বছর ধরে বসবাস করছেন গুলবাগ এলাকায়। দুই রুমের একটি ফ্ল্যাটে পরিবার নিয়ে থাকেন। তিনি কাজ করেন একটি আর্থিক প্রতিষ্ঠানে। ইউটিলিটি খরচসহ তার বাসাভাড়া দিতে হয় ১৬ হাজার টাকা। নতুন মাস (জানুয়ারি) থেকে ভাড়া আরও দেড় হাজার টাকা বাড়িয়েছেন বাসার মালিক।

jagonews24

ইলিয়াস হোসেন জাগো নিউজকে বলেন, গত বছরের শুরুতে মালিক বাসার কিছু সংস্কার করার অজুহাত দেখিয়ে এক হাজার টাকা বৃদ্ধি করেছিলেন। বছর ঘুরতেই আবারও দেড় হাজার টাকা ভাড়া বৃদ্ধির নোটিশ দিয়েছেন। অন্যথায় বাসা ছেড়ে দিতে বলেছেন। বাচ্চাদের স্কুল বাসার কাছে। দূরে বাসা নিলে তাদের জন্য নতুন স্কুলে ভর্তিতে আবারও খরচ করতে হবে। নিত্যপণ্যের দামও সব নাগালের বাইরে। এখন বাসা ছাড়তেও পারছি না, কষ্টের কথাও কাউকে বলতেও পারছি না।

মগবাজার ব্যাপারীর গলিতে থাকেন মাসুদ রানা। একটি সরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত তিনি। ডাইনিং নেই, কেবল দুই রুমের বাসা তার। গত বছর থেকে এ বাসায় থাকছেন। সাড়ে ১২ হাজার টাকা মাসিক ভাড়া ছিল। এখন নতুন করে আড়াই হাজার বৃদ্ধি করে ১৫ হাজার টাকা করা হয়েছে।

মাসুদ রানা অভিযোগ করে বলেন, বাসার মালিক নতুন করে গ্যাসের লাইন বসিয়েছেন, যেটা কার্ড সিস্টেম। বিদ্যুতের ক্ষেত্রেও কার্ড হচ্ছে। এসব কারণ দেখিয়ে মালিক আড়াই হাজার টাকা ভাড়া বাড়িয়েছেন। যেটাকে অমানবিক বলা যায়। বাচ্চাকে নতুন করে স্কুলে ভর্তি করিয়েছি। এখন বাচ্চাদের স্কুলে দেবো, নাকি নিজে চলবো বুঝতে পারছি না।

jagonews24

বাসাবাড়ির মতোই অবস্থা তৈরি হয়েছে মেসগুলোয়। ভাড়া বাড়ানো হয়েছে সাবলেট বাসারও।

শিক্ষার্থী মৌসুমী ও নাফিজা ইসলাম থাকেন শাহজাহানপুর এলাকায় একটি সাবলেটে। মেসের মতো করেই তারা খাওয়া-দাওয়া করেন। ফ্ল্যাটের মালিক এ বছর ভাড়া বাড়ানোর সঙ্গে নিরাপত্তা বিলও যুক্ত করেছেন।

বাসার মালিক নতুন করে গ্যাসের লাইন বসিয়েছেন, যেটা কার্ড সিস্টেম। বিদ্যুতের ক্ষেত্রেও কার্ড হচ্ছে। এসব কারণ দেখিয়ে মালিক আড়াই হাজার টাকা ভাড়া বাড়িয়েছেন। যেটাকে অমানবিক বলা যায়। বাচ্চাকে নতুন করে স্কুলে ভর্তি করিয়েছি। এখন বাচ্চাদের স্কুলে দেবো, নাকি নিজে চলবো বুঝতে পারছি না

মৌসুমী ও নাফিজা জাগো নিউজকে বলেন, ফ্ল্যাটের মধ্যে সাবলেটে থাকি। একটা পরিবারের সঙ্গে থাকা। কিন্তু হাস্যকর বিষয় হলো, নিরাপত্তা বিল বাবদ অতিরিক্ত ৫০০ টাকা দিতে বলেছেন ফ্ল্যাটের মালিক। এরসঙ্গে আরও ৫০০ টাকা বাড়ানো হয়েছে ভাড়া। এটি অমানবিকতো বটেই, হাস্যকরও।

jagonews24

তবে বাসার মালিকরা বলছেন ভিন্ন কথা। এ বছর নতুন করে গ্যাসের লাইন যুক্ত করা, লাইন সংস্কার, কার্ড মিটার, বিদ্যুতের লাইন ডিজিটাল করার ক্ষেত্রে বাড়তি টাকা খরচ হয়েছে। অনেকেই বাসা সংস্কার করেছেন, এতেও বাড়তি খরচ হয়েছে। এছাড়া দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে তারাও সঙ্কটে আছেন বলে দাবি।

মগবাজার ওয়্যারলেস নয়াটোলায় বাসার মালিক রিপন মাহমুদ। তিনি জাগো নিউজকে বলেন, আমার বাসায় গ্যাসের ডিজিটাল সংযোগবাবদ বড় খরচ হয়েছে। এরসঙ্গে বাসায় রঙের কাজ করেছি। এত খরচ আমি কোথায় পাবো? রিপনের মতে, বাসা সংস্কারে বাড়তি খরচ হলে অবশ্যই ক্রেতাকেও তার কিছুটা বহন করতে হবে।

jagonews24

তবে প্রতি বছর ভাড়া বৃদ্ধি নিয়ে আইনে কী বলা হয়েছে, জানেন কি না? এমন প্রশ্নের জবাবে সাজু নামে একজন বাড়িওয়ালা জাগো নিউজকে বলেন, আইনে যা আছে তার বাস্তবায়ন কি হয়? হয় না। সব কিছুর দাম বাড়লে বাসার ভাড়া কেন বাড়বে না? তাহলে আপনি চলতে পারবেন, আমি কীভাবে চলবো?

আইনে যা আছে তার বাস্তবায়ন কি হয়? হয় না। সব কিছুর দাম বাড়লে বাসার ভাড়া কেন বাড়বে না? তাহলে আপনি চলতে পারবেন, আমি কীভাবে চলবো?

চলতি বছরজুড়েই নিত্যপণ্যের দাম নিয়ে হিমশিম খেতে হয়েছে নগরের অধিবাসীদের। প্রায় প্রতিটি পণ্যের দামই ছিল চড়া। জীবনযাপনে খরচ বেড়ে যাওয়ায় নিম্ন ও মধ্যম আয়ের মানুষের জীবনে নাভিশ্বাস উঠেছে। এসব বিবেচনায় নগরের বাসার মালিকদের নমনীয় হওয়ার দাবি ভাড়াটিয়া পরিষদের।

এ বিষয়ে বাংলাদেশ ভাড়াটিয়া পরিষদের সভাপতি এবং শ্রমিক নেতা বাহারায়ে সুলতান বাহার জাগো নিউজকে বলেন, মনে হয় রাজধানীর বাসার মালিকের অবস্থা খুবই করুণ। ভাড়াতেই সংসার চলে। কম হলে চলতে পারবেন না, তাই প্রতি বছরই বাড়াতে হবে ভাড়া। এ অবস্থা থেকে সরে আসা উচিৎ। এখন দেশের অর্থনীতি কি সেই আগের মতো আছে? এখন মানবিক হওয়া উচিৎ। মানিবকতার পরিচয় দেওয়া উচিৎ। মানুষের হাতে টাকা এলে তখন বাড়ান, তাই বলে প্রতি বছর ভাড়া বাড়াতে হবে এটা অমানবিক।

সর্বশেষ - সারাদেশ