আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বিএনপির নেতাদের উদ্দেশে বলেছেন, যাকে নিয়ে কত রঙ দেখালেন, সেই পিটার হাসও অভিনন্দন জানিয়েছে। এখন কাকে নিয়ে খেলবেন?
বুধবার (১৭ জানুয়ারি) বিকেলে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গে সহযোগী সংগঠনের শীর্ষ নেতাদের যৌথসভায় তিনি এসব কথা বলেন।
ওবায়দুল কাদের বলেন, যাকে নিয়ে আপনারা (বিএনপি) আমাদের কত রঙ দেখালেন, কত জাদু দেখালেন, সেই মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাস সাহেব অভিনন্দন জানিয়েছেন।
‘এখন কাকে নিয়ে খেলবেন? কাকে নিয়ে আর এটা করবেন, ওটা করবেন? এখন স্বপ্ন দেখছেন, কখন বিশাল নিষেধাজ্ঞা আসবে, কখন ভিসা নীতি প্রয়োগ হবে। রোজ কেয়ামত পর্যন্ত অপেক্ষা করুন, ধৈর্য ধরুন।’
ওবায়দুল কাদের বলেন, এটা কি পাঁতানো নির্বাচন ছিল? আপনার কী মনে হয়? বাংলাদেশের এ নির্বাচন মোটামুটি সুষ্ঠু হয়েছে, পৃথিবীর নামিদামি গণতান্ত্রিক দেশগুলো এ কথা বলে প্রশংসা করে কেন? আমাদের আশপাশে কেউ বাকি নেই। পাকিস্তানের হাইকমিশন পর্যন্ত আমাদের প্রধানমন্ত্রীকে অভিনন্দন জানিয়েছেন।
‘সময় আছে পাঁচ বছর। পাঁচ বছরের মধ্যে আর উল্টোপাল্টা বলে কোনো লাভ নেই। অপেক্ষা করতে হবে। পাঁচ বছর পর আবার ১০ ডিসেম্বর, আবার ২৮ অক্টোবরের অপেক্ষা করুন। নির্বাচনের ট্রেন বন্ধ হয়ে গেছে। পাঁচ বছর পর আবার চালু হবে।’
টিআইবির প্রতি ইঙ্গিত করে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘নির্বাচন পাঁতানো ছিল না। নামিদামি দেশ পর্যবেক্ষণ করেছে। নির্বাচনের পর বিভিন্ন দেশ অভিনন্দন জানালো কেন?’
‘প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক নির্বাচন হয়েছে। বিরোধী দল নির্বাচন বয়কট করায় নতুন রণকৌশল নিতে হয়েছে। স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য বড় অংশ। জনগণের অংশগ্রহণে অবাধ, সুষ্ঠু নির্বাচন করতে রণকৌশল নিতে হয়েছে, যার সোনালি ফসল ঘরে তুলেছি। দু’-একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা ছাড়া নির্বাচন শান্তিপূর্ণ হয়েছে। নির্বাচন নিয়ে এখন অনেক কথাই হবে।’
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, বিএনপির আস্ফালন কোথায় গেলো? জনগণকে নিবৃত্ত করার চেষ্টা করেছে। অনেক দেশ পর্যবেক্ষক পাঠিয়েছে। বিএনপি বর্জন করেছে। এছাড়া এ নির্বাচন নিয়ে কোনো কথা বলার নেই। ভালো নির্বাচন হয়েছে, সে প্রশংসা আসছে। কেবল তারা নির্বাচনকে গ্রহণ করতে পারছে না। তারা এখন বলছে, সংসদ অবৈধ।
‘জিয়াউর রহমানের মতো প্রহসনের নির্বাচন, মাগুরার মতো নির্বাচন করলেই কি নির্বাচন বৈধতা পাবে? বিএনপিকে অন্তত আওয়ামী লীগকে নির্বাচন শেখাতে হবে না। দেশে ভালো নির্বাচন করেছেন শেখ হাসিনা। দেশে নির্বাচন কমিশন স্বাধীনভাবে কাজ করেছে, সরকারি দলের প্রার্থীকেও শোকজ করেছে কমিশন। গণতন্ত্রের জন্য উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন শেখ হাসিনা।’
ওবায়দুল কাদের বলেন, সংবিধান নির্ধারিত সময়েই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। সরকার যেদিন গঠিত হয়েছে, তার পেছনের তিন মাসের মধ্যে নির্বাচন হবে, সাংবিধানিক এ বিধানেই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে।
‘বিএনপির মানুষ নেই। তাই, নির্বাচনে আসলে হেরে যাবে। এই চরম হতাশগ্রস্ত শিবিরে পরিণত হয়েছে বিএনপি। যে দলের মধ্যে গণতন্ত্র নেই, সেই দল কীভাবে দেশের মানুষকে গণতন্ত্র দেবে? এই বিএনপি তাদের সাত ধারা বাতিল করেছিল। এই বিএনপি অসুস্থ খালেদা জিয়াকে বাদ দিয়ে দুর্নীতিগ্রস্ত ব্যক্তিকে নেতা বানিয়েছে। দুর্নীতিগ্রস্তকে ব্যক্তিকে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বানাতে বিএনপি তাদের সাত ধারা বাতিল করেছে।’
তিনি বলেন, বিএনপি নিজেদের অফিসে তালা মেরে বলে, সরকার তাদের অফিসে লাগিয়েছে। আবার তাদের অফিসের তালা তারাই ভেঙেছে। তারা অফিসে তালা লাগাতে পারে, আবার ভাঙতেও পারে। সংবিধান ভাঙা বিএনপির অফিসের তালা ভাঙার মতো না। নির্বাচনি ট্রেন বন্ধ হয়ে গেছে। আগামী পাঁচ বছর পর এই ট্রেন চালু হবে।’
ওবায়দুল কাদের বলেন, আওয়ামী লীগকে নির্বাচন শিখাতে হবে না। এ দেশে ভালো নির্বাচনের প্রক্রিয়া শেখ হাসিনা চালু করেছেন। এই নির্বাচনে আমরা দেখলাম, সরকারি দলের কয়েকজনের প্রার্থিতা বাতিল হয়েছে, শোকজ করেছে। এই নির্বাচনের মাধ্যমে নতুন দৃষ্টান্ত শেখ হাসিনা রেখে গেছেন।
যৌথসভায় আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য বেগম মতিয়া চৌধুরী, আব্দুর রাজ্জাক, মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া, মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন, কামরুল ইসলাম, জাহাঙ্গীর কবির নানক, আব্দুর রহমান, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হাছান মাহমুদ, মাহবুব উল আলম হানিফ, আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, দীপু মনি, সাংগঠনিক সম্পাদক বিএম মোজাম্মেল হক, সুজিত রায় নন্দীসহ কেন্দ্রীয় ও সহযোগী সংগঠনের নেতারা উপস্থিত ছিলেন।