বিয়ে, আকিকাসহ বিভিন্ন সামাজিক অনুষ্ঠানে ‘জর্দা’ ছাড়া খাবারের আয়োজন যেন পূর্নতা পায়না। কমলা রঙের ভাতের সঙ্গে নানা পদের মিষ্টি, কিসমিস, মোরব্বা সহযোগে তৈরি লোভনীয় এ পদের যেন জুড়ি মেলা ভার। চট্টগ্রাম, মীরসরাইয়ের প্রতিটি অনুষ্ঠানে খাবারের আয়োজনের শেষপাতের বাড়তি আকর্ষণ এ জর্দাভাত।
কালের বিবর্তনে বিগত ৮-১০ বছর ধরে জর্দার স্থানটি পায়েস দখল করলেও গত কয়েক বছর ধরে আবারও জর্দাভাতেই ভরসা রাখছে আয়োজকেরা। পায়েসের ভিড়ে হারিয়ে যেতে বসা জর্দা এখন আবার সব অনুষ্ঠানে খাবারের তালিকায় যোগ হচ্ছে। অনুষ্ঠানে খাবারের পর জর্দার জন্য মানুষের আগ্রহের কমতি নেই।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বছরের পর বছর মিরসরাই উপজেলার ১৬ ইউনিয়ন দুই পৌরসভার বিভিন্ন বাড়ি ও পাশ্ববর্তী সীতাকুন্ড, ফটিকছড়ি উপজেলায় অনুষ্ঠানে খাবারের তালিকায় রাখা হচ্ছে সুস্বাদু এ পদ। এখন প্রায় সব অনুষ্ঠানে খাবারের তালিকায় এ পদ যেন থাকাই চাই।
উপজেলার ওয়াহেদপুর ইউনিয়নের মধ্যম ওয়াহেদপুর এলাকার নুরুল আফছার বলেন, ‘আমার ৩ মেয়ে ও দুই ছেলের বিয়ের অনুষ্ঠান, নাতি-নাতনিদের আকিকা অনুষ্ঠানে খাবারের তালিকায় জর্দা ছিল। অনেকে আমাকে পায়েসের কথা বললেও আমি জর্দা করেছি। এটা আমাদের ঐতিহ্য। বাপ-দাদার আমল থেকে অনুষ্ঠানে এ ভাত রান্না হয়ে আসছে।’
উপজেলার ইছাখালী ইউনিয়নের সাহেবদীনগর গ্রামের আবুল কালাম বলেন, ‘বিয়ের অনুষ্ঠানে খাবারের শেষে জর্দাভাত অনুষ্ঠানের সৌন্দর্য বৃদ্ধি করে। জর্দাভাত না হলে খাবারের আয়োজন শূন্য মনে হয়। গত কয়েক বছর জর্দার বদলে পায়েসের প্রচলন শুরু হয়। এখন আবার আগের মত জর্দা করা হচ্ছে।’
জানা গেছে, শীতের সময়ে বিয়ের আয়োজন বেশি হয়ে থাকে। এ সময় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকার বিষয়টি মাথায় রেখে অনেকে বিয়েসহ বিভিন্ন সামাজিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করে থাকে। এসব অনুষ্ঠানে পোলাও মাংসের পাশাপাশি রয়েছে ডেজার্ট। ডের্জাটের নাম শুনলেই চোখে ভাসে জর্দাভাত। সব বয়সী মানুষের প্রিয় এই খাবারটি শিশুরা বেশি পছন্দ করে।
মঘাদিয়া ইউনিয়নের দক্ষিণ মঘাদিয়া ঘোনা এলাকার বাসিন্দা আজিজুল হক বলেন, ‘আমরা ছোট বেলায় মা-বাবার সঙ্গে অনুষ্ঠানে ছুটে যেতাম জর্দার লোভে। অন্যান্য আইটেম থাকতো, তবে জর্দার প্রতি খুব দুর্বল ছিলাম। এখন চাইলেও ডায়বেটিসের কারণে খাওয়া হয়না।’
বাবুর্চি আবুল কাশেম জানান, ‘প্রতি মাসে ১০-১২টি বিয়ে, আকিকা, জেয়াফত সহ অনুষ্ঠানের কাজ করে থাকি। বিশেষ করে শীত মৌসুমে বেশি অনুষ্ঠান হয়। প্রায় প্রতিটি অনুষ্ঠানে খাবারের তালিকায় জর্দাভাত থাকে। ’
কবি ও সাহিত্যিক মাহমুদ নজরুল বলেন, ‘জর্দাভাত গ্রাম বাংলার ঐতিহ্য। অনেক ঐতহ্য বিলুপ্ত হলেও এখনো টিকে আছে জর্দাভাতের প্রচলন।’