জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে ইউএনওদের পাঠানো প্রতিবেদন সূত্রে জানা গেছে, গাইবান্ধার সাতটি উপজেলার মধ্যে ভাঙন কবলিত ফুলছড়িতে কোন ভাটা নেই। বাকী ছয়টিতে ১৭২টি ইটভাটা রয়েছে। এর মধ্যে প্রায় ৩৫টি ইটভাটা এ বছর চালু করা হয়নি। বর্তমানে চলমান ১৩৭টি ভাটার মধ্যে ১৬টির পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র অছে। অর্থাৎ জেলায় ১২১টি ভাটা অবৈধভাবে চলছে।
জেলা শহর থেকে প্রায় ৩০ কিলোমিটার দূরে কিশামত সর্বানন্দ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। বিদ্যালয়টি সুন্দরগঞ্জ উপজেলার সর্বানন্দ ইউনিয়নের অন্তর্গত। বিদ্যালয় ঘেঁষে গড়ে উঠেছে কেএনএম ইটভাটা।
২ ফেব্রুয়ারি গিয়ে দেখা যায়, কেএনএম ভাটায় ইট পোড়ানো হচ্ছে। চিমনি থেকে কালো ধোঁয়া বের হচ্ছে। শ্রমিকদের কেউ ইট তৈরি করছেন, কেউ কাঁচা ইট পোড়ানোর স্থানে নিয়ে যাচ্ছেন। বিদ্যালয় মাঠ ঘেঁষে কাঁচা ইট রাখা হয়েছে। পাশে বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের পাঠদান চলছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিদ্যালয়ের এক শিক্ষক বলেন, ‘পাঠদান চলাকালীন যানবাহন চলাচল করায় বালু উড়ে আসে। শ্রেণিকক্ষের বারান্দা, চেয়ার ও বেঞ্চ বালুতে ঢেকে যায়। এমনকি ইট ও মাটি পরিবহনের কারণে বিদ্যালয়ে ঢোকার কাঁচা রাস্তা নষ্ট হয়েছে। প্রতিবাদ করলেই হুমকি দেওয়া হয়।’
সর্বানন্দ গ্রামের কৃষক আবদুর রহিম বলেন, ভাটার কারণে জমির ফসল, গাছপালা নষ্ট হচ্ছে।
তবে ভাটা মালিকদের একজন মোকলেছ মিয়া দাবি করেন, ‘ইটভাটা বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠার আগে ২০০৭ সালে স্থাপন করা হয়। ভাটায় অনেক টাকা লগ্নি করা হয়েছে। এখন কীভাবে সরাবো? পরিবেশের ছাড়পত্র না থাকলেও অন্যান্য কাগজপত্র আছে।’
কিশামত সর্বানন্দ থেকে আধা কিলোমিটার দূরে একই গ্রামে গড়ে উঠেছে এফকেএম ইটভাটা। ভাটা থেকে প্রায় ৩০০ গজ দূরে খাজেমুল ইসলামিয়া দাখিল মাদ্রাসা ও ইমান উদ্দিন জামিউল হাফিজিয়া মাদ্রাসা। ভাটার কারণে পাঠদান ব্যাহত এবং পরিবেশ দূষিত হচ্ছে বলে জানালেন মাদ্রাসা দুটির শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। ভাটার মালিক মহিউল ইসলাম মুঠোফোনে বলেন, ‘পরিবেশ অধিদপ্তরের অনুমতি নেওয়ার জন্য আবেদন জানিয়েছি।’
এদিকে কিশামত সর্বানন্দ থেকে ১৩ কিলোমিটার দূরে একই উপজেলার ধর্মপুর-মজুমদারহাট সড়কের পশ্চিম পাশে এমআরবি ইটভাটা। পূর্বপাশে ধর্মপুর ১ নম্বর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। ভাটার এক দিকে বিদ্যালয়, তিন দিকে আবাদি জমি ও বসতবাড়ি। ভাটায় ইট তৈরি ও পোড়ানো চলছে। চিমনিতে ধোঁয়া উড়ছে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিদ্যালয়ের এক শিক্ষক বলেন, ‘ভাটার কালো ধোঁয়া, বালুর কারণে আমরা নিজেরা সর্দ্দি–কাশিসহ নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছি। পাশাপাশি শিশুদের বেশি ক্ষতি হচ্ছে। লেখাপড়ার পরিবেশ ব্যাহত হচ্ছে।’
ভাটাসংলগ্ন ধর্মপুর গ্রামের সাইদুর রহমান বলেন, ‘ভাটার কারণে আমার বাড়ির গাছে ফল ধরছে না। ঘরের ভেতর বিছানা–আসবাব নষ্ট হচ্ছে।’
তবে ভাটামালিক মাহবুবর রহমান বলেন, ‘পরিবেশ অধিদপ্তর ছাড়পত্র দেয় না। তবে প্রতিবছর সরকারকে ভ্যাট-ট্যাক্স দিয়ে ভাটা চালাচ্ছি।’
গাইবান্ধা জেলা ভাটা মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক ফুল মিয়া বলেন, ‘অবৈধ ভাটার কারণে বৈধ ভাটার মালিকেরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। অবৈধ ভাটার ইট কম দামে বিক্রি করা হয়। সংগঠনের পক্ষ থকে সবাইকে বৈধভাবে ইট পোড়ানোর পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। অবৈধ ভাটাগুলো উচ্ছেদ করা দরকার।’
এসব বিষয়ে রংপুর পরিবেশ অধিদপ্তরের পরিচালক সৈয়দ ফরহাদ হোসেন মুঠোফোনে বলেন, গত একমাসে গাইবান্ধায় জরিমানাসহ দশটি অবৈধ ইটভাটা গুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। অবৈধ ইটভাটা উচ্ছেদে অভিযান অব্যাহত রয়েছে।