মানবতাবিরোধী অপরাধ মামলায় ঝিনাইদহের মো. আব্দুর রশিদসহ (৬৬) চার আসামির বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষের ষষ্ঠ সাক্ষীর সাক্ষ্যগ্রহণ শেষ হয়েছে। মামলায় পরবর্তী সাক্ষ্যগ্রহণের জন্য ২৯ মে দিন ধার্য করেছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল।
মঙ্গলবার (১১ এপ্রিল) ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. শাহিনুর ইসলামের নেতৃত্বে তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল এদিন ধার্য করেন। ট্রাইব্যুনালের অন্য দুই সদস্য হলেন বিচারপতি আবু আহমেদ জমাদার ও বিচারপতি কেএম হাফিজুল আলম।
আদালতে রাষ্ট্রপক্ষের শুনানিতে ছিলেন প্রসিকিউটর রাজিয়া সুলতানা চমন। আসামিদের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী অ্যাডভোকেট গাজী এম এইচ তামিম।
মুক্তিযুদ্ধের সময় আটক, অপহরণ, নির্যাতন ও হত্যার অভিযোগে ঝিনাইদহের হলিধানী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আওয়ামী লীগ নেতা মো. আব্দুর রশিদ মিয়াসহ চারজনের বিরুদ্ধে তদন্ত প্রতিবেদন চূড়ান্ত করেছিল আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থা।
২০১৯ সালের ২৮ নভেম্বর দুপুরে ধানমন্ডিতে তদন্ত সংস্থার কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে প্রতিবেদনটির সারসংক্ষেপ তুলে ধরা হয়। এটি তদন্ত সংস্থার ৭৫তম প্রতিবেদন।
আসামিদের মধ্যে মো. আব্দুর রশিদ মিয়া (৬৬) ও মো. সাহেব আলী মালিথা (৬৮) কারাগারে আছেন। অন্য দুজন পলাতক, যার নাম প্রকাশ করেনি তদন্ত সংস্থা।
তদন্ত সংস্থার আবেদনে গত বছরের ২১ অক্টোবর আসামিদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির পরদিনই রশিদ ও সাহেব আলীকে গ্রেপ্তার করে ঝিনাইদহ পুলিশ।
তখন সংস্থার তৎকালীন প্রধান সমন্বয়ক আব্দুল হান্নান খান আসামিদের রাজনৈতিক পরিচয় তুলে ধরে বলেন, মো. আব্দুর রশিদ মিয়া মুক্তিযুদ্ধের সময় জামায়াতে ইসলামের রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন। স্বাধীনতার পর বাংলাদেশ কমিউনিস্ট পার্টির কৃষক সংগ্রাম সমিতির হলিধানী ইউনিয়নের সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৮৪ সালে এই পার্টির পরোক্ষ সহায়তায় ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য এবং ১৯৮৮ হলিধানী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। ১৯৯৬ সালে এই আসামি আওয়ামী লীগে যোগ দিয়ে হলিধানী ইউনিয়ন সভাপতি হন। এখন পর্যন্ত তিনি এই পদে আছেন। গত ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে আব্দুর রশিদ মিয়া আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন নিয়ে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন।
আর মো. সাহেব আলী মালিথা একাত্তরে জামায়াতে ইসলামের রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকলেও পরে তিনি আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে যুক্ত হন বলে জানান হান্নান খান।
তদন্তের সারসংক্ষেপ তুলে ধরে সানাউল হক বলেন, চার আসামির বিরুদ্ধে ২০১৬ সালের ২৭ জুন তদন্ত শুরু হয়ে শেষ হয় ২০১৯ সালের ২৮ নভেম্বর।
এ মামলায় আসামিদের বিরুদ্ধে হত্যা, গণহত্যাসহ মানবতাবিরোধী বিভিন্ন অভিযোগ রয়েছে বলে জানিয়েছেন ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউশন। তাদের বিরুদ্ধে মুক্তিযুদ্ধের সময় অপহরণ, আটক, নির্যাতন ও হত্যাসহ মানবতাবিরোধী অপরাধের তথ্য প্রমাণ তদন্তে উঠে এসেছে। এসব অপরাধে তাদের বিরুদ্ধে দুটি অভিযোগ আনা হয়েছে।
মুক্তিযুদ্ধের সময় আসামিরা ঝিনাইদহ জেলার সদর ও হালিধানী ইউনিয়নের কোলা গ্রামে এসব অপরাধ সংঘটিত করে বলেন সানাউল হক।
তদন্ত কর্মকর্তা আব্দুর রাজ্জাক খান বলেন, সাক্ষীদের জবানবন্দিসহ মোট ৭৪ পৃষ্ঠার তদন্ত প্রতিবেদনটির তিনটি ভলিউম করা হয়েছে। সোমবার প্রতিবেদনটি প্রসিকিউশনে দাখিল করা হবে।
অভিযোগ-১
১৯৭১ সালের ১৭ জুন মো. আব্দুর রশিদ মিয়ার নেতৃত্বে সহযোগী সাহেব আলী মালিথা ও পলাতক আসামিসহ ১০-১৫ জন রাজাকার কোলা গ্রামে শহীদ আজিবর মণ্ডলদের বাড়ি আক্রমণ করে।
এসময় মুক্তিযোদ্ধা মহির উদ্দিন মণ্ডল ও আসির উদ্দিন মণ্ডলকে না পেয়ে তাদের তিনভাই আজিবর, হবিবর রহমান মণ্ডল ওরফে হাবা মণ্ডল ও আনছার মণ্ডলকে আটক ও মারধর করে।
পরে তাদের পিঠমোড়া করে বেঁধে ঝিনাইদহ শহরের দিকে নিয়ে যাওয়ার পর মাগুরা রোডের ধোপাঘাটা ব্রিজের ওপর গুলি করে হত্যার পর লাশ নবগঙ্গা নদীতে ফেলে দেয় আসামিরা।
অভিযোগ-২
১৯৭১ সালের ২৪ জুন আসামিরা মুক্তিযোদ্ধাদের সহযোগী কোলা গ্রামের নিরীহ, নিরস্ত্র মুলুক চাঁনকে তার বাড়ি থেকে অপহরণ করে নিয়ে যাওয়ার পর তার আর সন্ধান মেলেনি।