বরগুনার বিভিন্ন স্থানে প্রায় তিন কিলোমিটার বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ নদীতে বিলীন হয়ে যাওয়ার ঝুঁকিতে রয়েছে। বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড়ের কারণে পায়রা, বলেশ্বর ও বিষখালী নদীর পাড়ের বাসিন্দারা আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছেন। যদিও আবহাওয়া অধিদপ্তর বলছে, মূলত কক্সবাজারের টেকনাফ, সেন্ট মার্টিন, মহেশখালী ও কুতুবদিয়ায় ঘূর্ণিঝড় মোখার প্রভাব পড়তে পারে।
স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, টেকসই বাঁধের অভাবে উপকূলীয় এলাকায় যেকোনো ঘূর্ণিঝড়-জলোচ্ছ্বাসে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ বেশি হয়। বিভিন্ন সময় ঘূর্ণিঝড়ের আঘাতে বাঁধগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হলেও এসব বাঁধ মেরামত বা টেকসই বাঁধ নির্মাণের ব্যাপারে দৃশ্যমান কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয় না বলে দাবি করেন তাঁরা।
পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) বরগুনা কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, জেলার ২২টি পোল্ডারে ৮০৫ কিলোমিটার বাঁধের মধ্যে বর্তমানে প্রায় ৩ কিলোমিটার বাঁধ নদীতে বিলীনের ঝুঁকিতে রয়েছে। এর মধ্যে আছে বরগুনা সদর উপজেলার (পায়রা ও বিষখালী) ১ দশমিক ২৫ কিলোমিটার, আমতলী উপজেলার (পায়রা) ১২০ মিটার, তালতলী উপজেলার (পায়রা) ৫৪০ মিটার, পাথরঘাটা উপজেলার ৫৮৫ মিটার (বিষখালী ও বলেশ্বর), বামনা উপজেলার ৩৪০ মিটার (বিষখালী) ও বেতাগী উপজেলার ১৯০ মিটার (বিষখালী)।
বরগুনা সদর উপজেলার এম বালিয়াতলী ইউনিয়নের পালের বালিয়াতলী এলাকার বাসিন্দা ছগির শিকদার প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা খুব ঝুঁকির মধ্যে আছি। রাস্তাটা অনেক দূরে ছিল। সেটা ভাঙতে ভাঙতে আমাদের বাড়ির ও মসজিদের পাশে চলে এসেছে। নদীর এই ভাঙনের কারণে আমরা এখন প্রায় নিঃস্ব। যতবার ভাঙে, ততবার আমার নতুন বাড়িঘর নির্মাণ করি। আমাদের দুঃখকষ্টের শেষ নেই। আমরা আতঙ্কের মধ্যে আছি।’
তালতলী উপজেলার সাগরমোহনার বাসিন্দা রানী বেগম (৪৫) বলেন, ‘দ্রুত বাঁধ ঠিক না করলে আর বাঁচব না। এবার আবার যদি বন্যার আসে, আমাদের তো যাওয়ার কোনো জায়গা থাকবে না।’
তালতলী উপজেলার নলবুনিয়া গ্রামের আলমগীর শিকদার বলেন, তাঁদের গ্রামের বেড়িবাঁধ, ফসলি জমি ও ঘরবাড়ি একাধিকবার নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। একাধিকবার অস্থায়ী বাঁধ নির্মাণ করা হলেও কোনো লাভ হয়নি। এ জন্য তিনি স্থায়ী বেড়িবাঁধ নির্মাণের দাবি জানান।
ঘূর্ণিঝড় প্রস্তুতি কর্মসূচির (সিপিপি) বরগুনা সদর উপজেলার টিম লিডার জাকির হোসেন বলেন, যখন কোনো ঘূর্ণিঝড়ের সতর্কসংকেত দেওয়া হয়, তখন সবার টনক নড়ে। উপকূলের নদনদীতে অস্বাভাবিক জোয়ার হলে পানির উচ্চতা ১৫ থেকে ১৮ ফুট বৃদ্ধি পায়। তবে বাঁধের উচ্চতা কমে থাকায় উচ্চ জোয়ারের পানি লোকালয়ে ঢুকে পড়ে। উপকূলের বাসিন্দাদের ঝড়-জলোচ্ছ্বাস থেকে রক্ষার জন্য বাঁধ মেরামতের পাশাপাশি উচ্চতাও বাড়ানো দরকার।
জানতে চাইলে পাউবোর বরগুনা কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. রাকিব প্রথম আলোকে বলেন, জেলায় প্রায় তিন কিলোমিটার বাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত অবস্থায় আছে। তবে বাঁধের ক্ষতিগ্রস্ত অংশে সংস্কারকাজ চলছে।