স্পেনের উপকূলরক্ষী বাহিনী সোমবার জানিয়েছে, তারা ক্যানেরি দ্বীপপুঞ্জের কাছ থেকে একটি নৌকায় সাব-সাহারান আফ্রিকার ৮৬ অভিবাসীকে উদ্ধার করেছে। সালভামেন্টো মারিটিমো কোস্টগার্ড সার্ভিস জানিয়েছে, তারা ছয় নারী এবং ৮০ জন পুরুষসহ একটি নৌকাটি খুঁজে পেয়েছে। তবে উদ্ধার হওয়া লোকজনের বিষয়ে বিস্তারিত কিছু জানানো হয়নি। কয়েকদিন আগেই নিখোঁজ হওয়া তিনটি নৌকার তিন শতাধিক অভিবাসনপ্রত্যাশীর খোঁজে তল্লাশি-অভিযান চালানো হচ্ছিল।
২০০ অভিবাসনপ্রত্যাশীকে বহনকারী একটি নৌকা ক্যানেরি দ্বীপপুঞ্জে নিখোঁজ হয়। এক সপ্তাহের বেশি সময় ধরে ওই নৌকাটি ক্যানেরি দ্বীপপুঞ্জের কাছাকাছি এলাকা থেকে নিখোঁজ ছিল। আফ্রিকার দেশ সেনেগালের অভিবাসনপ্রত্যাশীদের বহনকারী ওই নৌকার সন্ধানে তল্লাশি অভিযান চালান স্পেনের উদ্ধার কর্মীরা।
একই সময়ে আরও দুটি নৌকা নিখোঁজ হয়েছে বলে জানা যায়। ওই দুই নৌকাতে আরও শতাধিক অভিবাসনপ্রত্যাশী ছিলেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। দাতব্য সংস্থা ওয়াকিং বর্ডার জানিয়েছে, সেনেগালের উপকূলীয় শহর কাফোন্তিন থেকে একটি মাছ ধরার নৌকায় করে অভিবাসনপ্রত্যাশীরা যাত্রা শুরু করে। ওই নৌকায় অনেক শিশুও রয়েছে।
এক মুখপাত্র বলেন, একটি উদ্ধারকারী বিমান যখন গ্র্যান ক্যানেরিয়া দ্বীপের প্রায় ৭১ নটিক্যাল মাইল দক্ষিণে একটি নৌকা দেখতে পায়, তখন প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হয়েছিল ২০০ আরোহী নিয়ে নিখোঁজ নৌকা সেটি।
তিনি বলেন, আমরা শতভাগ নিশ্চিত ছিলাম না। তবে আমাদের মনে হয়েছিল সেটা একই নৌকা। তবে কোস্টগার্ড পরবর্তীতে বুঝতে পারে যে উদ্ধারকারী বিমানের ক্রুদের ধারণা সঠিক নয়। তিনি বলেন, আকাশ থেকে কোনও নৌকায় থাকায় লোকজনের সংখ্যা নির্ণয় করা আসলেই কঠিন।
একটি উদ্ধারকারী জাহাজ অভিবাসনপ্রত্যাসীদের উদ্ধার করে গ্র্যান ক্যানেরিয়ার আর্গুইনগুইন বন্দরে নিয়ে যায়। সেখানে রেড ক্রসের কর্মীরা তাদের চিকিৎসা সেবা দিয়েছেন। নিখোঁজ বাকি দুই নৌকার খোঁজেও তল্লাশি চালানো হচ্ছে। ওই দুই নৌকায় প্রায় ১২০ জন অভিবাসনপ্রত্যাশী ছিল। এসব নৌকায় থাকা অভিবাসনপ্রত্যাশীরা সেনেগাল, গাম্বিয়া, গিনি এবং সিয়েরা লিওনের নাগরিক।
এর আগে ভূমধ্যসাগরের গ্রীক উপকূলের কাছে গত জুন মাসের মাঝামাঝি সময়ে অতিরিক্ত যাত্রী নিয়ে একটি ট্রলার ডুবে যায়। ওই ঘটনায় অন্তত ৭৮ জন নিহত হয়েছিল। জাতিসংঘ বলেছে, ওই নৌকার অন্তত ৫০০ যাত্রী এখনো নিখোঁজ রয়েছেন।
আফ্রিকার যেসব পথ দিয়ে অভিবাসনপ্রত্যাশীরা ইউরোপে প্রবেশের চেষ্টা করেন, তার মধ্যে সবচেয়ে বিপজ্জনক নৌপথের অন্যতম এই ক্যানেরি দ্বীপে যাওয়ার চেষ্টা। শুধুমাত্র হালকা মাছ ধরার নৌকায় করে যাত্রা করার কারণেই নয় বরং শক্তিশালী আটলান্টিক স্রোতও সেখানে বিপদ ঘটাতে পারে।
জাতিসংঘের আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থার (আইওএম) তথ্য অনুযায়ী, গত বছর সাগর পাড়ি দিয়ে স্প্যানিশ দ্বীপে পৌঁছানোর চেষ্টা করতে গিয়ে অন্তত ৫৫৯ জন মানুষ নিহত হয়। এর আগে ২০২১ সালে মৃত্যুর সংখ্যা ছিল এক হাজার ১২৬।
স্পেনের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে উদ্ধৃত করে আইওএম জানিয়েছে, ২০২২ সালে অবৈধভাবে ১৫ হাজার ৬৮২ জন অভিবাসনপ্রত্যাশী স্পেনে এসেছে, যা আগের বছরের তুলনায় প্রায় ৩০ শতাংশ কম।