পাকিস্তানজুড়ে হাজারো মানুষ জনপ্রিয় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এক্স (সাবেক টুইটার) ব্যবহার করতে পারছে না। শনিবার থেকে প্ল্যাটফরমটি বন্ধ থাকলেও সরকার এখনো এর পেছনের কারণ জানায়নি। জিও নিউজ মঙ্গলবার এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে।
গণমাধ্যমটি বলেছে, বিশ্বব্যাপী ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যার দিক থেকে শীর্ষ অবস্থানে থেকে গর্ব করলেও পাকিস্তানকে ইন্টারনেটের প্রাপ্যতার সঙ্গে লড়াই করতে হয়।
সমগোথীয় দেশগুলোর তুলনায় তাদের র্যাংকিংও নিচের দিকে। পাশাপাশি কথিত আছে, দেশটির কর্তৃপক্ষ মাঝে মাঝে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে ব্যবহারকারীদের প্রবেশাধিকার ব্যাহত করে।প্রতিবেদন অনুসারে, গত ৮ ফেব্রুয়ারি সাধারণ নির্বাচনের আগে ব্যবহারকারীরা বেশ কয়েকটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের সাইটে প্রবেশ কারতে পারছিল না। তবে তার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ ত্রুটিকে দায়ী করেছে।
অন্যদিকে ভোটের দিন সন্ত্রাস এড়াতে ইন্টারনেট বন্ধ রাখা হয়েছিল বলে জানিয়েছে দেশটির তত্ত্বাবধায়ক সরকার। ভোটের পর এক্সে প্রবেশের ক্ষেত্রে বারবার বাধার সৃষ্টি হয়েছে।এদিকে ইন্টারনেট বন্ধ করা তথ্যের স্বাধীনতা (অনুচ্ছেদ ১৯-এ), বাক স্বাধীনতা (অনুচ্ছেদ ১৯) এবং সংঘবদ্ধতার স্বাধীনতার (অনুচ্ছেদ ১৭) মতো সাংবিধানিকভাবে নিশ্চয়তাযুক্ত অধিকারগুলোর সরাসরি বিরোধিতা করে। ২০১৮ সালের ফেব্রুয়ারির রায়ে ইসলামাবাদ হাইকোর্ট ইন্টারনেট বন্ধকে মৌলিক অধিকার ও সংবিধানবিরুদ্ধ বলে ঘোষণা করেছেন।
জিও টিভি তত্ত্বাবধায়ক তথ্যমন্ত্রী মুর্তজা সোলাঙ্গির সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি হোয়াটসঅ্যাপে প্রতিক্রিয়া জানিয়ে বলেন, ‘দয়া করে তথ্য-প্রযুক্তিমন্ত্রী এবং পিটিএ চেয়ারম্যানের সঙ্গে যোগাযোগ করুন।’ তবে পাকিস্তান টেলিযোগাযোগ অথরিটি (পিটিএ) থেকেও এ বিষয়ে কোনো প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি।
ডিজিটাল অধিকার কর্মী ও সাংবাদিক ফারিহা আজিজ জিও টিভিকে বলেছেন, পিটিএ বা তত্ত্বাবধায়ক সরকারের কোনো আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি ছাড়াই এক্সের ওপর নিষেধাজ্ঞা বহাল রয়েছে।
সব মহলেই বিচ্যুতি রয়েছে উল্লেখ করে তিনি আরো বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী এবং আইটিমন্ত্রী এক্সে পোস্ট করার জন্য ভিপিএন ব্যবহার করছেন।’
ফারিহা আজিজ জানান, পিইসিএ আইনের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে ব্লক করার ক্ষমতা শুধু পিটিএ প্রয়োগ করতে পারে, অন্য কেউ না।
যদিও কেন্দ্রীয় সরকার কোনো মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে এ বিষয়ে কোনো নির্দেশনা জারি করতে পারে না এবং আইনত এ ধরনের নির্দেশ অবশ্যই পিটিএর ওপর বাধ্যতামূলক নয়।নিষেধাজ্ঞা অযৌক্তিক ও বেআইনি উল্লেখ করে এই ডিজিটাল অধিকার কর্মী বলেন, ‘এই পদ্ধতিতে নাগরিকদের একটি প্ল্যাটফরম থেকে বঞ্চিত করা কেবল অসাংবিধানিকই নয়, বরং এটিও বোঝায়, তাঁরা সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন, যাঁরা নির্বাচনী অনিয়ম সম্পর্কে বক্তৃতা ও দেশজুড়ে নাগরিকদের হতাশা ও ক্ষোভের প্রকাশকে প্রতিরোধ করতে চান। কেন এটি ঘটছে তা পরিষ্কার। প্ল্যাটফরমগুলো কেড়ে নেওয়া, যেখানে নাগরিকদের কণ্ঠস্বর শোনা যায়। অবশ্যই (এর) শেষ হওয়া উচিত।’
অন্যদিকে বোলো ভির পরিচালক উসামা খিলজি সরকারের স্বচ্ছতার সম্পূর্ণ অভাবের নিন্দা করে বলেন, ‘কোনো নোটিশ নেই, কোনো ঘোষণা নেই, কোনো নিশ্চিততা নেই কখন ব্লকটি তুলে নেওয়া হবে, যা অনেক অনিশ্চয়তা ও বিভ্রান্তির পরিবেশ তৈরি করছে। কারণ মানুষ সততার সঙ্গে তথ্যে প্রবেশাধিকার পাচ্ছে না, তাৎক্ষণিকভাবে তথ্য পাচ্ছে না।’
এ পদক্ষেপ রাষ্ট্র ও সরকারের খারাপ উদ্দেশ্যেরও ইঙ্গিত দেয় মন্তব্য করে তিনি বলেন, কারণ তারা শুধু নির্বাচনের দিন ইন্টারনেট বন্ধ করেনি, তারা এখন এক্স বন্ধ করে দিয়েছে। কারণ ‘কারচুপির অভিযোগ এবং কারচুপির প্রমাণ টুইটার এবং প্ল্যাটফরমে দেখা যাচ্ছে।’
ডিজিটাল অধিকার কর্মী হারুন বালুচের মতে, মত প্রকাশের স্বাধীনতা, শান্তিপূর্ণ সমাবেশ এবং সব ধরনের বিষয়ে অনলাইন প্রচারণার ক্ষেত্রে এক্স হলো সবচেয়ে কার্যকর প্ল্যাটফরম। তিনি বলেন, ‘পাকিস্তানে নাগরিকদের জন্য এক্স এবং ভিপিএন ব্লক করা একটি উদাহরণ, দেশের বদনাম অর্জনের জন্য এটি যথেষ্ট।’
বালুচ জানান, পাকিস্তানে এক্স ব্যবহারকারীরা সাধারণ জনসাধারণ নয় এবং তাদের সংখ্যা কয়েক লাখ।
লাহোরভিত্তিক গবেষক মোহাম্মদ সাদ বলেছেন, ‘আমি আশা করি এটি পাকিস্তানে নতুন কোনো স্বাভাবিক বিষয় নয়। কারণ আমার মতো লোকেরা খবর পেতে এবং বিশ্বের সঙ্গে সংযুক্ত থাকতে টুইটারের ওপর অনেক বেশি নির্ভর করে। আমরা ভিপিএন দিয়ে এটি ব্যবহার করছি। কিন্তু যেহেতু অধিকাংশ ভিপিএনে অর্থ প্রদান করতে হয়, তাই সীমাহীনভাবে এ উপায়ে টুইটার ব্যবহার করা সবার জন্য সহজ নয়।’