ফরিদপুর শহরে মাঝ দিয়ে বয়ে চলেছে কুমার নদ। এর দুই পাড়ে দুটি বড় বাজারের যাবতীয় বর্জ্য ফেলা হচ্ছে নদে। শহরের বুকে বয়ে চলা পৌরসভার ড্রেনগুলোর নিষ্কাশন মুখ এই নদতে মিশেছে। ফলে যাবতীয় দূষিত পানি ও বর্জ্য এসে পড়ছে নদে। আর রাঘববোয়ালেরা নদীর দুইপাড়ের জমি দখল করে অনেকে পাকা বাড়িঘর, দোকানপাট গড়ে তুলেছে। একবছর আগে কুমার নদ রক্ষা অভিযান শুরুর পরেও এখনো চলছে এ দখল-দূষণ।
‘বিশ্ব পানি দিবস’ উপলক্ষে ফরিদপুরে আয়োজিত আলোচনা সভায় সভাপতির বক্তব্যে এ তথ্য জানান ফরিদপুরের জেলা প্রশাসক কামরুল আহসান তালুকদার।
রোববার (২৪ মার্চ) দুপুরে জেলা প্রশাসন ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের আয়োজনে জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে এ সভা হয়। সভায় টেকসই উন্নয়নকে নিশ্চিত করতে পানি ব্যবহারের ভবিষ্যতের চ্যালেঞ্জ নিয়ে আলোচনা হয়।
আলোচনা সভায় ফরিদপুরের পদ্মা, আড়িয়াল খাঁ, মধুমতি ও কুমার নদের নাব্যতা রক্ষাসহ অবৈধ বালি উত্তোলন, শহরের উপকণ্ঠে সিঅ্যান্ডবি ঘাটের পাশে ধলার মোড় সংলগ্ন পদ্মা নদীর সঙ্গে কুমার নদের উৎসমুখে ভরাট ও নির্মাণের পরে এক বছর ধরে পড়ে থাকা ১৭৬ কোটি টাকা প্রকল্পব্যয়ে নির্মিত মদনখালী সুইসগেটটি অকার্যকর থাকার বিষয়টিও আলোচনায় উঠে আসে।
ফরিদপুর পৌরসভার প্যানেল মেয়র মনিরুল হক মনির বলেন, কমার নদে বর্জ্য না ফেলার জন্য ব্যবসায়ীদের বারবার সতর্ক করা হলেও কাজ হয়নি। রাতে পরিষ্কার করে দেই সকালে আবার ময়লা ফেলে। আর বিকল্প না থাকায় ড্রেনের মুখগুলো নদী থেকে অন্যস্থানে সরানো যায়নি। সমস্যা নিরসনে নদীর পাড়েই ডাস্টবিন স্থাপন করে বর্জ্য অপসারণ করতে বলা হয়।
ফরিদপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী পার্থ প্রতিম সাহা বলেন, টেকসই উন্নয়ন নিশ্চিতে ভূগর্ভস্থ পানির ব্যবহার কমিয়ে ভূউপরিভাগস্থ ব্যবহার বাড়াতে হবে। কারণ সূপেয় পানি প্রাপ্তির উপরে নির্ভর করছে আমাদের পরিবেশ-প্রতিবেশের নিশ্চয়তা। অন্যথায় সংকট বাড়বে।
অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) ইয়াছীন কবির বলেন, ফরিদপুরে শহরের মধ্যে দিয়ে প্রবাহিত নদী ও খাল একটি সম্পদ। এই সম্পদ রক্ষা করতে হবে। এখন ডেল্টা প্ল্যান তৈরি হয়েছে। শহরকেন্দ্রীক এ খাল ও নদীকে বিস্তীর্ণ প্ল্যানের আওতায় এনে কাজ করতে হবে।
জেলা প্রশাসক কামরুল আহসান তালুকদার বলেন, পদ্মা ও মধুমতি থেকে অবৈধভাবে প্রচুর বালু তোলা হয়। যদি তুলতেই হয় তাহলে বালুমহাল ঘোষণা করে ইজারা দিয়ে তোলা হোক। আর শহরের প্রাণ কুমার নদ রক্ষায় রোজার ঈদের পরে মাস্টার প্ল্যান ধরে অবৈধস্থাপনা উচ্ছেদে জোরদার অভিযান শুরু করা হবে। প্রভাবশালী হোক বা যেই হোক কারো ওজরআপত্তি গ্রাহ্য করা হবেনা। রোজার পরে কুমার নদের দুই পাড়ে নদীর জায়গায় যতো স্থাপনা রয়েছে সব ভেঙ্গে দেয়া হবে।