শহীদ উদ্দীন চৌধুরী এ্যানী। সাবেক সংসদ সদস্য। বিএনপির প্রচার সম্পাদক। সাবেক ছাত্রদল সভাপতি।
ঢাকার গণসমাবেশ সমন্বয়ের দায়িত্ব পালন করছেন। ১০ ডিসেম্বর গণসমাবেশ প্রসঙ্গে জাগো নিউজের মুখোমুখি হন তিনি। সরকার এই সমাবেশকে পণ্ড করতে নানা ষড়যন্ত্র করছে বলে অভিযোগ তার।
সাক্ষাৎকার নিয়েছেন সায়েম সাবু
জাগো নিউজ: সময় যত ঘনিয়ে আসছে, ঢাকার সমাবেশ নিয়ে মানুষের মধ্যে আগ্রহ ও আতঙ্ক দুটোই বাড়ছে।
শহীদ উদ্দীন চৌধুরী এ্যানী: এটি গণসমাবেশ। আমরা কোথাও বলিনি এটি মহাসমাবেশ। এর আগে ঢাকার বাইরে বিভিন্ন বিভাগে ৯টি সমাবেশ করা হয়েছে। সবশেষ হচ্ছে ঢাকায়। ঢাকার এই গণসমাবেশ বিশেষ গুরুত্ব বহন করে।
জাগো নিউজ: বিভাগীয় অন্য সমাবেশগুলোর সঙ্গে তুলনা করে গুরুত্ব দিচ্ছেন, নাকি অন্য কোনো বার্তা মিলবে এই সমাবেশ থেকে?
শহীদ উদ্দীন চৌধুরী এ্যানী: অবশ্যই এই সমাবেশ থেকে জাতির উদ্দেশ্যে, দেশবাসীর উদ্দেশ্যে মেসেজ থাকবে। যার ভিত্তিতে পরবর্তীসময়ে করণীয় প্রসঙ্গে দিকনির্দেশে দেওয়া থাকবে।
জাগো নিউজ: বিএনপি নেতাদের কেউ সরকার পতনের কথা বলছেন, কেউ আবার বলছেন ১০ ডিসেম্বরের পর থেকে খালেদা জিয়া বা তারেক রহমানের নির্দেশে দেশ চলবে। এসব কথার অর্থ কী দাঁড়ায়?
শহীদ উদ্দীন চৌধুরী এ্যানী: একটি অবৈধ সরকার দীর্ঘদিন ধরে ক্ষমতায় রয়েছে। দিনের ভোট রাতে ডাকাতি করে এই সরকার দু’বার ক্ষমতায় এসেছে।
আমরা মনে করছি, পরবর্তীসময়ে যদি সুষ্ঠু এবং নিরপেক্ষ ভোট হয় তাহলে আওয়ামী লীগ বিরোধী জোট বা দলই ক্ষমতায় আসবে। সেই দল বা জোটের নেতৃত্ব খালেদা জিয়া বা তারেক রহমানই দেবেন। নেতারা এমন নেতৃত্বের কথাই বলছেন। এমন কথার সঙ্গে রাজনৈতিক বিতর্ক সৃষ্টি করার কোনো কারণ আছে বলে আমি মনে করি না।
এর আগেও আওয়ামী লীগের প্রয়াত নেতা আব্দুল জলিল ৩০ এপ্রিল ট্রামকার্ডের কথা বলেছিলেন। রাজনীতির জায়গা থেকে এমন অনেক কথাই বলা হয়।
জাগো নিউজ: আব্দুল জলিলের ট্রামকার্ড একটি বিশেষ পরিস্থিতিও তৈরি করেছিল…
শহীদ উদ্দীন চৌধুরী এ্যানী: আমাদের নেতা আমানউল্লাহ আমান সাহেব কিন্তু বলেননি যে তিনি বসে যাবেন। তিনি বলেছেন, ১০ ডিসেম্বর খালেদা জিয়া সমাবেশ মঞ্চে আসবেন? তিনি বলেছেন, ভোট সুষ্ঠু হলে বিএনপি সরকার গঠন করবে এবং খালেদা জিয়া নেতৃত্ব দেবেন। সত্যিকারের নির্বাচন হলে তো বিএনপি ক্ষমতায় আসতেই পারে।
জাগো নিউজ: আপনাদের সমাবেশ ঘিরে সরকারের যে অবস্থান, তা কতটুকু চ্যালেঞ্জ মনে করছেন?
শহীদ উদ্দীন চৌধুরী এ্যানী: বিভাগীয় প্রতিটি সমাবেশে সরকার বাধা দিয়েছে। ধর্মঘট, হামলা, মামলা এমন কোনো জুলুম নেই, যা সরকার করেনি। সরকারের সীমাহীন নির্যাতন, বাধা উপেক্ষা করে আমাদের গণসমাবেশ মহাসমাবেশে রূপ নিয়েছে। লাখ লাখ মানুষ অংশ নিয়েছে। ঢাকায়ও মামলা দিচ্ছে। গায়েবি মামলায় গণগ্রেফতার করছে। এখন আবার জায়গা বরাদ্দ নিয়ে হয়রানি করছে।
এটি তো ষড়যন্ত্র ছাড়া কিছুই না। বুঝতেছি না, সরকারের এত ভয় হচ্ছে কেন? কেন এত ষড়যন্ত্র। মোকাবিলা করতেই হবে সরকারকে। ভোট সুষ্ঠু দিতেই হবে। আমরা আলোচনার আহ্বান জানাচ্ছি। আলোচনা করেই সমাধান করতে হবে। দিনের ভোট রাতে করে আপনি সমাধান দিতে পারবেন না। রাজনৈতিক ভাষায় কথা বলতে হবে। হুমকি দিয়ে, গুলি করে আপনি দীর্ঘ সময় ক্ষমতায় থাকতে পারবেন না।
জাগো নিউজ: সরকার আপনাদের সমাবেশকে পাত্তা দিতে চাইছে না। আপনি ভয়ের কথা বলছেন?
শহীদ উদ্দীন চৌধুরী এ্যানী: সরকারের মাথাব্যথা না থাকলে তাহলে কেন মন্ত্রী-এমপিরা বলছেন ব্যারিকেড দেওয়া হবে, রাজধানীজুড়ে অবস্থান নেবে আওয়ামী লীগ। তারা কেন হেফাজতের প্রসঙ্গ তুলে কথা বলছেন? কী কারণে এমন ভয়?
জাগো নিউজ: ভয় আপনারও দেখাচ্ছেন, অন্তত তারা এখন এমনটি মনে করছেন?
শহীদ উদ্দীন চৌধুরী এ্যানী: আমরা কোনো ভয় দেখাচ্ছি না। আমাদের শক্তি এ দেশের জনগণ।
জাগো নিউজ: ১০ লাখ, ২৫ লাখ লোক সমাবেত করার ঘোষণা তো ভয়ের কথাই?
শহীদ উদ্দীন চৌধুরী এ্যানী: আমি কোনো সংখ্যা ধরে কথা বলছি না। আমি বলছি সমাবেশে লাখ লাখ মানুষ সমাবেত হবে। যারা সমাবেশে মানুষ হলে ভয় পায়, তাদের রাজনীতি করার অধিকার নেই।
জাগো নিউজ: সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে অনুমতি দিচ্ছে ডিএমপি। আপনারা করবেন না। কেন?
শহীদ উদ্দীন চৌধুরী এ্যানী: আমরা সম্পূর্ণভাবে অনিরাপদ মনে করছি সোহরাওয়ার্দী উদ্যান। সরকারের বিভিন্ন কথাবার্তা আর পূর্বের অভিজ্ঞতায় আমরা সেখানে নিরাপদ মনে করছি না। এর আগেও আমরা সেখানে সমাবেশ করেছি। ভবিষ্যতেও হয়তো করবো। কিন্তু এই মুহূর্তে আমরা সেখানে কোনো সমাবেশ করবো না।
জাগো নিউজ: এই মুহূর্তে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান কেন অনিরাপদ মনে করছেন?
শহীদ উদ্দীন চৌধুরী এ্যানী: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এখন সন্ত্রাসের অভয়ারণ্য। এখানে কোনো ছাত্ররাজনীতির এখন চর্চা নেই। দ্বিতীয়ত, সরকারের মন্ত্রীরা বলছেন, ১০ ডিসেম্বর কোনো লোক ঢাকায় ঢুকতে দেওয়া হবে না। ব্যারিকেড দেওয়া হবে। গণগ্রেফতার করা হচ্ছে। মামলা দেওয়া হচ্ছে নতুন করে। তাদের ষড়যন্ত্রের সুযোগ নিয়ে তৃতীয় কোনো পক্ষ সুযোগ নেবে, আমরা তা করতে চাই না। আমরা সাংঘর্ষিক কোনো সমাবেশ করতে চাই না।
৮ ও ৯ ডিসেম্বর আওয়ামী লীগের প্রোগ্রাম আছে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে। ১১ তারিখেও অনুষ্ঠান ছিল। সেটা ৬ তারিখে এগিয়ে আনা হলো। এসবের মধ্যেই ষড়যন্ত্র লুকিয়ে আছে। এ কারণেই আমরা মনে করছি এই মুহূর্তে সোহরাওয়ার্দী বিএনপির জন্য সম্পূর্ণ অনিরাপদ।
জাগো নিউজ: রাজনীতির জন্য গুরুত্বপূর্ণ স্থান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজনীতি মোকাবিলা বিএনপিকে করতেই হবে, যদি গুণগত পরিবর্তন চান?
শহীদ উদ্দীন চৌধুরী এ্যানী: একটি স্বাভাবিক রাজনীতি আমরা চাইছি, যেটা আমাদের জন্য অবশ্যই চ্যালেঞ্জ। একটি গণতান্ত্রিক পরিবেশ চাইছি, যেখানে দিনের ভোট রাতে হবে না। এই চাওয়ার মধ্যে তো অরাজনৈতিক কর্মকাণ্ড মোকাবিলা করার কথা নয়। আমরা শান্তিপূর্ণ দাবির জন্য ষড়যন্ত্রের মধ্যে ঢুকতে চাই না। আমরা পার্লামেন্ট ভেঙে দিয়ে নির্বাচনের কথা বলছি। একটি নির্দলীয় নির্বাচনের কথা বলছি। সব রকম আলোচনার জন্য আমরা প্রস্তুত।
জাগো নিউজ: সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের চেয়ে নয়াপল্টনকে কেন নিরাপদ মনে করছেন?
শহীদ উদ্দীন চৌধুরী এ্যানী: আমরা আমাদের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে আরও অনেক কর্মসূচি পালন করেছি। মহাসমাবেশ করেছি। আমরা দায়িত্ব নিয়ে বলেছি যে, যে ধরনের ষড়যন্ত্র আমাদের মোকাবিলা করতে হবে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে, তা এখানে হবে না। ষড়যন্ত্র একেবারেই হবে না, তা বলছি না। তবে মন্দের ভালো নয়াপল্টন।
জাগো নিউজ: ইজতেমার মাঠ বা পূর্বাচলের অনুমতি মিলতে পারে বলে ডিএমপির পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে। কী করবেন?
শহীদ উদ্দীন চৌধুরী এ্যানী: বিএনপি তো ইজতেমার আয়োজন করছে না। ইজতেমার মাঠে আমরা সমাবেশ করবো কেন? ইজতেমা আর রাজনৈতিক সমাবেশ আলাদা বিষয়। সরকার ইজতেমার মাঠ নিয়ে হুজুরদের সঙ্গে আলোচনা করতে পারেন। আওয়ামী লীগ সেখানে করে দেখাক। সমাবেশ নিয়ে আমরা আশাবাদী। সব বাধা উপক্ষো করে আমাদের এই গণসমাবেশকে মহাসমাবেশে রূপ দেবো।